Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়ালো পুরো ছড়া – Dr. Mohammed Amin

ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়ালো পুরো ছড়া

ছেলে ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো

ছেলে ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো
বর্গী এল দেশে,
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে
খাজনা দেব কিসে।।

ধান ফুরালো, পান ফুরলো
খাজনার উপায় কী?
আর ক’টা দিন সবুর কর
রসুন বুনেছি।।

ধনিয়া পিয়াজ গেছে পচে
সইরষা ক্ষেতে জল,
খরা-বন্যায় শেষ করিল
বছরের ফসল।।

ধানের গোলা, চালের ঝুড়ি
সব শুধু আজ খালি,
সবার গায়ে ছেঁড়া কাপড়
শত শত তালি।।

গোরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি-মাছ
যা কিছু  মোর ছিল
নদীর টানে বাঁধটি ভেঙে
সবই ভেসে গেল।।

এ বারেতে পাঁচ গাঁয়েতে
দিছি আলুর সার
আর কটা দিন সবুর করো
মশাই জমিদার।।

ছড়াটির লেখক কে তা আমি জানি না। আমার পিতামহ গোলাম শরীফের অনেক পুরানো একটা ডায়েরিতে পেয়েছি।  এটি তাঁর লেখা কি না তাও আমি জানি না। তবে তিনি ছড়া লিখতেন। তিনি ছিলেন কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার আরবি ভাষার শিক্ষক। আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদের বন্ধু ও আত্মীয়। আহমদ ছফা, আহমদ হোসেন প্রমুখ ছিলেন তাঁর ভক্ত। তাঁর একটা ডায়েরিতে বিভিন্ন লোকালয়ে প্রচলিত কিছু ছড়া, কবিতা, প্রবাদ, প্রবচন, ধাঁধাঁ রয়েছে। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে ছড়াটি তার পুরানো ডায়েরি হতে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে প্রকাশ করা হয়েছিল। পুরানো ডায়েরি ছিল বলে শব্দের বানান ও শব্দসজ্জায় কিছুটা ভুল হয়েছিল। এখন তা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে পুনরায় প্রকাশ করা হলো। 

 সেসময় ছড়াটি শুবাচের জনালায় যযাতি হিসেবে প্রকাশিত হওয়ার পর শুবাচি খুরশেদ আহমেদ মন্তব্য জানালায় লিখেছিলেন,‘ছেলে ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো/ বর্গী এল দেশে’ ছড়াটির মধ্য দিয়ে বাংলার ইতিহাস কথা কয়! এই ছড়াটি :

১) ১৭৪০-এর দশকে বাংলার পশ্চিম সীমান্তবর্তী গ্রামাঞ্চলে অশ্বারোহী মারাঠা বর্গিদের পৌনঃপুনিক অতর্কিত আক্রমণ, লুণ্ঠন ও সন্ত্রাস থেকে গ্রামবাঙলার অধিবাসীদের রক্ষা করায় বাংলার তৎকালীন নবাব আলিবর্দি খাঁ-এর পূর্ণ ব্যর্থতার নিদর্শন;
২) নবাবের পক্ষে ও পরবর্তীকালে ঔপনিবেশিক শাসকদের পক্ষে খাজনা আদায়ে জমিদারের নানান বাহিনীর চাপপ্রয়োগ ও অত্যাচারের নিদর্শন;
৩) সেকালেও কৃষকের ভাগ্যে খরা-বন্যাজনিত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিদ্যমানতার নিদর্শন;
৪) সেকালের গ্রামবাসীদের দারিদ্রের নিদর্শন;
৫) খাজনা দেওয়াসহ জীবনধারণের জন্য আলু ও রসুন চাষসহ বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণে বাংলার তৎকালীন কৃষকদের অব্যাহত সংগ্রামের, নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখায় তাদের পূর্বাবস্থায় ফিরে আসার ক্ষমতার – রেজিলিয়েন্সের – নিদর্শন; এবং
৬) ছড়ার মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মকে বর্গি, খাজনা, খরা-বন্যা, চাষ-বাস ও জীবন-সংগ্রামের বিষয়ে অবগত ও দীক্ষিত করে তোলার ঐতিহ্যের নিদর্শন।

ছড়াটি পড়ে প্রবীণ শুবাচি বিধুভূষণ ভট্টাচার্য লিখেছিলেন, “কিন্তু এতো কিছু থাকতে রসুন দিয়েই কেন খাজনা শোধ করতে হবে সেই ব্যাখ্যা কেন কেউ দিচ্ছেন না বুঝতে পারছি না। নিশচয়ই এর কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা আছে।” আসলেই আছে। এখন পিঁয়াজের দাম প্রচণ্ড বেড়ে গেছে। রাতে মানুষ পিঁয়াজের খেত পাহারা দেয়। ছড়াটি যখন লেখা হয়ে তখন হয়তো এই সময়ের পিঁয়াজের দাম বৃদ্ধির মতো রসুনের দামও বেড়ে গিয়েছিল।

উৎস-সংগ্রহ : গোলাম শরীফের হাতের লেখা ডায়েরি/ ১৯২৭

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *