চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে

ড. মোহাম্মদ আমীন

চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে

বিভিন্ন মূল্যমানের (১০/২০/৫০/১০০/৫০০/১০০০ ) ব্যাংক নোট বা  টাকায় লেখা থাকে ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে’। তবে ১, ২ ও ৫ টাকা মূল্যমানের মুদ্রা— তা ধাতব বা কাগুজে যাই হোক  কথাটি লেখা থাকে না। কিন্তু কেন লেখা থাকে এবং কেন থাকে না?  বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচলিত সরকারি মুদ্রা তিনটি। যথা: ১, ২ ও ৫ টাকা মূল্যমানের নোট বা কয়েন। বাকিগুলো  সমপরিমাণ সরকারি মুদ্রার বিনিময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ বা মালিকানায় ছাপানো বিভিন্ন মূল্যমানের বিল অব এক্সচেঞ্জ (Bill of Exchange) বা নোট।যা সাধারণত টাকা (বাংলাদেশি মুদ্রা) নামে পরিচিত।
বাংলাদেশ ব্যংক সরকারের চাহিদামতে, সরকারি মুদ্রার সমপরিমাণ নোট ছাপায়। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের ছাপানো নোটগুলি বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে জনগণের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের যে নোটগুলি আমরা ব্যবহার করি সেগুলি মূলত ব্যাংক চেকের মতো। অন্যান্য ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংক চেকের পার্থক্য হলো, বাংলাদেশ ব্যাংকের চেক সবর্জনীন বিনিময় মূল্য হিসেবে সবাই গ্রহণ করে কিংবা করতে বাধ্য। অধিকন্তু এই  চেক সরাসরি বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের ব্যাংক কর্তৃক ইস্যুকৃত।

এর কারণ কী? মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখে। কোনো কারণে যদি ব্যাংকের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে তাহলে ওই ব্যাংক থেকে টাকা তুলে আনে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটতে পারে।সরকারি মুদ্রা অর্থাৎ ১,২,৫ টাকা হলো টাকা বাকি নোটগুলি বিল অব

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

এক্সচেঞ্জ। এজন্য সরকারি নোটে ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে’ কথাটি লেখা থাকে না। কেবল, ব্যাংক নোটে লেখা থাকে।

কেউ বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর আস্থা হারালে তিনি তার কাছে রক্ষিত ব্যাংক-নোটগুলি বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়ে বিনিময় চাইতে পারেন।এরূপ চাহিবামাত্র বাংলাদেশ ব্যাংক এর বাহককে অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সমপরিমাণ ১, ২, ৫ টাকার সরকারি মুদ্রা প্রদান করে দায় থেকে মুক্তি হতে বাধ্য থাকবেন। এটাই হচ্ছে কথাটির অর্থ। এত কয়েন কোত্থেকে পাবে বাংলাদেশ ব্যাংক?
বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে নোট ছাড়ার পূর্বে সমপরিমাণ সরকারি মুদ্রা বা কয়েন (১,২, ৫ টাকার) বা যত টাকার ব্যাংক নোট ইস্যু করা হবে ঠিক তত মূল্যমানের স্বর্ণ বা অন্যান্য আর্থিক সম্পদ বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে সংরক্ষণ করবে। আবার যখন ১,২, ৫ টাকা মার্কেটে ছাড়ে তখন সমপরিমাণ নোট সরকারি তহবিলে জমা দেয়।
অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের কাছ থেকে সরকারি মুদ্রা নিয়ে ওই পরিমাণ ব্যাংক নোট বাজারে ছাড়ে। সুতরাং মার্কেটে যত টাকার নোট আছে ঠিক সে পরিমাণ সরকারি মুদ্রা (১ ২ ৫ টাকার মুদ্রা) বা সমমূল্যের সম্পদ বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত থাকে। তাই সব নোট ব্যাংকে জমা করলেও বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট বাহককে প্রাপ্য সরকারি মুদ্রা বা সমপরিমাণ সম্পদ দিতে পারবে।
সুতরাং, “চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে” কথার অর্থ হলো ব্যাংক নোটের বাহক বিনিময় চাওয়ামাত্র বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট নোটের বাহককে সমপরিমাণ সরকারি মুদ্রা, স্বর্ণ বা আর্থিক সম্পদ দিতে বাধ্য থাকবে।
—————–
শুবাচ-এর ওয়েবসাইট: www.draminbd.com
Language
error: Content is protected !!