কীভাবে হলো দেশের নাম (এশিয়া)
ড. মোহাম্মদ আমীন
জর্ডান (Jordan)
জর্ডান নদী হতে জর্ডান রাষ্ট্রের নাম করা হয়েছে। হিব্রু (Hebrew) ও ক্যানানিট (Canaanite) শব্দ অর্ড (yrd) হতে জর্ডন নামের উদ্ভব। এ অর্ড শব্দের অর্থ ডেড সি বা মৃত সাগরে পতন। জলের সঙ্গে দেশের যাবতীয় দূষণীয় জঞ্জাল মৃতসাগরে পতিত হতো। তাই এর নাম হয় জর্ডান। জর্ডন নদী ইসরাইলের পশ্চিম তীর ও জর্ডন দেশের কিয়দংশ নিয়ে সীমান্ত গঠন করেছে। এর প্রাচীন নাম ছিল ট্রান্সজর্ডান। ট্রান্স অর্থ আড়াআড়ি, জুড়ে বা অতিক্রম। অর্থাৎ জর্ডান নদীর পূর্বে। ভূখ-টি জর্ডান নদীর পূর্ব তীর ঘেষে আড়াআড়িভাবে অতিক্রম করেছে। তাই এর নাম ছিল ট্রান্সজর্ডান।
জর্ডানের আয়তন ৮৯,৩৪২ বর্গকিলোমিটার বা ৩৫,৬৩৭ বর্গমাইল। তন্মধ্যে জলীয় ভাগের পরিমাণ ০.৮%। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসের হিসাব অনুযায়ী জর্ডানের লোকসংখ্যা ৮০ লাখ। প্রতি বর্গমাইলে জনসংখ্যা ৭৪.৫। আয়তন হিসাবে জর্ডান পৃথিবীর ১১২-তম কিন্তু জনসংখ্যা বিবেচনায় ৯০-তম। জর্ডানের জিডিপি (পিপিপি) ৮৩.৩৩৮ বিলিয়ন (৮৭-তম), সে হিসাবে মাথাপিছু আয় ১২,২১২ ইউএস ডলার (১২৪-তম)। জিডিপি নমিনাল ৩৮.১৪৫ (৯২-তম) এবং সে হিসাবে মাথাপিছু আয় ৫,৫৮৯ (৯৫-তম) ইউএস ডলার। জর্ডানের গিনি ৩৫.৪ এবং এইচডিআই ০.৭৪৫ (৭৭-তম)। আম্মান জর্দানের বৃহত্তম শহর ও রাজধানী। মুদ্রার নাম জর্ডানিয়ান দিনার।
জর্দান মধাপ্রাচ্যের একটি রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। জর্দানের রাজবংশ নিজেদেরকে হযরত মুহাম্মদের পিতামহ হাশেমের বংশধর বলে মনে করে। জর্দানের ভূপ্রকৃতি ঊষর মরুভূমিময়। এখানে প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণও কম। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে দেশটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ জনপদটি উসমানীয় সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে উসমানীয় সাম্রাজ্যের পতন ঘটলে ব্রিটিশরা অঞ্চলটি দখলে নেয়। জর্দান নদীর পূর্বতীরের ট্রান্সজর্ডান এবং পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিন দুটোই ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে ট্রান্সজর্ডান অংশটি একটি স্বাধীন রাজ্য হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৪৯ খিস্টাব্দে এর নাম বদলে জর্ডান রাখা হয়।
জর্ডানের জাতীয় পতাকা অত্যন্ত অর্থবহ। পতাকায় সমান আকৃতির তিন রঙের তিনটি সমান আকৃতির আনুভূমিক ডোরা আছে। উপরের কালো অংশ আব্বাসিয় খেলাফত, সাদা অংশ উমাইয়া খেলাফত এবং সবুজ অংশ ফাতিমিদ খেলাফত ও ইসলামের প্রতীক। এখানে একটি লাল ত্রিভুজ আছে। লাল ত্রিভুজ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে মহান আরব বিদ্রোহের স্মৃতি নির্দেশ করে। এখানে একটি সাত-বিন্দুর একটি তারা রয়েছে। যা পবিত্র কোরআনের প্রথম সাতটি সুরা নির্দেশ করে। বর্তমানে জডানে প্রচলিত পতাকাটি ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ এপ্রিল গ্রহণ করা হয়।
