ড. মোহাম্মদ আমীন
চন্দ্রদ্বীপ: বর্তমান বরিশাল জেলাই ছিল চন্দ্রদ্বীপের মূল ভূখ- ও প্রাণকেন্দ্র। জনপদটি বালেশ্বর ও মেঘনার মধ্যবর্তী স্থানে গড়ে উঠেছিল। চন্দ্রদ্বীপ ছাড়াও বৃহত্তর প্রাচীন বাংলা পুণ্ড্র, বঙ্গ, গৌড়, হরিকেল, সমতট, বরেন্দ্র, রাঢ়, চন্দ্রদ্বীপ, সপ্তগাঁও, কামরূপ, প্রাগজ্যোতিষ, তাম্রলিপ্ত, সূহ্ম, বিক্রমপুর ও বাকেরগঞ্জ প্রভৃতি নামে বিভক্ত ছিল। সপ্তম শতকের গোড়ার দিকে শশাংক গৌড়ের রাজা হয়ে মুর্শিদাবাদ হতে উৎকল (উত্তর উড়িষ্যা) পর্যন্ত সমগ্র এলাকা একিভূত করেন। তারপর হতে বাংলা তিনটি জনপদ নামে পরিচিত হতো। এগুলো হলো-পুন্ড্রবর্ধন, গৌড় ও বঙ্গ। অন্যান্য জনপদগুলো এ তিনটির মধ্যে বিলীন হয়ে যায়। চন্দ্রদ্বীপের বৌদ্ধ দেবী ‘তারা’ গুপ্ত যুগেই প্রসিদ্ধি লাভ করেন। খ্রিষ্টীয় পাঁচ বা ছয় শতকে বৈয়াকরণ চন্দ্রগোমিন চন্দ্রদ্বীপে বাস করার সময় ‘তারাস্তোত্র’ রচনা করেন বলে অনুমিত। শ্রীচন্দ্রের রামপাল তাম্রশাসনে চন্দ্রদ্বীপের উল্লেখ পাওয়া যায়। দক্ষিণ ভারতীয় লেখা এবং আইন-ই-আকবরী গ্রন্থমতে, চন্দ্রদ্বীপ অঞ্চলের অন্য নাম ছিল ‘বঙ্গালদেশ’। আইন-ই-আকবরী গ্রন্থের বাকলা সরকার তথা বর্তমান বরিশাল, পূর্বের বাখরগঞ্জ জেলা এবং চন্দ্রদ্বীপ একই স্থান বলে স্বীকৃত। তেরো শতকের বিশ্বরূপ সেনের মধ্যপাড়া বা সাহিত্য পরিষদ লিপিতে ‘বাঙ্গালবড়া’ এবং ‘চন্দ্রদ্বীপ’ নামের দুটি স্থানের নাম রয়েছে। কথিত হয়, দিনুজমর্দনদেব চন্দ্রশেখর চক্রবর্তী নামীয় একজন ব্রাহ্মণের কৃপায় রাজ্য লাভ করে ওই ব্রাহ্মণের নামেই রাজ্যের নাম রাখেন ‘চন্দ্রদ্বীপ’। রাজা দনুজমর্দনদেব নামাঙ্কিত একটি রৌপ্যমুদ্রা খুলনা জেলার বাসুদেবপাড়া নামক গ্রামে পাওয়া গেছে। মুদ্রাটির একদিকে ‘শ্রী শ্রী দনুজমর্দনদেব’, অপরদিকে ‘শ্রী শ্রী চন্ডীচরণ পরায়ণ সম্বৎ ১৩৩৯’ এবং চারদিকে ‘চন্ডদ্বীপ’ কথাগুলো লেখা রয়েছে।
বাংলার প্রাচীন বাংলা কয়েটি জনপদে বিভক্ত ছিল। জনপদগুলোর নাম ও বর্ণনা নিচে দেওয়া হল। ক্লিক করে জনপদগুলোর সংক্ষিপ্ত, কিন্তু তথ্যবহুল বিবরণ জেনে নিতে পারেন।