চটিকার হুমায়ূন আহমেদ মন্তব্য ও গালাগালি

শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ) গোষ্ঠীর জানালয় শুবাচি রাশিদা আকতার মিশু ‘চটিকার হুমায়ূন আহমেদ’ নামের একটি যযাতি (post) দিয়েছেন। যযাতি নিয়ে শুবাচির মধ্যে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা হয়। এই যযাতি এবং আলোচনা-সমামলোচনা নিয়ে আলোচ্য প্রবন্ধটি সাজানো হয়েছে। প্রথমে দেখে নিই কী বলেছেন রাশিদা আকতার মিশু:

হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের বাংলা সাহিত্যের একজন বই ব্যবসায়ী। অর্থ ও সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য অতি সাধারণ এবং সাহিত্যদর্শন বিবর্জিত সস্তামানের লেখা লিখে কিছু সস্তা পাঠক সৃষ্টি করে বাংলাদেশের অনেক পাঠকের পাঠস্তরকে ধাক্কা দিয়ে চটির স্তরে নামিয়ে দিয়েছেন। সেই ধাক্কায় আহত বাংলাদেশের অনেক পাঠক এখনো চটিতে মগ্ন। অনেকে বলেন, এই প্রজন্মকে হুমায়ূন আহমেদ বই পড়ার অভ্যাস গড়ে দিয়েছেন।তিনি বরং চটি পড়ার অভ্যাস গড়ে দিয়েছেন। আমার প্রশ্ন, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, মীর মশাররফ হোসেন, আকবর হোসেন, নজিবর রহমান প্রমুখদের বইগুলা কি শুধু পোকায় কেটেছে?

আহমদ ছফা হুমায়ূন আহমেদের লেখার চটিপ্রিয়তা নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, “তুমি পাইলটের জন্য বই লিখলে বশি চলবে, না কি রিকশাওয়ালার জন্য লিখলে? অবশ্য রিকশাওয়ালার জন্য লেখা বই বেশি চলবে। তাই বলে কি পাইলটের চেয়ে রিকশাওয়ালা অধিক গুরুত্ববহ ও দামি?” হুমায়ুন আজাদের ভাষায়, “হুমায়ূন আহমেদ ঔপন্যাসিক নন, অপন্যাসিক।”

হুমায়ূন আহমেদই বাংলাদেশের পাঠকদের নিম্নমান এবং চিন্তার অনগ্রসরতার জন্য বহুলাংশে দায়ী। পশ্চাৎপদতায় ভরপুর তার প্রতিটি লেখা পাঠকদের গাঁজার নেশার মতো সাময়িক আনন্দ দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু উন্নত চেতনার বিকাশকে নির্জীব করে দিয়েছে সমূলে। প্রতারণামূলকভাবে মিছিল সাজিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জনের শঠপ্রবক্তাও হিসেবেও তিনি বহুল পরিচিত। তিনি অতি সস্তামানের লেখা দিয়ে বাংলাদেশের পাঠকদের একটি অংশকে চটিমনস্ক করে দিয়েছে। অনেকের মতে, হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের একজন প্রসিদ্ধ চটিকার। আমার এ লেখা যত কম জন সমর্থন করবেন, পোস্টের বিশ্বাসযোগ্যতা তত দৃঢ় হবে। কেননা, এটি জনপ্রিয়তার পোস্ট নয়, মননশীলতার পোস্ট।মননশীলতায় জনপ্রিয়তা কম থাকে। আর যারা চটিপাঠক তাদের মন্তব্যে চটিত্ব ফুটে ওঠবেই।