১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ফিলিস্তিনের অংশবিশেষে ইসরায়েল স্বাধীনতা ঘোষণা করলে জর্দান আরও চারটি আরব রাষ্ট্রের সঙ্গে একত্রে ইসরায়েলিদের আক্রমণ করে। যুদ্ধশেষে ইসরায়েলিরা পশ্চিম জেরুজালেম এবং জর্ডানিরা পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম দখলে আনে। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরও দখল করে নেয়। জর্ডান পশ্চিম তীরকে জর্ডানের অংশ হিসাবে দাবি করতে থাকলেও স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনিদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে জর্ডানের রাজা হুসেন পশ্চিম তীরের উপর থেকে দাবি প্রত্যাহার করে নেন।
জর্ডানের উত্তরে সিরিয়া, পূর্বে ইরাক ও সৌদি আরব, দক্ষিণে সৌদি আরব ও আকাবা উপসাগর এবং পশ্চিমে ইসরায়েল ও পশ্চিম তীর অবস্থিত। জর্ডানের আয়তন ৮৯,৫৫৬ বর্গকিলোমিটার। পৃথিবীর নতুন সপ্তাচার্যের অন্যতম পেট্রা (Petra) জর্ডানে অবস্থিত। ১৯ শতকের পূর্বপর্যন্ত এটি আবিষ্কৃত হয়নি। মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র দেশ জর্ডান, যেখানে কোনো তেলক্ষেত্র নেই। তবে আধুনিক গবেষণায় প্রতীয়মান হয়েছে যে, তেলক্ষেত্র না থাকাই ভালো।
জর্ডান ধর্মীয়, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দিক হতে বিশ্বের অন্যতম একটি আকর্ষণীয় স্থান। কথিত হয়, জর্ডানের মাউন্ট নেবোতে ইহুদিদের নবি মোজেস বা মুসার সমাধি রয়েছে। জন ব্যাপ্টিস্ট জর্ডানের মাদাবার দক্ষিণে মুকাবির নামক স্থানে বন্দি ছিলেন। জর্ডানিয়ানদের বিশ্বাস শিশুদের অতিরিক্ত প্রশংসা করলে তাদের দুর্ভাগ্য আসে, তাই শিশুদের অতিরিক্ত প্রশংসা নিরুৎসাহিত করা হয়। জর্ডানের মতৃসাগর ও লবণহ্রদ সমুদ্র সমতল হতে ৪০২ মিটার নিচে অবস্থিত। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে নিচুতম স্থান। এ স্থানটি পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র এবং অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী দৃশ্যময় স্থান হিসাবেও পরিচিত। জর্ডানে কোনো খাদ্য গ্রহণের পূর্বে তিনবার প্রত্যাখ্যান করা সৌজন্য ও ভদ্রতা বিবেচিত হয়।
জর্ডানিয়ানরা আতিথেয়তায় অত্যন্ত আন্তরিক। অতিথিদের তারা আহলান ওয়া সাহলান বলে গভীর হৃদ্যতায় স্বাগত জানায়। জর্ডানের প্রত্যেকে তাদের বাদশা দ্বিতীয় আবদুল্লাহকে ভালবাসেন এবং রাজাদের রাজা হিসাবে জানেন। কথায় কথায় বলেন আল্লাহ ও বাদশাকে ধন্যবাদ। জর্ডানের প্রায় সর্বত্র অলিভ বৃক্ষ দেখা যায়। এটি ভালবাসা ও পবিত্রতার প্রতীক। এর মধ্যে একটি অলিভবৃক্ষ খুবই বিখ্যাত। এটি দ্বিতীয় জন পল (John Paul II) শান্তির স্মারক হিসাবে রোপণ করেন। জর্ডানিরা দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানায়। চা বা কফি শেষ হওয়ার পর কাপ নেড়ে চেড়ে রাখতে হবে। অন্যথায় তারা আরও দেবে। মনে করবে আপনি আরও খেতে চাইছেন। খাওয়ার সময় সর্বদা ডান হাত ব্যবহার করেন। স্বামী-স্ত্রী না হলে কোনো মহিলার হাত স্পর্শ করা মারাত্মক অশোভনীয়।
ইসরায়েল (Israel) : ইতিহাস ও নামকরণ
বার্মা (Burma) : ইতিহাস ও নামকরণ
কিরগিজিস্তান (Kyrgyzstan) : ইতিহাস ও নামকরণ
জাপান (Japan) : ইতিহাস ও নামকরণ
জাপান (Japan) : ইতিহাস ও নামকরণ
জর্ডান (Jordan) : ইতিহাস ও নামকরণ
সূত্র: কীভাবে হলো দেশের নাম, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।