গ্যাবন (Gabon): ইতিহাস ও নামকরণ

ড. মোহাম্মদ আমীন

গ্যাবন (The Gambia)

গ্যাবন মধ্য আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত একটি স্বাধীন দেশ। এর উত্তর-পশ্চিমে ইকুয়েটরিয়াল গিনি, উত্তরে ক্যামেরুন, পূর্ব ও দক্ষিণে রিপাবলিক অব কঙ্গো এবং পশ্চিমে গিনি উপসাগর। কম জনঘনত্ব, পেট্রোলিয়ামের প্রাচুর্য ও বিদেশি বিনিয়োগ দেশটাকে সাব-সাহারান অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করেছে। সাব-সাহারান অঞ্চলে এর এইচডিআই ৪র্থ এবং বতসোয়না ও ইকুয়েটরিয়াল গিনির পর জিডিপি (পিপিপি) বিবেচনায় গ্যাবনের স্থান তৃতীয়।

গ্যাবন শব্দের অর্থ গাত্রাবরণ বা আলখাল্লা (Cloak)। শব্দটি এসেছে আরবি কাবা (qaba) শব্দ হতে। আরবি ভাষায় সুচালো গুণ্ঠিত ওভারকোটজাতীয় গাত্রাবরণ বা আলখাল্লা প্রকাশের জন্য কাবা শব্দটি ব্যবহার করা হতো। আরবি ভাষার কাবা শব্দ পর্তুগিজ সংশ্রবে এসে অপভ্রংশে গ্যাবো (Gabao) হয়ে যায়। পর্তুগিজরা কোমো নামের সঙ্গে কাবা নামের সাযুজ্য দেখতে পেয়ে কোমো নামকে গ্যাবো করে দেয়। এ গ্যাবো নাম হতে গ্যাবন নামের উদ্ভব।

গ্যাবনের মোট আয়তন ২,৬৭,৬৬৭ বর্গকিলোমিটার বা ১,০৩,৩৪৭ বর্গমাইল। জলীয় ভাগের পরিমাণ ৩.৭৬%। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের হিসাবমতে, জনসংখ্যা ১,৭২২,৭৯৬ এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যা ৫৭.৪। আয়তন বিবেচনায় এটি পৃথিবীর ৭৬-তম বৃহত্তম দেশ কিন্তু জনসংখ্যা বিবেচনায় ১৫০-তম। আবার জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনা এটি পৃথিবীর ২১৬-তম জনবহুল দেশ। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের ৯ আগস্ট গ্যাবনের পতাকা প্রথম গ্রহণ করা হয়।

২০১৪ খ্রিস্টাব্দের হিসাবমতে, গ্যাবনের মোট জিডিপি (পিপিপি) ৩২.৬৮২ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ১৬৬৬ ইউএস ডলার। অন্যদিকে, জিডিপি (নমিনাল) ২০.৬৬৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ৭৯০ ইউএস ডলার। মুদ্রার নাম ফ্রাঙ্ক। সরকারি ভাষা ফ্রেঞ্চ। দেশটি ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ আগস্ট ফ্রান্স হতে স্বাধীনতা লাভ করে। নাগরিকদের বলা হয় : গ্যাবনিজ (Gabonese/ Gabonaise)। রাজধানী লিবরেব্রিল।

গ্যাবনের ৫৫-৭৫% অধিবাসী খ্রিস্টান। দেশের পুরোটাই পাবর্ত্যময় এবং সবুজ রেনফরেস্ট-সমৃদ্ধ। দেশের সর্বোচ্চ স্থান মাউন্ট ইবুন্দজির (Iboundji) উচ্চতা ১,৫৭৫ মিটার। বিষুব রেখার ডান পাশে অবস্থিত বলে জলবায়ু সাধারণত উষ্ণ ও আর্দ্র। মে ও জুন বৃষ্টি পড়ে। জুন ও আগস্ট শুকনা ও ঠাণ্ডা। দেশের অর্থনীতি বহুলাংশে ম্যাঙ্গানিজ ও কাঠের ওপর অর্থনীতি নির্ভরশীল। পেট্রলিয়াম, স্বর্ণখনন ও রাসায়নিক শিল্পও রয়েছে। কৃষিজ দ্রব্যের মধ্যে, কপি, সুগার, পাম অয়েল, কোকো, গবাদিপশু, মৎস্য প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। রাজধানী লাইভ্রেবাইলকে ফ্রিটাউন বলা হয়। এটি ১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দে মুক্ত দাসেরা প্রতিষ্ঠা করে। আফ্রিকার ৮০% গরিলা (gorilla) গ্যাবনে পাওয়া যায়। এখানে শত মত ডলোমাইট ও লাইমস্টোনের গুহা রয়েছে। তবে এগুলো এখনও খনন করা শুরু হয়নি।

প্রেসিডেন্ট এল হাজ ওমর বঙ্গো অন্দিমবা (El Hadj Omar Bongo Ondimba) ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দ হতে ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত দীর্ঘ ৪৩ বছর রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। এত দীর্ঘদিন রাষ্ট্রপ্রধানগিরি পৃথিবীতে আর কেউ করতে পারেননি। দেশের জিডিপির ৪৬% এবং মোট রপ্তানির ৮১% আসে জ্বালানি তেল হতে। গ্যাবনের রেনফরেস্টে ৭৭৭ প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়। দেশের ৮০-৮৫% রেনফরেস্ট। তন্মধ্যে ১১% ন্যাশনাল পার্ক হিসাবে সংরক্ষিত। এখানে ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, পেট্রোলিয়াম ও টিম্বারের বিশাল মজুদ রয়েছে।

ইথিওপিয়া (Ethiopia) : ইতিহাস ও নামকরণ

সূত্র : কীভাবে হলো দেশের নাম, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।

Language
error: Content is protected !!