এ লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর অনেকে তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছেন। তার জবাবে মিশু বলেছেন : ঠিক হুমায়ূনের মতো চটিভাষা। প্রমিত হুমেন নামের একজন লিখেছেন : আহমেদ ছপার ভাষায় বলি, তা আপনি কি বাল লিখেছেন যে, বাংলা সাহিত্যে আপনাকে নিয়ে লাফাবে, বা হুমায়ুন ভুলে যাবে, পোস্ট দাতা চ্যাটের বাল সাহেব। হাসান জাভেদ লিখেছেন, প্রথমে খুব বাজে ভাবে বলি, পোস্ট দাতা একটা খানকির পোলা এটেনশন সিকার। এফ্রুভ যিনি করেছেন তিনিও কাছাকাছি লেভেলের। হুমায়ুন আহমেদ কি এতো সস্তা যে এদের মত অসুস্থ মানসিকতার পন্ডিত লেভেলের বালের বে‌াধগোম্য হয়ে যাবে।যারা হুমায়ূন আহমেদের পক্ষে লিখেছেন, তাদের অধিকাংশের ভাষা ছিল অকথ্য, অশালীন এবং অভদ্র। তাদের অকথ্য ভাষার জবাবে রাশিদা আকতার মিশু লিখেছেন, “সহমত। আমিও সেটা বলছি। হুমায়ূন তোমাদের মতো এমন অশালীন প্রকৃতির পাঠকই সৃষ্টি করে গেছেন।” কেউ কেউ লিখেছেন, হুময়ুন আহমেদ বাঙালিকে পাঠক করে তুলেছেন। তার জবাবে অনেকে লিখেছেন, হুমায়ুন আহমেদের আগে কি বাঙালি বই পড়ত না? হুমায়ুন ভক্তদের বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তারা মিশুকে গালাগালি ছাড়া গভীর কিছু বলতে পারেননি।

শারমিন সুলতানা লিখেছেন, “সাহিত্য “হলি স্ক্রিপচার” নয় ভাবার কোন কারণও নেই।আর সমাজ পাল্টানোর দায়িত্ব সাহিত্যের উপর দেয়ার মানে হয় না। সব লেখকের লেখার বিষয়বস্তু, ধরন আলাদা হবে এটাই স্বাভাবিক।আর হুমায়ূন আহমেদ আগেকার সব সাহিত্যিক বলয় থেকে আলাদাভাবে একটা নিজস্ব স্টাইল তৈরি করতে পেরেছিলেন, এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন এটা তার স্বার্থকতা। আর সবচেয়ে বড় কথা সে একটা প্রজন্ম গড়ে তুলতে পেরেছিলেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য কারো কারো হুমায়ূন বিদ্বেষের কারণ তাঁর ব্যাক্তিগত জীবন (দ্বিতীয় বিবাহ) । আর সত্য কথা হচ্ছে যে যাই বলুক, হুমায়ূন টিকে আছে এবং থাকবে।”

সালেহ মুহাম্মদ রিয়াদ লিখেছেন, “আপনাদের ‘ চর্চা’ থেকে অত্যন্ত দুঃখ নিয়ে সরে গেছি ; কারণ বলার কোন প্রয়োজন নেই। মিশু হুমায়ূন আহমেদ বিষয়ে কয়েকটি মত প্রকাশ করেছেন। তাঁ মতের সঙ্গে আমাদের মত মিলতে পারে আবার না-ও মিলতে পারে। তাইবলে ভিন্নমত প্রকাশের জন্য তাঁর প্রতি যে ধরনের কদর্য ও অনাকাঙ্ক্ষিত ভাষা প্রয়োগ করা হয়েছে — সে বিষয়ে আমার বলার কিছু নেই। মিশু হুমায়ুন আহমেদকে লুচ্চা, বদমাশ, চোর, ডাকাত ইত্যাদি অসভ্য কোন ভূষণ পরাননি। মিশুর ব্যক্তিগত মতপ্রকাশের অধিকার অস্বীকার করার কোন সুযোগ থাকার প্রশ্নই ওঠে না। যে কোন লেখককে প্রত্যাখ্যান করার অধিকার সকলের আছে। গভীর বেদনার সঙ্গে লক্ষ করছি কোন কোন মন্তব্যকারীর ভাষাভঙ্গি, শব্দচয়ন ইত্যাদি খুব সৌজন্যসুলভ নয়। আমার মনে হয়েছে শুবাচ নামক এ প্রতিষ্ঠানে এগুলির বেশ অভাব রয়েছে। ব্যক্তিগত বিষয় উল্লেখ করা অনুচিত জেনেও বলছি — একদা আমার একটি পোস্ট নিয়ে জনৈক বিদুষী মহিলা অতিশয় নোংরা মন্তব্য করেন এমনকি, কেন আমাকে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হচ্ছে না — তা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। আমি ভীত হয়ে পলায়ন করেছি “

