Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল – Dr. Mohammed Amin

ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল

  ড. মোহাম্মদ আমীন

“ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল,

কিছু দূর গিয়া মর্দ রওনা হইল।

ছয় মাসের পথ মর্দ ছয় দিনে গেল!

লাখে লাখে সৈন্য মরে কাতারে কাতার,

শুমার করিয়া দেখি পঞ্চাশ হাজার।”

এটি একটি বহুল প্রচলিত কবিতা। মধ্যযুগে লিখিত কবিতাটির বিষয়বস্তুকে অনেক সাংঘর্ষিক মনে করেন। তাদের যুক্তি, নইলে ঘোড়ায় চড়ে মর্দ কীভাবে হেঁটে চলল। কিন্তু নিয়মানুসারে মর্দকে ঘোড়ায় চড়ার পর হেঁটে চলতেই হবে। তারপর কিছুদূর গিয়ে রওয়ানা হতে হবে। নইলে পরীক্ষা না করে বিমান ছাড়ার মতো বোকামি হবে। কোনো পাইলট এমন করবে বলে মনে হয় না।

কবিতায় বর্ণিত মর্দ বা মরদ ফারসি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ পুরুষ, পতি, যুবক, বীর, পুরষোচিত গুণসম্পন্ন, পুরুষজাতীয় প্রভৃতি। তবে প্রাচীন বাংলা কাব্যে শব্দটি মূলত বীর ও পুরুষোচিত গুণসম্পন্ন মানুষ প্রকাশে ব্যবহৃত হতো। এই বীর যে কেবল পুরুষ হবে তা ঠিক না।সুলতানা রাজিয়া বীর ছিলেন, পুরষোচিত গুণসম্পন্ন ছিলেন।তবে অধিকাংশ বীর ও ঘোড়সওয়ার পুরুষ ছিল। তাই মর্দ ও পুরুষ শব্দ অনেকটা সমার্থক হয়ে উঠেছিল। যুদ্ধক্ষেত্রের কাব্যিক বর্ণনায় মর্দ শব্দটি বীর প্রকাশের জন্য ব্যবহার করা হতো। এখানেও সেটি করা হয়েছে। অতএব কবিতায় ব্যবহৃত মর্দ ছিলেন একজন বীর। মেয়ে না কি পুরুষ সে বিষয়টি এখানে বিবেচ্য নয়।

বীরগণ যুদ্ধক্ষেত্রে বা নির্দেশিত স্থানে যাত্রার পূর্বে ঘোড়াশালে গিয়ে প্রথমে নিজের ঘোড়াকে প্রয়োজনীয় সজ্জা বা সমরাস্ত্রে সজ্জিত করে নিত। তারপর ঘোড়ায় চড়ে পরীক্ষা করে নিত, কোনো শারীরিক বা অন্য কোনো অসুবিধা আছে কি না। যদি ঘোড়ার কোনো অসুবিধা না থাকত তাহলে মর্দ, ঘোড়া থেকে নেমে হেঁটেই সেনাপতির পরবর্তী নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করত। সেনাপতির নির্দেশ পাওয়ার পর ঘোড়ায় চড়ে বসত এবং আর একবার মহড়া করে গন্তব্যস্থানের দিকে

রওয়ানা দিত। এভাবে পর্যবেক্ষণ করে রওয়ানা দিলে পথিমধ্যে ঘোড়ার গতির কোনো অসুবিধা হতো না। ফলে ছয় মাসের পথ ছয় দিনে পার হওয়া ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার।

যুদ্ধক্ষেত্রে যখন সৈন্যরা আহত হয়ে পড়ে যায়, তখন দূর হতে মনে হতো মারা গেছে। অধিকন্তু যুদ্ধের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সৈন্যদের মৃত্যু বা আহত হওয়ার সংখ্যাটি যথার্থভাবে জানা সম্ভব ছিল না। তাই বহুলাংশে অনুমানের উপর ভিত্তি করে মৃতদের সংখ্যা ঘোষণা করা হতো। বর্তমানেও এমন দেখা যায়। সেই মধ্যযুগে বিষয়টি ছিল আর অধিক অনুমানভিত্তিক। তাই লাখ লাখ সৈন্য মারা গেছে মনে হলেও পরবর্তীকালে প্রকৃত সংখ্যার কমবেশি হয়ে যেত।

আর একটা বিষয়, কবি বলেছেন “লাখে লাখে সৈন্য মরে কাতারে কাতার/শুমার করিয়া দেখি পঞ্চাশ হাজার।” আপতদৃষ্টে সংখ্যা কমেছে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে সংখ্যা কিন্তু কমেনি। কবির লেখায় কোনো অতিরঞ্জনও ছিল না। যা ঘটেছে কেবল তা-ই লিখেছেন কবি। উভয়পক্ষের যুদ্ধে লাখ লাখ সৈন্য আহত হয়েছিল। এর মধ্যে কিছু মারা গিয়েছিল।আহত ও মৃত্যের সংখ্যা লাখই হবে। শত্রুপক্ষ নিজেদের নিহত-আহত সৈন্যদের নিয়ে গিয়েছিল। তাই আমাদের মর্দ শুমার করে চল্লিশ হাজার মৃতদেহ পেয়েছিল। এই চল্লিশ হাজার মৃতদেহের সঙ্গে শত্রুপক্ষের সমসংখ্যক সৈন্য এবং তার কয়েকগুণ আহত হওয়ার পরিসংখ্যান সমন্বয় করে দিলে কবির বাণী সত্য হয়ে যায়।

এমন বিষয় আরও জানার জন্য প্রয়োজনীয় লিংক:

শুবাচ লিংক

শুবাচ লিংক/২

শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/১

শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/২

বাংলা বানান 

শব্দকল্পদ্রুম/২

শব্দকল্পদ্রুম/৩

শব্দকল্পদ্রুম/৪

শব্দকল্পদ্রুম/৫

শব্দকল্পদ্রুম/৬

শব্দকল্পদ্রুম/৭