Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
চ্যাংদোলা ও পাতকুয়া: কেন এমন নামকরণ – Dr. Mohammed Amin

চ্যাংদোলা ও পাতকুয়া: কেন এমন নামকরণ

ড. মোহাম্মদ আমীন

চ্যাংদোলা

চ্যাংদোলা শব্দের মিলনে চ্যাংদোলা। চ্যাং ও দোলা দুটোই দেশি শব্দ। বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত দেশি চ্যাং শব্দের  তিনটি অর্থ। ১. টাকি মাছের মতো মাথা মোটা শোলজাতীয় ছোটো মাছবিশেষ।  ২. সরু মাচা এবং ৩. শব বহনের খাটুলি। চ্যাংদোলা শব্দের চ্যাং অর্থ— শববহনের খাটুলি। অভিধানে দোলা শব্দের দুটি পৃথক ভুক্তি দেখা যায়। সংস্কৃত দোলা [দুল্‌+অ+আ(টাপ)] অর্থ— (বিশেষ্যে) ১. দোলনা, ২. মনুষ্যবাহিত শিবিকাবিশেষ, ৩. মৃতদেহ বহনের খাটুলিবিশেষ। বাংলা দোলা অর্থ— (ক্রিয়াবিশেষণে) আন্দোলিত হওয়া, দোল খাওয়া. ৩. (আলংকারিক) দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়া। মৃতদেহ বহনের খাটুলি হিসেবে চ্যাং ও দোলা সমার্থক। তবে চ্যাংদোলা শব্দের দোলা মৃতদেহ বহনের খাটুলি নয়। এখানে দোলা দেশি এবং এর অর্থ— দোল খাওয়া, আন্দোলিত হওয়া।  চ্যাং বহন করার সময় আন্দোলিত হয় বা দোলে। এজন্য এর নাম চ্যাংদোলা। এটি হচ্ছে চ্যাংদোলা শব্দের শাব্দিক অর্থ।  বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, দেশি চ্যাংদোলা অর্থ (বিশেষ্যে)— দুই হাত ও দুই পা ধরে  দেহ ঝুলিয়ে বহন;  কারো দুই পা এবং দুই হাত  ধরে চ্যাঙের মতো বহন করে নিয়ে যাওয়া।

মানুষ বহনের সঙ্গে শব আর আন্দোলনের সম্পর্ক স্থাপিত হলো কেন এবং কীভাবে?

বহন করার সুবিধার জন্য চ্যাঙের আয়তনের সীমানার বাইরে চারকোনায় চারটি বর্ধিত দণ্ড থাকে। ওই চার বর্ধিত দণ্ড  হাতে বা কাঁধে নিয়ে চ্যাং বহন করা হয়। বহন করার সময় চ্যাং দুলতে থাকে। মনে করা হয় চ্যাঙের সামনের দুটি বর্ধিত দণ্ড হাত, পেছনের দুটি  বর্ধিত দণ্ড পা এবং চ্যাং হচ্ছে শরীর। যা বহন করার সময় দুলতে থাকে। কোনো ব্যক্তিকে চ্যাঙে না তুলে দুই হাত আর দুই পা ধরে দুই তিন চার বা ততোধিক ব্যক্তি মিলে ঝুলিয়ে বয়ে নিয়ে গেলে চ্যাং ঝুলিয়ে বয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো দেখায়। তখন ব্যক্তির শরীরও চ্যাঙের মতো দুলতে থাকে। মূলত চ্যাঙে করে শরীর বহন এবং চ্যাঙ-ছাড়া দুই-হাত ও দুই-পা ধরে বহনের  অভিন্ন অবস্থা থেকে  ‘দুই হাত আর দুই পা ধরে কাউকে ঝুলিয়ে বহন করা’ অর্থে ‘চ্যাংদোলা’ কথার প্রচলন।

পাতকুয়া

পাত এবং কুয়া মিলে পাতকুয়া। সংস্কৃত কূপ থেকে উদ্ভূত কুয়া অর্থ— (বিশেষ্যে) জল আহরণের জন্য অল্প গভীর করে খোঁড়া গোলাকার ক্ষুদ্র জলাশয়, গর্ত, ইঁদারা। কিন্তু কুয়ার আগে যে পাত সেটি কী? কেন এবং কীভাবে তা কুয়ার সঙ্গে যুক্ত হলো? হিন্দি পত্তা থেকে উদ্ভূত পাতি— অর্থ ছোটো। অনেকের মতে হিন্দি পাতি শব্দের সঙ্গে খাঁটি বাংলাকুয়া যুক্ত হয়ে গঠিত হয়েছে পাতকুয়া। অনেকে বলেন— এটি ঠিক নয়। কেউ কেউ বলেন— পাতকুয়ার পাত সংস্কৃত পত্র থেকে উদ্ভূত। যার অর্থ পাতা, থালা প্রভৃতি। তলা থালার মতো পাতা বলেই এ কুয়োর নাম— পাতকুয়া বা পাতকুয়ো। কিন্তু সব কুয়ার তলা তো একরকম। তাহলে শুধু একটি নির্দিষ্ট কুয়ার নাম পাতকুয়া হবে কেন? কারো কারো মতে, পাতকুয়া= পাত(পৎ>)=পাতাল+কূপ। যার অর্থ পাতালভেদী কূপ, গভীর কূপ, ইন্দারা (ইন্দ্রাগার)। এমন হলেও সব কুয়ার নাম হতো পাতকুয়া, কিন্তু দেশে অনেক নামের কুয়া আছে। অতএব, ওপরে বর্ণিত মন্তব্যগুলো সঠিক নয়।
 
ওপরের বিবরণগুলো যদি সত্য না হয়, তাহলে পাত শব্দটি কুয়ার সঙ্গ যুক্ত হলো কীভাবে? বাংলাদেশে অল্প গভীর কুয়া বা গর্ত করলে পানি পাওয়া যেত। কুয়া যাতে ভেঙে না যায় সেজন্য মাটির প্রকৃতিভেদে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন কৌশলে বাধ বা ঘেরাও দেওয়া হতো। মূলত ঘেরাও ব্যবস্থা অনুসারে কুয়ার বিভিন্ন নাম হতো। যেমন: লাল মাটি অঞ্চলের মাটি ভেঙে পড়ত না। তাই এসব অঞ্চলের কুয়ায় কোনো ঘেরাও দেওয়া হতো না। এরূপ ঘেরাহীন কুয়াকে মাটির কুয়া বা মাইট্যাকুয়া বলা হতো।কংক্রিটের রিং দিয়ে বানানো কুয়াকে বলা হয় পাকাকুয়া। আবার গর্ত বা কুয়ার নিচ থেকে ইটের গাঁথুনি দিয়ে বানানো কুয়াকে বলা হয় ইন্দারা বা ইঁদারা।
তাহলে পাতকুয়া কী?
বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, পাতকুয়া অর্থ (বিশেষ্যে) কাঁচা কুয়া। কিন্তু পাত কেন? কুমারগণ মাটি পুড়িয়ে একরকম রিং তৈরি করেন। এগুলোকে বলা হয় মাটির পাট বা পাট।পাটের উপর পাট বসিয়ে মাটির ভাঙন রোধ করে যে কুয়া তৈরি করা হতো তার নাম পাটকুয়া অপভ্রংশে পাতকুয়া বা পাতকুয়ো; কাঁচাকুয়া বা কাঁচাকুয়ো।
 
 
 
লিংক: https://draminbd.com/চ্যাংদোলা-ও-পাতকুয়া-কেন-এ/

সূত্র: ড. মোহাম্মদ আমীন, পৌরাণিক শব্দের উৎসকথন ও বিবর্তন অভিধান।