মাহবুব রহমান বলেছেন, ভয়ে আছি! নিজের মতামত পুরো বললে অনেকেরই আক্রমণের স্বীকার হইতে হবে।তবে এটুকু বলতে পারি, আমি হুমায়ূন আহমেদের ৪ বই পড়েছি, যেগুলোর মধ্যে ৩টাই বাজে লাগছে আর একটা মোটামুটি। আমার কাছে অনেকটা সস্তা লেখাই মনে হয়েছে। তবে এমনটাও হতে পারে ওনার ভালো লেখাগুলো আমার পড়া হয় নি। সাব্বির রিফাত লিখেছেন, হুমায়ূন আহমেদের অধিকাংশ বই খুবই নিম্ন মানের এবং বিষয় বস্তুুহীন। হুমায়ূন আহমেদ মানুষের চাহিদা অনুযায়ী সস্তা উপন্যাস লিখেছে এটাও ঠিক। তবে তার বই পড়ার পরে বই পড়ার অভ্যাস তৈরি হয়েছে। হুমায়ূন আহমেদ মূলত বাংলাদেশিদের পড়ার অভ্যাস তৈরি করে দিয়ে গেছেন যেগুলো পরাবাস্তববাদী, জাদুবাস্তববাদী লেখকরা পারেন নি।” শাহীন আকতার লিখেছেন, “লেখক হিসাবে হুমায়ূন কোনদিনই আমার পছন্দের তালিকার শীর্ষে ছিলেন না। তবে এটুকু বুঝতে পারি তিনি নিজেও প্রকৃত লেখক হওয়ার পিছনে নিজের মেধা ব্যয় করেননি। বরং তার লক্ষ্য ছিলো জনপ্রিয়তা অর্জন ও বানিজ্য। এবং সেক্ষেত্রে তিনি আক্ষরিক অর্থেই ১০০% সফল হয়েছিলেন এ কথা নিসন্দেহে বলা চলে। তবে বাংলাদেশের একটা বিরাট অংশকে পাঠক ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে লেখকে পরিনত করার ব্যপারে তার ভুমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু পোস্টকারী কিছুটা হার্ডলাইনে গিয়ে সমালোচনা করলেও তার বক্তব্যও পুরোপুরি ফেলে দেওয়ার মত নয়! হুমায়ুনেরও শ্রেষ্ঠ উপন্যাসের মান নির্ণয় করতে গেলেও দেখা যাবে অনেক বাংলা ভাষার লেখকদের সাধারণ মানের বইয়ের ধারেকাছেও যাবে না। এই পার্থক্য সাধারন পাঠকদের বোঝার ক্ষমতা নেই। বিশেষত যাদের পাঠক যাত্রা শুরু হুমায়ুনের বই দিয়ে। এসব বুঝতে গেলে সাহিত্যের সাথে প্রগাঢ় সম্মন্ধ থাকতে হবে।” 

