জাতীয় পাখি
বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েল। পাখিটি গড়ে প্রায় ১৫ বছর বাঁচে। দেখতে বেশ আকর্ষণীয় ও নীরিহ ছোটো আকৃতির এই পাখিটি বনে-জঙ্গলে, পাহাড়ে এবং শহরে সবখানে বিচরণ করতে দেখা যায়।
জাতীয় ফল
বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে সুমিষ্ট এবং বৃহত্তম ফল। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে এক সময় কাঁঠাল ফলত। এখনও কাঁঠাল অন্যান্য ফলের চেয়ে তুলনামূলকভাবে সস্তা, সহজলভ্য এবং সহজচাষ্য। এ ফলের চামড়া খসখসে হলেও গবাদিপশুর অত্যন্ত প্রিয় খাদ্য। ফলটির কোনো অংশই ফেলনা নয়। বিচি আনাজ হিসেবে অত্যন্ত প্রিয়।
জাতীয় ফুল
পানিতে ভাসমান, সাদা রঙের শাপলা হলো বাংলদেশের জাতীয় ফুল। জাতীয় ফুল সাধারণত প্রতীকিভাবে একটি দেশের স্বতন্ত্র ভৌগলিক পরিচিত তুলে ধরে। শাপলা ফুল অনেক রঙের হলেও, শুধু সাদা শাপলাই বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। কারণ সাদা শাপলা দেশের প্রায় সব অঞ্চলে পাওয়া যায়। টাকা, পয়সা, দলিল ইত্যাদিতে প্রতীক আকারে শাপলার জলছাপ থাকে।
জাতীয় মাছ
ইলিশ হলো বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। অত্যন্ত সুস্বাদ এবং সর্বপ্রিয় হিসেবে পরিচিত ইলিম ছিল একসময় সস্তা ও সহজলভ্য। পদ্মা নদীর ইলিশ বিশ্বব্যাপী পরিচিত। প্রায় সারাবছরই মাছটি পাওয়া যায়। ধবধবে রূপালি বর্ণের মাছটিও দেখতে বেশ সুন্দর এবং দ্রুত বর্ধনশীল। ইলিশ (বৈজ্ঞানিক নাম:ঞবহঁধষড়ংধ রষরংযধ) সামুদ্রিক মাছ, যা ডিম পাড়ার জন্য বাংলাদেশ ও পূর্ব ভারতের নদীতে আগমন করে। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের ইলিশ মাছ ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। অনেক বাঙালি হিন্দু পরিবার বিভিন্ন পূজার শুভ দিনে জোড়া ইলিশ বা দুটি ইলিশ মাছ কেনেন।পশ্চিমবঙ্গ (ভারত) ও বাংলাদেশের বাঙালি হিন্দুদের কাছে সরস্বতী ও লক্ষ্মী পূজায় জোড়া ইলিশ কেনা শুভ লক্ষণ মনে করা হয়। তাদের অনেকে লক্ষ্মী দেবীকে ইলিশ মাছ উৎসর্গ করেন। অনেকেই ইলিশ উৎসর্গ ছাড়া পূজাকে অসম্পূর্ণ মনে করেন।
জাতীয় বৃক্ষ
বাংলাদেশের জাতীয় বৃক্ষ আম গাছ। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই নভেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে আম গাছকে জাতীয় বৃক্ষের মর্যাদা দেয়া হয়। বাংলাদেশের সর্বত্র আম এবং আম গাছ জন্মে। ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ শে জুন পলাশীর আমবাগানে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। আবার ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই এপ্রিয় কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার ভবের পাড়ার আমবাগানে যুদ্ধকলীন সরকার গঠন করা মাধ্যম অস্তমিত সূর্য উদিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের শপথে আম বাগানের কথা উল্লেখ আছে। আমাদের জাতীয় সংগীতে উল্লেখ আছে- “ আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে”। ইত্যাদি বিবেচনায় আম গাছকে বাংলাদেশের জাতীয় বৃক্ষ নির্ধারণ করা হয়।
জাতীয় পশু
বাংলাদেশের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার। যদিও রয়েল বেঙ্গল টাইগার নৃশংস; তবে রাজকীয়, সাহসী, শক্তিমান এবং ভয়ঙ্করভাবে সুন্দর। নৃশংসতা বিবেচনয় নয়, মূলতÑ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের শক্তি, সাহস, সৌন্দর্য, রাজকীয় ভঙ্গি ও বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছাকে বাঙালির জাতির অদম্যতার সঙ্গে তুল্য করে রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে জাতীয় পশু ঘোষণা করা হয়েছে।
রাষ্ট্রধর্ম ও রাষ্ট্রভাষা
বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। অনেকে বলেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করা ঠিক হয়নি। দেশে অন্যান্য ধর্মও রয়েছে। কিন্তু সংবিধানে আছে, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, কিন্তু হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানসহ প্রত্যেক ধর্মের সমমর্যাদা ও সমাধিকার রয়েছে। জাতীয় পাখি দোয়েল মানে এই নয় যে, অন্য পাখিকে হেয় করা হয়েছে, জাতীয় বৃক্ষ আম গাছ করা হয়েছে, তার মানে এ নয় যে, অন্য গাছকে কেটে ফেলা হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণনের ধর্মকে সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করা হয়েছে। সে কারণে বাংলাকে করা হয়েছে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ভাষা।
জাতীয় ব্যক্তিত্ব
বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় বীর মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী, ঐতিহাসিক বীর নবাব সিরাজ উদ দৌলা এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান প্রমুখ বাংলাদেশের জাতীয় ব্যক্তিত্ব।
জাতীয় দলিল, ক্রীড়া পঞ্জিকা, পোশাক ও নবাত্বরোপ
বাংলাদেশের জাতীয় দলিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পনের দলিল। জাতীয় নবাত্বরোপ, বাংলা মা, জাতীয় পঞ্জিকা- বঙ্গাব্দ; জাতীয় পোশাক- শাড়ি ও কোর্তা এবং জাতীয় ক্রীড়া কাবাডি।
জাতীয় স্থান ও জাতীয় স্থাপনা
বাংলাদেশের জাতীয় দিবাস ২৬ শে মার্চ, জাতীয় উদ্যান ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান, জাতীয় পার্ক শহিদ জিয়া পার্ক, জাতীয় বন হচ্ছে সুন্দরবন; জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররম; জাতীয় মন্দির Ñ ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির; জাতীয় পর্বত হচ্ছে কেওক্রাডাং; জাতীয় যাদুঘর বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘর; জাতীয় গ্রন্থাগার হচ্ছে শেরে বাংলানগরের আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশের জাতীয় গ্রন্থাগার; জাতীয় নদী যমুনা, জাতীয় ভবন হচ্ছে জাতীয় সংসদ ভবন, জাতীয় সমাধি বঙ্গবন্ধুর সমাধি এবং জাতীয় সৌধ হচ্ছে সাভার স্মৃতি সৌধ। জাতীয় বিমান বন্দর হচ্ছে হযরত শাহাজালাল বিমানবন্দর।
জাতীয় গাড়ি
বাংলাদেশের জাতীয় গাড়ি হচ্ছে- গোরুর গাড়ি। নব্যপ্রস্তর যুগের সময় থেকে মানুষ এযানটি ব্যবহার করে আসছে। ফ্রান্সের ফঁতান অঞ্চলে আল্পস পর্বতের উপত্যকায় একটি গুহায় গরুর গাড়ির যে ছবি পাওয়া যায়, তার থেকে জানা যায় খ্রিষ্টপূর্ব ৩১০০ অব্দের আগে ব্রোঞ্জ যুগেও গরুর গাড়ির অস্তিত্ব ছিল। হরপ্পা সভ্যতাতেও গরুর গড়িরর অস্তিত্ব ছিল। খ্রিষ্টজন্মের ১৬০০ থেকে ১৫০০ বছর আগে সিন্ধু অববাহিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে গররুগাড়ির প্রচলন ছিল।