গীতাঞ্জলি

ড. মোহাম্মদ আমীন

গীতাঞ্জলি  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কাব্যগ্রন্থ। ব্রাহ্ম-ভাবাপন্ন ১৫৭টি ভক্তিমূলক গীতিকবিতা  নিয়ে রচিত গ্রন্থটির  অধিকাংশ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ নিজে সুরারোপ করেছিলেন। ১৯০৮-০৯ সালে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এই কবিতাগুলি প্রকাশিত হয়।  ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই গীতাঞ্জলি-র কবিতা ও গানগুলো ইংরেজি ভাষায় অনুবাদের কাজ শুরু করেছিলেন। এর ৫৩টি গান সং অফারিংস সংকলনে প্রকাশিত হয়। তবে রবীন্দ্রনাথ নিজে সব কটি কবিতা ও গানের অনুবাদ করেননি। কয়েকটি অনুবাদ করেছিলেন ব্রাদার জেমস। ব্রিটিশ কবি ও অনুবাদক জো উইন্টার বাংলা শিখে পুরো গীতাঞ্জলি  ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করেছেন। ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে রবীন্দ্রনাথের সং অফারিংস (Song Offerings) কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজি কাব্যগ্রন্থটির জন্য রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।গীতাঞ্জলি: সং অফারিংস‎ ( Gitanjali – Song Offerings) ইংরেজি ভাষায় অনূদিত রবীন্দ্রনাথের প্রথম কাব্যসংকলন।

নোবেল পুরস্কার 

রবীন্দ্রনাথ ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের  জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ইংরেজ সাহিত্যিক এবং রয়্যাল সোসাইটির সদস্য স্টার্জ মুর নোবেল পুরস্কারের জন্য রবীন্দ্রনাথকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ফরাসি লেখক এমিল ফগ।  ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই নভেম্বর বুধবার সাহিত্যে নোবেল ঘোষণা করা হয়।  ১৫ই নভেম্বর সন্ধ্যায় তারবার্তার মাধ্যমে ভারতে অবস্থিত রবীন্দ্রনাথের কাছে খবর আসে যে তাঁকে র সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। 

২০১০ খ্রিষ্টাব্দে গীতাঞ্জলি প্রকাশের শতবর্ষ-পুর্তি উপলক্ষ্যে কলকাতা মেট্রোর নাকতলা স্টেশনটির নামকরণ করা হয় “গীতাঞ্জলি মেট্রো স্টেশন”।

প্রকাশনা

১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে ইন্ডিয়া সোসাইটি গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশ করে। এই সংস্করণের মুদ্রণ সংখ্যা ছিল ৭৫০। মূল্য সাড়ে চার শিলিং এবং আমেরিকায় মূল্য ছিল সোয়া এক ডলার। এতে কবি ইয়েটস-এর ভূমিকা এবং রটেনস্টেইন অঙ্কিত কবির একটি পেন্সিল স্কেচ প্রতিকৃতি ছিল। পরে ম্যাকমিলান কোম্পানি এই গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণ একযোগে লন্ডন ও নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশ করে। মূল্য কমিয়ে রাখা হয় ইংল্যান্ডে সাড়ে চার শিলিং এবং আমেরিকায় সোয়া এক ডলার। উল্লেখ্য যে ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাকমিলান কোম্পানি প্রকাশিত সংস্করণটিকে প্রামাণ্য ধরা হয়। 

গীতাঞ্জলি সমালোচনা

গীতাঞ্জলি রবীন্দ্রনাথের লেখা  সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্য সংকলন। ব্রাহ্ম-ভাবাপন্ন ১৫৭টি ভক্তিমূলক গীতিকবিতা  নিয়ে রচিত গ্রন্থটির  অধিকাংশ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ নিজে সুরারোপ করেছিলেন। কবি মে সিনক্লেয়ার গীতাঞ্জলির কবিতা পড়ে অভিভূত হয়ে লিখেছিলেন : “রবীন্দ্রনাথের কবিতায় মানুষের সাধারণ আবেগমথিত নিবেদনের মিলন হয়েছে এমন এক সঙ্গীত ও ছন্দে যা সুইনবার্নসুইনবার্নের চেয়েও পরিশীলীত। এমন এক সঙ্গীত ও ছন্দ যা পশ্চিমী শ্রোতার কাছে অচিন্তনীয়, যাতে আছে শেলীর অপার্থিব চেতনা, অদ্ভুত সূক্ষ্মতা ও তীব্রতা – – -এবং তা এমন সহজ রীতিতে  পরিবেশিত যাতে এই জাদুকরী-আবেশকেও মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে স্বাভাবিক রূপবন্ধ। মিল্টনও না, সে মানুষের হৃদয়ের তুলনায় বড়ো বেশি জাঁকালো ; ওয়ার্ডসওয়ার্থও নয়, তিনি বড়ো সূক্ষ্ম আর অন্তর্লীন …. এমনকি দান্তেও নয় যদিও তিনি বাংলার এই মরমিয়া কবির খুব কাছাকাছি।”

এথেমিয়াম পত্রিকায় লেখা হয়েছিল, “রবীন্দ্রনাথের এ কবিতাসমূহে রয়েছে এমন এক স্নিগ্ধ প্রশান্তি যার শিক্ষা যা  মানুষের অশান্ত চিত্তকে শান্তির নির্ঝর  প্রশান্তিতে বিমুগ্ধ করে রাখতে পারে। অস্থির জীবনে দিতে পারে বিবেচনাবেধের প্রমুগ্ধতা।  জীবনের মৌলিক বিষয়ের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত রবীন্দ্রনাথের এই কবিতগুলো মানবিক মূল্যবোধ, হার্দিক নিত্যতা আর সার্বজনীন জীবনালেখ্যের এক সর্বজনীন তাৎপর্য।জীবনের সব দুঃখ-কষ্ট আর অপ্রাপ্তিকে প্রাপ্তির বরমাল্যে ভূষিত করে অতৃপ্ত হৃদয়কে নিবিড় মমতায় উচ্ছ্বল হাস্যে সুখকর করে তোলার জন্য এই কাব্যগ্রন্থটি হতে পারে যে কারও জন্য একটি পরম প্রাপ্তির কার্যকর মহৌষধ।


মত বনাম মতো : কোথায় কোনটি এবং কেন লিখবেন

শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/১

দৈনন্দিন বিজ্ঞান লিংক

শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/২

শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/৩

শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/৪

কীভাবে হলো দেশের নাম

সাধারণ জ্ঞান সমগ্র/১

সাধারণ জ্ঞান সমগ্র/২

এককথায় প্রকাশ

শব্দের বানানে অভিধানের ভূমিকা

আফসোস নিয়ে আফসোস

লক্ষ বনাম লক্ষ্য : বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন

ব্যাঘ্র শব্দের অর্থ এবং পাণিনির মৃত্যু

যুক্তবর্ণ সরলীকরণ আন্দোলন : হাস্যকর অবতারণা

Language
error: Content is protected !!