সুপ্ত মিস্ত্রী নামের একজন লিখেছেন, “শতভাগ একমত।এই প্রথম লুচুটাকে নিয়ে মনের মত একটা লেখা পেলাম!কুকুরের পেটে যেমন ঘি সয় না তেমনি বাঙ্গালীর জন্য রবি,নজরুল,শরৎ ঘি তুল্য যা বাঙ্গালীর পেটে তেমন সয় না।হুমায়ুনের মত পঁচা মড়ক সয়।” আবু সাঈদ বিশ্বাস জামী লিখেছেন, এ লোক (হুমায়ুন আহমেদ হচ্ছে ফাপা কলসি,বাজে বেশিই । বাকি সাহিত্যিকেরা তো বানের জলে ভেসে আসা। যারা বঙ্কিম রবীন্দ্রনাথের কাছে ঘেষার সামর্থ্য রাখে না তারাই একে নিয়ে বেশি ফাল পারে । মজনু মুজিবুর রহমান লিখেছেন, “যেহেতু এই বদ্বীপ এর বাসিন্দারা অস্থির চিত্তের তাই তাদের মেজাজে লিখলে এরকমই হবে হালকা পাতলা অথবা বলা যায় জোয়ার ভাটার মতো আর হুমায়ুন সচেতন ভাবে তাই করেছেন। আপনার লেখা পড়ে ভালো লাগলো এইরকম সমালোচনা দরকার নয়তো আমাদের সমাজ সেই তিমিরেই রয়ে যাবে।” মোমেন মোহাম্মদ সমশুল হুদা লিখেছেন, “সব লেখক সাহিত্যিক একই রকম করে লিখবে কিভাবে আশা করেন?
এমনিতেই মানুষ বৈচিত্রময়, কারও সাথে কারও মিল নেই। লেখকদের লেখা আরও বৈচিত্রময় একজনের সাথে আরেকজনের মিল নেই। প্রত্যেকের আলাদা বৈশিষ্ট আছে নিজস্ব স্বকীয়তা আছে। অনেক পাঠক আছে একটু পড়েই নাম না দেখে বলে দিতে পারবে কার লেখা। হুমায়ুন হুমায়ুনের মত, সুনিল সুনিলের মত। যার যেটা ভাল লাগবে সে সেটার গুণ গাইবে। হুমায়ুন ভাল না লাগলে বাদ দেন। সবার লেখাই যে সমাজ পাল্টাবে, শিক্ষনীয় বিষয় থাকবে এমন কোন কথা নেই, কারও লেখা আনন্দ দিবে হাসাবে, কারও লেখা কাঁদাবে। শুধু লেখালেখিতে না, সিনেমা নাটকও অনেক ধরনের আছে কমেডি ফ্লিম, এক্সেন ফ্লিম, রোমান্টিক ফ্লিম, আর্ট ফ্লিম, সুপারহিরো ফ্লিম ইত্যাদি। আমার সুপারহিরো ভাল লাগেনা বলে মারভেলের চৌদ্ধগোষ্টি উদ্ধার করতে পারিনা।”

জাহিদ হোসাইন লিখেছেন, “ আমি মোটেই একমত হতে পারলাম না। হুমায়ুন আহমদ কি কখনও রবীন্দ্রনাথ নজরুল কিংবা জীবনানন্দ নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছেন, দেখাতে পারবেন? বরং তিনিই অনেক ক্ষেত্রে রবীন্দ্র বিরোধী অন্ধদের রবীন্দ্র সঙ্গীতের প্রতি অনুরক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। হুমায়ুন আহমেদ যতো সহজে রবীন্দ্রনাথের বিশ্বকবি হওয়ার যোগ্যতাকে সবার সামনে তুলে ধরেছেন অন্য কেউ তা পারে নাই। তাঁর লেখা চটি বই কিংবা কোনও সাহিত্যসর তাঁর লেখাতে নেই যদি কেউ বলে তবে তার উত্তর হচ্ছে সে ব্যক্তি সাহিত্য কিংবা জ্ঞানীয় বিষয় সম্পর্কে ধারণা কম রাখে। সাধারণ মানুষের সামাজিক জীবন যাপনে যে সব কুসংস্কার আছে তা তিনিই সব চেয়ে বেশী ইঙ্গিত করেছেন কোনও ধরনের বাজে মন্তব্য কিংবা খোঁচাখুঁচি না করে। একজন মানুষ কতো সহজে প্রচলিত ব্যপারগুলোকে সাহিত্যে দেখিয়েছেন তা শুধু হুমায়ুন বিরোধীদের বুঝানো সম্ভব নয়। আমার মনে হয় হুমায়ুন বিরোধিতা হচ্ছে তাঁর জনপ্রীয়তাকে নিজের কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা। ব্যপারটা অতি সহজ, অর্থাৎ হুমায়ুন বিরোধী যে কেউ খুব সহজেই সমাজে পরিচিতি পেতে পারে এভাবে লিখে। আমি এই লেখাটি না দেখলে তো এতোবড় একটা লেখা দিতাম না। ব্যপারটা সবার কাছে তেমন!”

বাবুই গল্প নামের একজন লিখেছেন, “কথা ঠিক। ১লাখ মানুষ মিথ্যা কে নিয়ে আদর করলেও মিথ্যা মিথ্যাই থেকে যাবে। এ দেশের মানুষ বই পড়ি কম, আর সাহিত্য পড়ার থেকে তো আমরা শত হাত দূরে। এ দেশের লোক রান্নার বই অথবা লাইফে সাকশেস করার ১০০ টিপস, অথবা ভুড়ি কমানোর টিপস আর সোনামনির ১০০০ টি সুন্দর নাম এর বাইরে কিছু পড়ে শান্তি পায় না। খুব বেশি জাজমেন্টাল হয়ে যায়, যেমন সুচিত্রা ভট্টাচার্য এর কাছের মানুষ কে অনেকেই বলেন এটা নাকি পরকিয়ার গল্প । এদেশের পাঠক সব কিছুতেই এতো বেশি পারসোনাল হয়ে যান, এতো কট্টর হয়ে পড়েন যে তাদের কাছে উঁচু মানের সাহিত্য পড়ে বদহজম হয়। সেদিক থেকে হুমায়ুন বহুলাংশে সফল। অন্তত বই মেলায় প্রকাশকদের পকেট তো ভারি হতো।”

রুমী চৌধুরী লিখেছেন, “রবীন্দ্রনাথ,শরৎচন্দ্র, বঙ্কিম এবং আরো অনেক সহ শীর্ষেন্দু,সুনীল,সমরেশ… পার করে যাঁরা এসেছেন তাঁরা স্বভাবতই হুমায়ূন আহমেদে এসে হোঁচট খাবেন! এটাই স্বাভাবিক। তবে হুমায়ূন আহমেদেই যাঁদের শুরু,হুমায়ূন আহমেদই হবেন তাঁদের গুরু- অস্বাভাবিক নয়। হুমায়ূন আহমেদের ভক্ত হয়ে অধিকাংশ মন্তব্যকারী যুক্তি-তথ্য দিয়ে,সাহিত্যের ভাষায় প্রতিবাদ না করে চটি ভাষায়”-প্রতিবাদ করে পক্ষান্তরে পোস্টের যথার্থতার হালেই পানি দিলেন। ৮০/১২০ পাতায় ছাপানো গল্প আর ৩০০/৪০০ পাতার উপন্যাস পড়া এক বিষয় নয়। যতদূর মনে পড়ে পোস্টদাত্রীই প্রথম ও একমাত্র নন।বেশ নামকরা সাহিত্যকও শিরোনামের শব্দটি/অভিধা তাঁদের প্রতিক্রিয়ায় ব্যাক্ত করেছেন এর আগে। য়্যূটিউবে খুঁজলে হয়তো পাবেন.. ওপার বাঙলার সেই মন্তব্য। ধন্যবাদ। পুনশ্চ. আমি হুমায়ূন বিরোধী নই। তবে ওনার লেখার বিষয়বস্তু নিয়ে দ্বিমত পোষণ করি। Deapth of writing -বিষয়ের গভীরতা,সমাজের সমসাময়িক বিষয়বস্তু -এসব খুঁজে পাইনা। কেউ বলতে পারবেন, ওনার কোন কোন লেখায় সমসাময়িক রাজনীতি,সাহিত্য, সামাজিক ত্রুটি বিচ্যুতি এসব বিষয় উঠে এসেছে.. যা হয়তো আমার চোখ এড়িয়ে গেছে? কান্তি কান্তি লিখেছেন, “ পড়তে পড়তে পাঠক, আজ যে বাংলা একাডেমির বই মেলা, সেটি জমাট হবার পেছনে হুমায়ুন আহমেদ, চটি বই পড়তে পড়তে অনেক পাঠক তৈরি হয়ে গেছে- আমাদের পাঠ্যাভ্যাস কিন্তু স্বপন কুমারের চটি বই দিয়েই|”

