কোট ডিআইভরি বা আইভরি কোস্ট (Côte d’Ivoire) : ইতিহাস ও নামকরণ

ড. মোহাম্মদ আমীন

কোট ডিআইভরি বা আইভরি কোস্ট  (Côte d’Ivoire)

কোট ডি আইভরি ঘানা ও লিবিয়ার মধ্যবর্তী স্থানে ও উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের সীমান্তে অবস্থিত। অতীতে ফরাসি অধিকৃত, বিশ্বের তৃতীয় কফি উৎপাদনকারী বলে পরিচিত পশ্চিম আফ্রিকান দেশ আইভরি কোস্ট। দেশটির স্থানীয় নাম কোট ডি আইভরি। এর পশ্চিমে লাইবেরিয়া ও গিনি, উত্তরে মালি ও বুরকিনা ফাসো, পূর্বে ঘানা এবং দক্ষিণে গিনি উপসাগর।

ফ্রেঞ্চ ভাষার শব্দ কোট ডি আইভরি (Côte d’Ivoire) এবং পর্তুগিজ Costa do Marfim থেকে আইভরি কোস্ট নামের উৎপত্তি। উভয় শব্দের অর্থ অভিন্ন। একসময় আইভরি বাণিজ্যের জন্য ভূখ-টির জগৎজোড়া খ্যাতি ছিল। তাই এর নাম হয়ে যায় আইভরি কোস্ট। এখানে গ্রেইন কোস্ট (Grain Coast), গোল্ড কোস্ট (Gold Coast) ও স্ল্যাভ কোস্ট (Slave Coast) নামে আরও তিনটি অঞ্চল ছিল। তবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও আমদানি-রপ্তানির জন্য আইভরি কোস্ট বিশ্বব্যাপী ব্যাপক পরিচিতি লাভ করায় জনপদটির নাম হয়ে যায় আইভরি কোস্ট বা গজদন্তের উপকূল।

কোট ডি আইভরি বা আইভরি কোস্টের মোট আয়তন ৩,২২,৪৬৩ বর্গকিলোমিটার বা ১,২৪,৫০২ বর্গমাইল। তন্মধ্যে জলীয় ভাগের পরিমাণ ১.৪%। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের হিসাবমতে, আইভরি কোস্টের জনসংখ্যা ২,৩৯,১৯,০০০ এবং প্রতি বর্গকিলোমিটার লোকসংখ্যা ৬৩.৯ জন । আয়তন বিবেচনায় আইভরি কোস্ট পৃথিবীর ৬৯-তম বৃহত্তম দেশ এবং জনসংখ্যা বিবেচনায় ৫৩-তম। কিন্তু জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় পৃথিবীর ১৩৯-তম জনবহুল দেশ। সরকারিভাবে অধিবাসীদের আইভরিয়ান বা আইভইরিয়ান বলা হয়। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের ৭ আগস্ট ফ্রান্স হতে স্বাধীনতা লাভ করে। সরকারি ভাষা ফ্রেঞ্চ। তবে আরও অনেকগুলো আঞ্চলিক ভাষা প্রচলিত আছে। আবিদজান এ দেশের বৃহত্তম শহর। দেশটির ৩৮% মুসলিম, ৩৭% খ্রিস্টান এবং ২৫% স্থানীয়ভাবে প্রচলিত ধর্মসমূহের অনুসারী।

২০১৪ খ্রিস্টাব্দের হিসাবমতে, আইভরি কোস্টের জিডিপি (পিপিপি) ৪৮.০০০ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ১,৯৩৮ ইউএস ডলার। অন্যদিকে, জিডিপি (নমিনাল) ৩২.০০০ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ১,৩০২ ইউএস ডলার। মুদ্রার নাম ফ্রাঙ্ক। রাজধানী ইয়ামুসুক্রো (Yamoussoukro)।

১৩ শতকে ইউরোপীয়রা হাতির দাঁত ও দাস ব্যবসার জন্য এখানে আগমন করে। ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দে দেশটি ফরাসিদের অধিকারে আসে এবং ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অধিকারে রাখে। ফরাসিদের নিয়ন্ত্রণে ‘কোট ডি ভেয়ার’ নামে রাষ্ট্রটির উত্থান ঘটে। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১০ জানুয়ারি আইভরি কোস্ট ফ্রান্সের অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয়। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে এটি ফরাসি পশ্চিম আফ্রিকার অংশে পরিণত হয়। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে আপার ভোল্টার অধিকাংশ ভূখ- আইভরি কোস্টের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি পুনর্গঠিত আপার ভোল্টাকে ওই অংশটুকু ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ওই দেশটি এখন বুরকিনা ফাসো। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে ৪ ডিসেম্বর আইভরি কোস্ট ফরাসি সম্প্রদায়ের অধীনে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের ৭ আগস্ট দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে। আইভরি কোস্ট যতদিন ফ্রান্সের অধীনে ছিল, ততদিন এর নাম ছিল কোতে ডি আইভোরে। ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে দেশটি কাট ডি আইভরি নামে পরিচিত। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর কোট ডি আইভরির বর্তমান পতাকাটি গৃহীত হয়। ইতালি, নাইজার, ভারত ও আয়ারল্যান্ডের পতাকার সঙ্গে কোট ডি আইভরির পতাকার রঙগত কিছু মিল রয়েছে।

কোকো উৎপাদন ও রপ্তানি এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশটি গ্রীষ্মম-লীয় আফ্রিকান রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অন্যতম উন্নত দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। তবে কোকোর মূল্যহ্রাস ও রাজনীতিক অস্থিরতার জন্য ১৯৯৯ ও ২০০০ খ্রিস্টাব্দে দেশটির অর্থনীতিতে একটি বড় রকমের ধাক্কা লাগে। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫ ডিসেম্বর সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে। ২০০০ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর-ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপ্রধান ও সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে বিরোধী দলীয় নেতা অ্যালমনি ওয়াত্তারাকে বহিষ্কার করায় সারা দেশজুড়ে উত্তেজনা ও সহিংসতা দেখা দেয়। একই বছরে ১ অক্টোবর জান্তা নেতা ও রাষ্ট্রপ্রধান রবার্ট গুয়েলকে অপসারণ করে লান্টেন্ট জিবাগবোকে রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত করা হয়। ফলে দশ মাসের সামরিক শাসনের অবসান ঘটে।

দেশটিতে বালুময় সাগর সৈকত ও হ্রদ আছে। সৈকতের পশ্চাতে আছে গভীর বনাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে ‘নিম্ব ম্যাসিফ’ নামে ১৭৫২ মিটার উঁচু একটি পর্বত পর্যটকদের নিকট অনেক আকর্ষণীয়।

পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস, ম্যাঙ্গানিজ, আকরিক লৌহ, কোবাল্ট, লৌহ, বক্সাইট, তামা, বনজসম্পদ, জলশক্তিতে সমৃদ্ধ। আইভরি কোস্টের দাপ্তরিক রাজধানী দুটি। ইয়ামুসুক্রো (Yamoussoukro) প্রশাসনিক ও রাজনীতিক এবং আবিদজান আর্থনীতিক রাজধানী। চকলেট উৎপাদনে ব্যবহৃত, কোকো রপ্তানিতে আইভরি কোস্ট বিশ্বের বৃহত্তম দেশ।

রিপাবলিক অব দ্যা কঙ্গো

কীভাবে হলো দেশের নাম

Language
error: Content is protected !!