চক্ষুদান করা বাগ্ভঙ্গির শাব্দিক অর্থ দৃষ্টিশক্তি দান করা, দিব্যজ্ঞান প্রদান করা, দিব্যজ্ঞান দিয়ে মূর্খ বা জড় বস্তুকেও সচল করা, কিন্তু চক্ষুদান করা কথার আলংকারিক অর্থ চুরি করা। এটি বাক্যে সাধারণত বাগ্ধারা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।তাই অর্থটি আলংকারিক।
চক্ষুহীনকে চক্ষু দিলে সে চলাফেরায় সক্ষম হয়, দিব্যজ্ঞান লাভ করে। ফলে চক্ষুলাভকারী ব্যক্তি বা বস্তু অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারে;
পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.
অন্যের অগোচরেও স্থানান্তর হতে পারে। চুরি করতে হয় দ্রব্যের মালিক বা অন্য কারো অগোচরে। কোনো দ্রব্য যখন চুরি হয়ে যায় তখন ধরে নেওয়া হয়, চোর দ্রব্যটিকে চক্ষুদান করেছে কিংবা দিব্যজ্ঞান প্রদান করে জড় বস্তুকেও অন্যের অগোচরে তার ইচ্ছা দ্বারা চালিত করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে দ্রব্যটি চক্ষু পেয়ে সবার অগোচরে চোরের দখলে চলে এসেছে, বেহাত হয়ে গেছে, হারিয়ে গেছে। সুতরাং চক্ষুদান করা মানে— যে দ্রব্যটা চুরি গেছে বা চুরি হয়েছে তাকে চক্ষুদান করা, দিব্যজ্ঞান প্রদান করা, চোরাই মালের চক্ষুলাভ প্রভৃতি। দ্রব্যটি যেন চক্ষু পেয়ে বা দিব্যজ্ঞান পেয়ে মালিক-সহ সংশ্লিষ্ট সবার অগোচরে চলে এসেছে চোরের কাছে।
আবার চক্ষুদান কথার অর্থ— নজর দেওয়া, দৃষ্টি রাখা। চোর কোনো কিছু চুরি করতে গেলে ওই জিনিস এবং একই সঙ্গে মালিক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি/নজর দিয়ে থাকে। যাতে সবার অগোচরে জিনিসটি চুরি করতে পারে। এভাবে চক্ষু দিয়ে সতর্ক দৃষ্টি রেখে চুরি করতে হয় বলে চক্ষুদান করা বাগ্ভঙ্গির আলংকারিক অর্থ হয়েছে চুরি করা।
ঠাঁই: অভিধানে ঠাঁই শব্দের দুটি পৃথক ভুক্তি দেখা যায়। সংস্কৃত স্থান থেকে উদ্ভূত ঠাঁই অর্থ (বিশেষ্যে) স্থান, আশ্রয় ( ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই ছোটো সে তরি, আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।রবীন্দ্রনাথ ); আহারে বসার জায়গা (ঠাঁইয়ে ঠায় বসে খাচ্ছেন দিদা।); থই (এত গভীর জল ঠাঁই পায় না কেউ।) এবং (বিশেষণে) নিকট (আমার ঠাঁইয়ে ঠায় দাড়িয়ে সে, আয় ছুটে আয় যাবি তোরা কে।)
২. বাক্যে অব্যয় হিসেবে ব্যবহৃত ধ্বন্যাত্মক ঠাঁই অর্থ হঠাৎ প্রবল আঘাতের অনুকার শব্দ (সে ঠাঁই করে শিশুটির গালে চড় মেরে দিল।)
ঠায়: সংস্কৃত স্থির হতে উদ্ভূত ঠায় অর্থ (ক্রিয়াবিশেষণে ) স্থির হয়ে (ঠায় দাঁড়িয়ে); কর্মহীন হয়ে, একটানা (ঠায় কতক্ষণ অপেক্ষা করবে?), কাছে, নিকটে (রাস্তার পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে সে)।
সূত্র: নিমোনিক প্রমিত বাংলা বানান অভিধান, ড. মোহাম্মদ আমীন।