ঘোড়া এবং গাধার সংকরকে বলা হয় ‘খচ্চর’। পুরুষ গাধা আর স্ত্রী ঘোড়ার মিলনে সৃষ্ট বাচ্চাকে ইংরেজিতে ‘মিউল (Mule)’ এবং স্ত্রী গাধা আর পুরুষ ঘোড়ার মিলনে সৃষ্ট বাচ্চাকে ‘হিনি (Hinny)’বলা হয়। বাংলায় এদের কোনো নাম নেই। বাংলা ভাষায় ‘খচ্চর’ বলতে ছেলে বা মেয়ে দুটোই হতে পারে।
ঘোড়ার ক্রোমোজম সংখ্যা ৬৪ এবং গাধার ক্রোমোজম সংখ্যা ৬২। এ দুটি সংখ্যা যোগ করলে হয় ১২৬। ১২৬ সংখ্যাকে ২ দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যায় ৬৩। এটিই হচ্ছে খচ্চরের ক্রোমোজম। ক্রোমোজম সংখ্যা বেজোড় বলে খচ্চর প্রজননে অক্ষম।সাধারণত ঘোড়া এবং গাধা একসঙ্গে রাখা হতো, ফলে তাদের যৌনমিলনে সৃষ্টি হয় খচ্চর। অনেক বিখ্যাত লোকের খচ্চর ছিল। হযরত মুহাম্মদ (দ.) এর দুটি খচ্চর ছিল। তাদের নাম ছিল দুলদুল ও আফির।
২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে ‘আইডাহো বিশ্ববিদ্যালয়’-এর গবেষণায় সর্বপ্রথম ক্লোন খচ্চর জন্ম লাভ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম অনুসারেই ওটার নাম রাখা হয় ‘আইডাহো জেম’ বা ‘আইডাহোর রত্ন’। ড. গর্ডন উডস এবং ড. ডার্ক ভ্যান্ডারওয়াল একটা মিউলের শরীরের কোষ একটা মাদি ঘোড়ার ডিম্বাণু হতে জন্ম দেন আইডাহো জেম। এর মা মাদি ঘোড়া এবং বাবা মিউল। সে হিসেবে এটাকে ডাকা হয় মিউল। ৩০৭ বার চেষ্টার পরে জন্ম নিয়েছিলো আইডাহো জেম। এবার ‘খচ্চর’ শব্দের আভিধানিক অর্থ বিশ্লেষণ করা যাক।
বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত বাংলা ‘খচ্চর’ শব্দের অর্থ : ঘোড়া ও গাধার মিলনজাত পশু, অশ্বতর, জারজ সন্তান, গালিবিশেষ এবং বিশেষণে দুষ্ট ও বদমায়েশ লোক।
খচ্চরের মধ্যে ঘোড়া ও গাধা দুইয়েরই অনেক গুণ আছে। যেমন গাধার মতো শান্ত, অনুগত, বিশ্বস্ত এবং ঘোড়ার মতো সাহসী ও শক্তিশালী। তারপরও খচ্চরকে মানুষ গালি হিসেবে ব্যবহার করে। আমি মনে করি, এটি মানুষের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতার প্রমাণ।
পশুতে যেহেতু বিবাহ-শাদির কোনো বিষয় নেই,তাই খচ্চরের উদাহরণ টেনে মানুষকে জারজ হিসেবে গালি দেওয়া মানুষের পাশব চেতনার একটি লজ্জাকর দিক। অন্যদিকে, খচ্চর যেমন শান্ত, তেমন পরিশ্রমী এবং অনুগত। সবচেয়ে বড়ো কথা হচ্ছে, তার মাঝে ঘোড়া ও গাধা উভয়ের ভালো গুণগুলো রয়েছে। তাই দুষ্ট ও বদমায়েশ মানুষকে খচ্চর বলে গালি বানিয়ে মানুষ খচ্চরের প্রতি আসলেই অবিচার করে চলেছে। এই অবিচারে খচ্চরের চেয়েও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও অপমানিত হচ্ছে মানুষ।