ড. মোহাম্মদ আমীন
দীর্ঘ তিন ঘণ্টা পরিষ্কার করলাম। তারপরও অবাক হয়ে দেখলাম আরও ২০৩৭টি জঞ্জাল পরিষ্কার করতে হবে। আর পারছি না, ক্লান্তি চেপে ধরেছে প্রবল। “ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু”- গান গেয়েও ক্ষমা পাওয়ার কোনো লক্ষণ দেখলাম না। আমার জঞ্জাল দেখে প্রভুও বিরক্ত হয়ে সরে গেছে। একদিকে পরিষ্কার করছি, আর অন্যদিক হতে আসছে ক্রমাগত। ট্যাগ-এর কথা বলছি। যার বাংলা জঞ্জাল-এর চেয়ে উত্তম কিছু আছে বলে মনে হচ্ছে না।
প্রাসঙ্গিক বিষয় হলে ট্যাগ প্রত্যাশিত, কিন্তু অপ্রাসঙ্গিক ট্যাগ জঞ্জাল ছাড়া আর কিছু নয়। অধিকাংশ ট্যাগই জঞ্জালের মতো। তাই এর বাংলা করেছি জঞ্জাল। এই জঞ্জালের ভীড়ে আমার প্রত্যাশিত ট্যাগগুলো চাপা পড়ে গেছে- কাঁদছে সাভারে ভবনের নিচে চাপা পড়া বালিকার মতো। কিছু কিছু ট্যাগ এমন বিরক্তিকর যে, মনে হয় ট্যাগদাতাকে ব্লক করে দিই; কিন্তু পারি না। আমার প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, স্নেহ বা বন্ধুত্বের অগাধ অনুভূতি থেকে তার বিবেচনায় প্রিয় লেখাটা আমার ওয়ালে সেঁটে দিচ্ছে। এতে যে আমার ওয়াল উদ্ভট জঞ্জালে ভরে ওঠছে- একথা কীভাবে বলি? লজ্জা লাগে ভীষণ, যদি কষ্ট পায় মনে! আপনার দেওয়ালে আপনি যা ইচ্ছে তা লাগান- কিন্তু অবিবেচক দখলদারের মতো আমার দেওয়ালে কেন ভাই?
প্রতিদিন জীবনে অনেক ঘটনা ঘটে, অনেকের সঙ্গে অনেক সাম্পর্কিক লেনদেন বা যোগাযোগ হয়। এসব বিষয় প্রত্যেকের জন্য প্রাসঙ্গিক নয়, কারও জন্য খুবই প্রাসঙ্গিক আবার কারও কাছে মারাত্মকভাবে গোপনীয়। তাই সব কথা সবার কাছে বলা যায় না, সমীচীনও নয়। ট্যাগও ঠিক তেমনি। যে ব্যক্তি প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনা না-করে অন্যের ওয়ালে নিজের বক্তব্য লাগিয়ে দেন- তিনি যেন দাম্পত্য জীবনের গোপন কথাগুলো প্রচার করে বেড়ান।
কোনো বিষয় আপনার প্রিয় হলে তা যে, আমারও প্রিয় হয়ে যাবে- এমন বোধ যার প্রবল তাকে আহম্মক ছাড়া আর কী বলা যায়? আজ অনেক জঞ্জাল পরিষ্কার করলাম; তাই আজ ডিসেম্বর মাসের নয় তারিখকে আমি ট্যাগ দিবস ওরফে জঞ্জাল দিবস ঘোষণা করে পালন করলাম। পারলে আপনারাও করুন।