রাভিম মোহাম্মদ লিখেছেন,  “হুমায়ূন ই যাদের শুরু তাদের চিন্তা বদ্ধ । নতুবা সাহিত্যমান বিবেচনায় হুমায়ূন কারোই প্রিয় লেখক হতে পারে না। যদি হয়, তাহলে সে হয়তো বাংলা সাহিত্যে অজ্ঞ নতুবা হুমায়ূন এর প্রতি অন্ধ আবেগ কাজ করছে। জনপ্রিয়তা দিয়ে সবকিছু যাচাই হয়না। তার তৈরী নিম্মমানের পাঠক শ্রেণী তো রয়েই গেলো, এই লেখার বিরোধিতার জন্য ।” হাবিবুর রহমান লিখেছেন, “ হুমায়ুন আহমেদ কে প্রশ্ন করা হলো – সাহিত্যের কি লিখেছেন ? উত্তর – আমি বাজারের কাটতি জিনিস লিখছি ।সুতরাং তার লেখায় সাহিত্য খুঁজে লাভ নেই ।”

 তোফাজ্জেল হোসেন লিখেছেন, “সহজ ভাষায় যিনি মানুষের মনের কথা সমাজের কথা বলেছেন এমন একজন সাহিত্যিকে মুল্যায়ন করার মেধা আপনি রাখেন না।শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন আহমেদ মুক্তিযুদ্ধকে তার বর্ণনার মাধ্যমে মানুষের অন্তরে ঠাঁই দিয়েছেন। অবিলম্বে জাতির কাছে আপনার ক্ষমা চাওয়া উচিত।” এর জবাবে, সালেহ মাহমুদ রিয়াদ লিখেছেন, “ কেন তিনি (রাশিদা আকতার মিশু) জাতির কাছে ক্ষমা চাইবেন? এমন হুকুম দেওয়ার আপনি কে!!! ব্যক্তিগত রুচি ও শিক্ষা- সংস্কৃতির প্রতি আমাদের আরও যত্ন নেওয়া দরকার। মিশু কোন কবিরা গুনাহ করেননি ( সগিরা গুনাহ হয়েছে কি না, জানি না)। কার কী পরিমাণ মেধা, সেটাই বা আপনি দাড়িপাল্লা দিয়ে মাপতে যাবেন কেন! আপনার প্রতিভায় আমরা অহঙ্কার বোধ করি ; তাইবলে আমার ক্ষুদ্রতা নিয়ে কেন আপনি উপহাস করবেন।”

