Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
চিকা মারা ও চিকা – Dr. Mohammed Amin

চিকা মারা ও চিকা

ড. মোহাম্মদ আমীন

‘চিকা’ একটি দেশি শব্দ। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে ‘চিকা’ শব্দের অর্থ হচ্ছে, ছোটো চোখ ও সুচালো মুখবিশিষ্ট ঘন কোমল লোমাবৃত গাঢ় ধূসরবর্ণের স্তন্যপায়ী গায়ে দুর্গন্ধযুক্ত নিশাচর ইঁদুরজাতীয় প্রাণী, ছুঁচা, ছুঁচো, গন্ধমূষিক প্রভৃতি। চট্টগ্রাম এলাকায়ও  ‘চিয়া’ নামে পরিচিত। ‘চিকা’ শব্দের আর একটি অর্থ- গুণচিহ্ন (x)বা ঢ্যারাচিহ্ন। ‘চিকা’ ও ‘মারা’ শব্দ হতে ‘চিকা মারা’ কথার উদ্ভব। বাক্যে ক্রিয়াবিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত ‘চিকা মারা’ কথাটির আভিধানিক অর্থ দেওয়ালে লিখে বিজ্ঞাপিত করা, ছাপ মারা, ঢ্যারাচিহ্ন দেওয়া প্রভৃতি।

‘দেওয়াল লিখন’ বা দেওয়ালে লিখে বিজ্ঞাপিত করা কথাগুলো এখন ‘চিকা মারা’ কথাটির আড়ালে হারিয়ে গেছে। দেওয়াল লিখন বলিতে এখন ‘চিকা মারা’ বোঝায়। ‘চিকা’ বিশেষ্য হলেও ‘চিকা মারা’ কিন্তু ক্রিয়াবিশেষণ। চিকার বয়স যতই হোক, ‘চিকা মারা’ কথার বয়স বেশি দিনের নয়। তাহলে শব্দটির উৎপত্তি কখন এবং কীভাবে? এ নিয়ে একটি গল্প প্রচলিত আছে। অনেকে মনে করেন, এই গল্পের সূত্রে ‘চিকা মারা’ কথাটির উদ্ভব। আবার অনেকে মনে করেন, এটি নিছক গল্প। আগে গল্পটি কী দেখা যাক :

১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলনসহ বিভিন্ন কারণে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু করে। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গাছের ছোটো ছোটো ডাল ভেঙে ডালের আগা থেঁতলিয়ে ব্রাশের ন্যায় তুলি বানাত। নিচে দাঁড়িয়ে দেওয়ালের উপরের অংশেও যাতে স্লোগান লেখা যায় সে জন্য তুলিগুলোকে লাঠির মতো লম্বা করে বানানো হতো। সে সব ব্রাশ বা তুলিতে আলকাতরা লাগিয়ে দেওয়ালে বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের পক্ষে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরা হতো। স্লোগানসমূহে কড়া ভাষায় হুমকি দেওয়া হতো সরকারকে। এখনকার মতো তখনও সরকার-বিরুদ্ধ স্লোগান লেখা ছিল নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধ কাজ করলে গ্রেফতার করা হতো। গ্রেফতারের ভয়ে শিক্ষার্থীরা সাধারণত রাতের বেলা টর্চ জ্বালিয়ে দেওয়ালে এ সব স্লোগান লিখতেন।

কথিত হয়, ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের কোনও এক রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী  গাছের ডাল দিয়ে তৈরি লাঠি-আকৃতির লম্বা ব্রাশ দিয়ে দেওয়ালে স্লোগান লিখছিলেন। এ সময় একদল টহল পুলিশকে এগিয়ে আসতে দেখে শিক্ষার্থীরা ঝোপের আড়ালে আলকাতরার টিন লুকিয়ে লাঠির মতো লম্বা তুলি দিয়ে ঝোপঝাড়ে এলোপাথারি আঘাত করতে শুরু করে।টহল পুলিশ এগিয়ে এসে বলল, এত রাতে তোমরা বাইরে কী করছ?শিক্ষার্থীরা বলল, হলে চিকার জ্বালায় থাকতে পারছি না। ঝোপ দিয়ে হলে চিকা ঢুকে। আমরা লাঠি দিয়ে চিকা মারছি।

শিক্ষার্থীদের কথায় পুলিশের সন্তুষ্ট না-হয়ে কোনও উপায় ছিল না। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো ছিল একতলা এবং অধিকাংশ টিনসেডে ও স্যাঁতস্যঁতে মেঝে। পাশে ছিল ঝোপঝাড়, সেখান থেকে চিকা হলে হানা দিত। শুধু হলে নয়, পুলিশের ব্যারাকেও চিকার উপদ্রব ছিল। পুলিশ দল সন্তুষ্টচিত্তে চলে যায়। শিক্ষার্থীরা এবার দুই দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একদল চিকা মারার ভানে ঝোপঝাড়ে আঘাত করতে থাকে আর এক দল দেওয়াল লিখন শুরু করে। এরপর থেকে ‘দেওয়াল লিখন’ লিখতে গেলে শিক্ষার্থীরা বলত চিকা মারতে যাচ্ছে। অনেকে আগে থেকে কয়েকটা চিকা মেরে সঙ্গে নিয়ে যত। এভাবে ‘দেওয়াল লিখন’ বাগভঙ্গিটি ‘চিকা মারা’ শব্দে পরিণত হয়। এখন শুধু দেওয়ালে নয়, রাস্তাতেও ‘চিকা মারা’ হয়, গাড়িতে এমনকি শরীরেও ‘চিকা মারা’ হয়।

‘চিকা মারা’ শব্দের উৎপত্তি নিয়ে উপরে বর্ণিত গল্পটির সত্যতা নিয়ে অনেকে সন্দেহ পোষণ করেন। পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে ‘চিকা’ শব্দের দুটি অর্থ। একটি হচ্ছে- ছুঁচা, ছুঁচো, গন্ধমূষিক প্রভৃতি এবং অন্যটি হচ্ছে- গুণচিহ্ন বা ঢ্যারাচিহ্ন।বৈয়াকরণিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ছুঁচো অর্থ প্রকাশক ‘চিকা’ হতে নয়, বরং গুণ চিহ্ন বা ঢ্যারাচিহ্ন প্রকাশক ‘চিকা’ শব্দ হতে ‘চিকা মারা’ কথার উদ্ভব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *