বাংলায় বাঙালির প্রথম ব্যক্তিগত হ্যাপি বার্থডে
ড. মোহাম্মদ আমীন
কলকাতায় ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ শে ডিসেম্বর ব্যক্তি হিসেবে বিলেতি কায়দায় সর্বপ্রথম ইন্দিরা দেবী চৌধুরানীর “শুভ জন্মদিন” পালন করা হয়। ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ শে জুলাই পালিত হয় সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর (২৬ জুলাই, ১৮৭২ – ৩ মে, ১৯৪০)-এর জন্মদিন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (৭ই মে, ১৮৬১ – ৭ই আগস্ট, ১৯৪১)-এর ভাগিনেয়ী সরলাদেবী চৌধুরানী (৯ সেপ্টেম্বর, ১৮৭২- ১৮ আগস্ট, ১৯৪৫) তাঁর আত্মজীবনী “জীবনের ঝরাপাতা” ( ১৯৪৫) গ্রন্থে লিখেছেন, “মেজমামী বিলেত থেকে ফিরে আসার পর থেকে ‘জন্মদিন’ বলে একটা ব্যাপারের সঙ্গে পরিচয় হল আমাদের– সে বিলাতী ধরনে সুরেন বিবির জন্মদিন উৎসব উপলক্ষে। তাঁর আগে এ পরিবারে ‘জন্মদিন’ কেউ কারো জন্য করে নি।”প্রসঙ্গত, সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ডাক নাম সুরেন এবং ইন্দিরা দেবী চৌধুরানীর ডাক নাম বিবি। সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জেষ্ঠ্যভ্রাতা ও প্রথম ভারতীয় আইসিএস সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর সন্তান। জ্ঞানদানন্দিনী দেবী ১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে পাঁচ বছরের ছেলে সুরেন ও ৪ বছরের কন্যা ইন্দিরাকে নিয়ে বিলেত গিয়েছিলেন। ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে দেশে ফিরে আসার সময় বিলেত থেকে জন্মদিন পালনের কিছু সামগ্রীও এনেছিলেন।
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ( ১৫ মে ,১৮১৭ – ১৯ জানুয়ারি, ১৯০৫)-এর দ্বিতীয় পুত্র সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১ জুন, ১৮৪২ – ৯ জানুয়ারি, ১৯২৩)-এর সঙ্গে ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে যখন যশোরের জ্ঞানদানন্দিনী দেবী ( ২৬ জুলাই ১৮৫০ – ১ অক্টোবর ১৯৪১)-এর বিয়ে হয় তখন জ্ঞানদানন্দিনী দেবী সাত বছরের শিশু। পিতা অভয়চরণ কুলীন ব্রাহ্মণ হওয়া সত্ত্বেও পিরালি পরিবারের একজনকে বিয়ে করার কারণে তাঁকে সমাজচ্যুত করা হয়েছিল। জ্ঞানদানন্দিনী দেবীই প্রথম ভারতীয় মহিলা, যিনি অন্তঃপুর থেকে বেরিয়ে অসামরিক ভোজসভায় যোগ দিয়েছিলেন।তিনিই ঠাকুর পরিবারের প্রথম গৃহবধূ, যিনি নিয়ম ভঙ্গ করে স্বামীর কর্মস্থল বোম্বাই গিয়েছিলেন। জ্ঞানদানন্দিনী পারসি মহিলাদের শাড়ি পরার রীতি গ্রহণ করে ‘ব্রাহ্মিকা শাড়ি’ পরার রীতি প্রবর্তন করেন।
ইন্দিরাদেবী চৌধুরানী ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ শে ডিসেম্বর পিতার কর্মস্থল বোম্বাই প্রদেশের কারোয়ান (বর্তমান কর্ণাটক) রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর স্বনির্বাচিত পাত্র প্রমথ চৌধুরী ( ৭ অগাস্ট ১৮৬৮- সেপ্টেম্বর ২, ১৯৪৬)-এর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ইন্দিরাদেবী চৌধুরানী ১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ পরীক্ষায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম হয়ে ‘পদ্মাবতী’ স্বর্ণপদকে ভূষিত হন। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ‘ভুবনমোহিনী’ স্বর্ণপদক, ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্বভারতী ‘দেশিকোত্তম’ ও ডি-লিট ডিগ্রি এবং ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে রবীন্দ্রভারতী সমিতি প্রথমবারের মতো তাঁকে ‘রবীন্দ্রপুরস্কার’ প্রদান করেন। ঠাকুরবাড়ির মেয়েদের মধ্যে তিনিই প্রথম বি.এ পাশ করেন। খ্যাতিমান অনুবাদক ইন্দিরাদেবী চৌধুরানী ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই অগাস্ট মারা যান।
————————————————————-