প্রমিতা দাস লাবণী লিখেছেন, “ অল্প কথায় কী অবলীলায় সত্য কথাগুলো বলে দিলে আপু (রাশিদা আকতার মিশু)। এমন সাহিত্যকে ক্ষতিকর নেশাজাত দ্রব্যের সঙ্গে তুলনা করা হয়। যে নেশা একটি জাতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশকে বৌ্দ্ধিকভাবে অথর্ব করে পুরো জাতিকে স্থবির করে দেয়। হুমায়ূন আহমেদ তেমন কাজই করে গিয়েছেন। অর্থের জন্য এ লোকটি সাহিত্যের মতো মননশীল বিষয়কেও রেহাই দেয়নি। অর্থগৃধ্ন মানুষ বরাবরই সাহিত্যের শত্রু। বাংলাদেশিরা ক্রমান্বয়ে তা টের পেতে শুরু করেছে। কোথায় গিয়ে নেমেছে তাদের যুব সমাজের এক অংশের মেধা! শুধু আনন্দের জন্য যদি পঠন হয়, তাহলে খাদ্য হিসেবে নেশাজাত দ্রব্যগ্রহণ দূষণীয় হবে কেন?” এর জবাবে মোমেন এমডি শামসুল হুদা লিখেছেন, “তাহলে বলতে চান মানুষের সুস্থ বিনোদনের দরকার নেই। শিল্প সাহিত্য মানেই কি গরিবী? কেউ বই লিখে ধনী হলে সমস্যা হবে কেন? মানুষ উনার লেখা পছন্দ করে বলেই টাকা দিয়ে কিনছে, সেটা উনার দোষ হবে কেন? আপনি বলতে চান এমন বই লিখতে হবে যাতে কেউ না পড়ে বা না কেনে, কিনলেই তো টাকা পাবে, টাকা পেলেই সাহিত্য শেষ। এই দেশে বেশিরভাগ মানুষের মনোভাব আপনার সত, তাই এই দেশে কবি সাহিত্যিকরা অভাবে থাকে। আব্দুল জাব্বারের মত শিল্পি চিকিৎসার অভাবে মারা যায় অথচ অন্য দেশে উনার মানের শিল্পির ব্যাক্তিগত বিমান থাকে। শিল্প নিয়ে বাণিজ্য করা যাবেনা, এই ধরনা এখন চলেনা।বাণিজ্য ছাড়া কোন কিছুরই উন্নতি হবে না, না শিল্প না সাহিত্য কিছুই না। সব কিছুতেই টাকা লাগে। হুমায়ুন প্রকাশকদের ধনী করে দিয়েছে বলেই প্রকাশণার উন্নতি হয়েছে, তারা এমন এমন লেখকদের বই ছাপাতে পারছে যাদের বই বিক্রী কম হয়। আরেকটা বল্লেন নেশা? এটা একটু বেশি হয়ে গেছে, হুমায়ুন পাঠকরা এত বেশি মজে নেই হুমায়ুনে, তারা হুমায়ুন পড়তে পড়তে কালজয়ীদের লেখা প্রায় সব পড়ে ফেলেছে, এখনও পড়ছে। তারা এখন হুমায়ুনে নেই ”

পোস্টে হুমায়ুন আহমেদের অনুসারীদের অধিকাংশের ভাষা ছিল জঘন্য এবং তীব্র আপত্তিকর। তবু  রাশিদা আকতার মিশু কোনো প্রতিবাদ করেননি। এসব দেশে শাহিন আকতার লিখেছেন, গতকালের পর এইমাত্র আবার কমেন্টগুলি দেখলাম! আমিও পোস্টকারীর ভাষা নিয়ে কিছুটা মনঃক্ষুণ্ন ছিলাম মনে মনে। কিন্তু আজ হুমায়ুন প্রেমীদের কমেন্টের ভাষা পড়ে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলাম পোস্টকারী কিছুটা হলেও সঠিক। কেউ তার ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করতেই পারে তাই বলে তার উপর ব্যক্তিগত আক্রোশ মিটাতে হবে কেন? কিছু কিছু কমেন্ট দেখে কমেন্টকারীদের রুচি নিয়েও প্রশ্ন হচ্ছে মনে। ডিলিট-সহ প্রায় ৭০০ শুবাচি রাশিদা আকতার মিশুর এই যযাতিতে মন্তব্য করেছেন। পছন্দ করেছেন ৫৯৭ জন  এবং বিদ্যমান মন্তব্য অদ্য ১০/১২/২০১৯ তারিখ পর্যন্ত ৬১৫টি। পরিশেষে রেজাউল করিম শামীম রাশিদা আকতার মিশুর যযাতির মন্তব্যে লিখেছেন, “অনেক দিন পর,আমার মনের কথাগুলো দেখতে পেলাম।ধন্যবাদ ভাই।”
Language
error: Content is protected !!