কীভাবে হলো দেশের নাম ( উত্তর আমেরিকা)
ড. মোহাম্মদ আমীন
গ্রেনাডা (Grenada)
ফ্রেঞ্চ নাম লা গ্রেনেডা La Grenade) হতে গ্রেনাডা নামের উৎপত্তি। এর স্পেনিশ নাম ছিল গ্রানাডা। এ নামটি এমিরাত ও তাইফা অব গ্রানাডা হতে

উদ্ভুত হয়েছে। দেশটির রাজধানী ঘারনাটা (Gharnāṭah) হতে নামটি গৃহীত হয়েছে। ক্রিস্টোফার কলম্বাস দ্বীপটি খুঁজে পাওয়ার পূর্বে এর নাম গ্রেনাডা ছিল না। এখানে বসবাসরত ক্যারিব ইন্ডিয়ানরা দ্বীপটিকে বলতেন ক্যামেরহোগ (Camerhogue)। ক্যারিবারা আরাওয়াকদেও (Arawak) নিকট হতে দ্বীপটি নিয়েছিলেন।
১৪৯৮ খ্রিষ্টাব্দে দেশটি খুঁজে পাওয়ার পর কলম্বাস এর নাম দিয়েছিলেন কনসেপচিয়ন (Concepcion)। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, কলম্বাস দ্বীপটিতে কখনও নামেননি। শুধু এটার পাশ দিয়ে গিয়েছিলেন। তবে স্পেনিশরা দ্বীপটি কখনও নিয়ন্ত্রণ করেনি। পরবর্তীকালে স্পেনিশ নাবিকরা দেশটির সৌন্দর্যে এতই অভিভূত হয়ে পড়েছিলেন যে, তারা এটাকে ভালবেসে ফেলেছিলেন। যা তাদেরকে নিজেদের দেশের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল। তাই তারা এর নাম পরিবর্তন করে গ্রানাডা রাখেন।
গ্রেনাডার মোট আয়তন ৩৪৮.৫ বর্গকিলোমিটার বা ১৩২.০৮ বর্গমাইল। তন্মধ্যে জলভাগের পরিমাণ ১.৬%। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের অনুমিত হিসাবমতে, এর মোট জনসংখ্যা ১,০৯,৫৯০ এবং ঘনত্ব ৩১৮.৫৮/বর্গকিলোমিটার। আয়তন বিবেচনায় এটি পৃথিবীর ২০৩-তম বৃহত্তম দেশ কিন্তু জনসংখ্যা বিবেচনায় ১৮৫-তম এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় ৪৫-তম। গ্রেনাডার প্রায় সবাই খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী।তন্মধ্যে ৫৩% রোমান ক্যথলিক, ৩৩% প্রোটেস্ট্যান্ট এবং ১৪% অ্যাংলিকান (Anglicans)।
২০১২ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে এর জিডিপি (পিপিপি) ১.৪৬৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং সে হিসাবে মাথাপিছু আয় ১৩.৯০০ ইউএস ডলার। অন্যদিকে, জিডিপি (নমিনাল) ৭৯০ মিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ৭৩০০ ইউএস ডলার। দেশটির মুদ্রার নম ইস্ট ক্যারিবিয়ান ডলার এবং রাজধানী

সেন্ট জর্জেস। জনসংখ্যার মধ্যে ৮২% কৃষ্ণাঙ্গ, ১৩% মিশ্র কৃষ্ণ/ইউরোপীয়ান এবং ৫% ইউরোপীয়ান/ পূর্ব-ভারতীয়। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ৭ ফেব্রুয়ারি দেশটি যুক্তরাজ্য হতে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। গ্রেনাডিয়ান বিদ্রোহ হয় ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ মার্চ এবং ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ডিসেম্বর সংবিধান পুনরুদ্ধার হয়। গ্রেনাডায় ৬টি প্যারিশ (parish) রয়েছে। সবচেয়ে বড়টি হচ্ছে সেন্ট জর্জ। অন্যগুলো সেন্ট ডেভিড, সেন্ট এন্ড্রু, সেন্ট প্যাট্রিক, সেন্ট মার্ক ও সেন্ট জন।
১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দের ২০ জুন ফ্রান্সের লোকজন এখানে আগমন করেন এবং ক্যারিবদের কাছ থেকে এর দখল নেওয়ার জন্য রক্তাক্ত যুদ্ধ শুরু করে। যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর ফ্রান্স-বাহিনি আদিবাসী ক্যারিবদেরকে সোজা খাড়া সাগরের দিকে তাড়িয়ে নিতে শুরু করে। অনোন্যপায় ক্যারিবরা আর কোনো উপায় না পেয়ে সাগরে ঝাপিয়ে পড়তে শুরু করে। যেখান থেকে ক্যারিবরা সমুদ্রে ঝাপিয়ে পড়েছিল সেটি লে মর্ন ডেস সাউটেরাস (Le Morne des Sauteurs’) বা ঝাপিয়ে পড়াদের পাহাড় বা জাম্পার হিল নামে পরিচিত। দখল নেওয়ার পর ফ্রেঞ্চরা গ্রানাডা নাম পরিবর্তন করে গ্রেনাডে (Grenade) রাখেন। পরে ব্রিটিশরা দ্বীপটির দখল নেওয়অর পর ফ্রেঞ্চদের দেওয়া নামা পরিবর্তন করে ভূখণ্ডটির নাম রাখেন গ্রেনাডা (Grenada)। ঊনিশ বছর যুদ্ধ করার পর ১৭৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ভার্সাই (Versailles) চুক্তির মাধ্যমে ফ্রান্স পুনরায় ব্রিটিশদের কাছ থেকে দ্বীপটির দখল ফিরে পায়। বর্তমানে এখানে সংসদীয় গণতন্ত্র বিদ্যমান এবং যুক্তরাজ্যের রাণী দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান
টুরিজ্যাম ও ইকোটুরিজ্যম দেশটির অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। গ্রেনাডাকে অনেক সময় মসলার দ্বীপ বলা হয়। জায়ফল, দারুচিনি, লবঙ্গ, আদা, জৈত্রী প্রভৃতিসহ আরও অনেক মসলা দেশটি রপ্তানি করে থাকে। সারাবিশ্বে জায়ফল রপ্তানিতে এটি ইন্দোনেশিয়ার পর দ্বিতীয়। সারা বিশ্বের ২০% জায়ফল এখানে উৎপাদিত হয়।
বার্বাডোস (Barbados ) : ইতিহাস ও নামকরণ
বেলিজ (Belize) : ইতিহাস ও নামকরণ
কানাডা (Canada) : ইতিহাস ও নামকরণ
কোস্টারিকা (Costa Rica) : ইতিহাস ও নামকরণ
কিউবা ( Cuba) : ইতিহাস ও নামকরণ
ডোমিনকা (Dominica) : ইতিহাস ও নামকরণ
ডোমিনিকান রিপাবলিক (Dominican Republic) : ইতিহাস ও নামকরণ
এল স্যালভেডর (El Salvador) : ইতিহাস ও নামকরণ
সূত্র: কীভাবে হলো দেশের নাম, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।
বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক
আফ্রিকা মহাদেশ : ইতিহাস ও নামকরণ লিংক