খাঁটি গোরুর দুধ’ না কি ‘গরুর খাঁটি দুধ
ড. মোহাম্মদ আমীন
বাক্যে পদক্রম অনুসারে বিশেষণ সাধারণত বিশেষ্যের আগে বসে। যেমন : ভালো মানুষ, লাল ফুল, বড়ো গাভি, গোরুর খাঁটি দুধ, জাপানি সুতোর বাজার প্রভৃতি।
‘‘খাঁটি গোরুর দুধ’’ একটি বহুল প্রচলিত বাক্য। এই বাক্যে বিশেষ্য ‘গোরু’ নয়, ‘গোরুর দুধ’ এবং বিশেষণ হচ্ছে ‘খাঁটি’। তাই বাংলা
ব্যাকরণের নিয়মানুসারে ‘খাঁটি’ শব্দটি ‘গোরুর দুধ’ কথার আগে বসবে।

“খাঁটি গোরুর দুধ” বাক্যটিকে “কী খাঁটি?” প্রশ্ন করলে উত্তর পাওয়া যায় ‘‘গোরুর দুধ”; সংস্কৃতে যাকে বলা হয় গোদুগ্ধ। অতএব “খাঁটি গোরুর দুধ” কথাটি অশুদ্ধ বলা যায় না। তেমনি “বিরাট গোরুছাগলের হাট” বাক্যে বিশেষণ হচ্ছে ‘বিরাট’ এবং বিশেষ্য হচ্ছে ‘গোরুছাগলের হাট’। এ বাক্যকে ‘‘কী বিরাট?” প্রশ্ন করলে উত্তর আসে, “গোরুছাগলের হাট”। সুতরাং এ বাক্যটিকেও অশুদ্ধ বলার কোনো যুক্তি নেই।
অনেকে বলেন , “খাঁটি গোরুর দুধ’’ বাক্যটি শুদ্ধ নয়, শুদ্ধ হচ্ছে ‘‘গোরুর খাঁটি দুধ”। “গরুর খাঁটি দুধ” বাক্যের প্রসঙ্গে ‘কী খাঁটি?’ প্রশ্ন করলে উত্তর আসে ‘দুধ’, কিন্তু কীসের দুধ?এই প্রশ্নের উত্তরটি প্রথমোক্ত বাক্যের উত্তর চেয়ে অনেক বেশি অনির্দিষ্ট।যদিও বাজারে সাধারণত গোরুর দুধই বিক্রি হয়।
অনেকেই “খাঁটি গোরুর দুধ” বাক্যটিকে ভুল মনে করে একমাত্র শুদ্ধ হিসেবে লেখেন “গোরুর খাঁটি দুধ”। “খাঁটি গোরুর দুধ” বাক্যটি অশুদ্ধ হতো, যদি এ বাক্যে “খাঁটি গরু” কথাটি থাকত। এখানে কিন্তু ‘‘খাঁটি গোরু” বলা হয়নি, বলা হচ্ছে “গোরুর দুধ” বা
গোদুধ বা গোদুগ্ধ। “গোরুর দুধ” এবং ‘গোরু’ এক কথা নয়। ‘গোরু’ এবং “গোরুর দুধ” একই জিনিস মনে করলে কেবল “গরুর খাঁটি দুধ” কথাটি শুদ্ধ হতে পারে। যেহেতু ‘গোরু’ ও “গোরুর দুধ” ভিন্ন জিনিস, তাই “খাঁটি গোরুর দুধ” এবং “গোরুর খাঁটি দুধ” উভয় কথাই সিদ্ধ ও শুদ্ধ।

এবার বাংলা ছেড়ে বিশ্বায়নে চলে আসা যাক। ইংরেজিতে লেখা হয়, “Fresh/Pure Milk” অর্থাৎ “খাঁটি দুধ”। লেখা হয় না “Fresh cow milk” বা “Pure cow milk”; ‘milk’ বলতে সাধারণত গোরুর দুধ বোঝায়। তাহলে কি পৃথিবীতে গোরু ছাড়া আর কোনো প্রাণী দুধ দেয় না? দেয়; তবে দুধ বলতে সাধারণভাবে “ গোরুর দুধ” কথাটিই চলে আসে। কারণ বাজারে সাধারণত “গোরুর দুধ”ই বিক্রি হয়। তাই ইংরেজিতে ‘গরুর’ বা ‘গোরুর খাঁটি’ কথাটি লেখার প্রয়োজন হয় না।
সূত্র: বাংলা ভাষার মজা, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবিলিকেশন্স লি.।