কীভাবে হলো দেশের নাম (ইউরোপ)
ড. মোহাম্মদ আমীন
জার্মানি(Germany)
জার্মানি ইউরোপের অন্যতম প্রধান শিল্পোন্নত দেশ। সরকারি নাম সংযুক্ত প্রজাতন্ত্রী জার্মানি। এটি ১৬টি রাজ্য নিয়ে গঠিত একটি সংযুক্ত ইউনিয়ন। এর উত্তর সীমান্তে উত্তর সাগর, ডেনমার্ক ও বাল্টিক সাগর, পূর্বে পোল্যান্ড ও চেক প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণে অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ড এবং পশ্চিম সীমান্তে ফ্রান্স, লুক্সেমবুর্গ, বেলজিয়াম এবং নেদারল্যান্ড্স অবস্থিত। ১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে এটি কোনো একক রাষ্ট্র ছিল না। ১৮১৫ খ্রিষ্টাব্দ থকে ১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত জার্মানি একটি কনফেডারেসি এবং ১৮০৬ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে অনেকগুলি স্বতন্ত্র ও আলাদা রাজ্যের সমষ্টি ছিল।
জার্মানির ল্যাটিন নাম জার্মানিয়া (Germania)। ১৫২০ খ্রিষ্টাব্দে ল্যাটিন নাম জার্মানিয়া পরিবর্তন করে ইংরেজি নাম জার্মানি রাখা হয়। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে ভূখণ্ডটির নাম জার্মানিয়া রাখা হয়। জুলিয়াস সিজারের মাধ্যমে রাইন নদীর পূর্ব তীরের সকল উপজাতির মধ্যে নামটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। সেলটিক (Celtic) জাইর (gair-) শব্দের অর্থ প্রতিবেশি এবং গায়র্ম( gairm) অর্থ যুদ্ধ-ক্রন্দন এবং গার শব্দের অর্থ চীৎকার করা বা বর্শা। কথিত হয়, শব্দগুলোর সঙ্গে জার্মানি নামের উৎপত্তি।
ইউরোপ মহাদেশের মধ্যখানে অবস্থিত বহুমাত্রিক ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে জার্মানি শব্দের যথার্থ ব্যুৎপত্তি জানা যায়নি। অধিকন্তু বিভিন্ন সময় এবং বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষায় এ নামটি পরিচিত হওয়ায় ব্যুৎপত্তি বিশ্লেষণ আরও কঠিন হয়ে পড়ে। জার্মান ভাষায় এটি ডুচল্যান্ড তখন স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ভাষায় তাইস্কল্যান্ড, ফরাসি ভাষায় অ্যালেমেইন (Allemagne), ইতালিয়ান ভাষায জার্মানিকা, পোলিশ ভাষায় নিইমসি (Niemcy), স্প্যানিশ ভাষায় অ্যালোমেনিয়া (Alemania) এবং ডাচ ভাষায় ডুয়েচল্যান্ড (Duitsland)।
১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ৯ মে জার্মানির বর্তমান জাতীয় পতাকাটি গৃহীত হয়। এটি ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ মে গৃহীত এবং ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ৭ জুন পুনগৃহীত পতাকা হতে সংস্কারের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়ছে।
জার্মানির মোট আয়তন ৩,৫৭,১৬৮ বর্গকিলোমিটার বা ১,৩৭,৮৪৭ বর্গমাইল। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে, জার্মানির মোট জনসংখ্যা ৮,১০,৮৩,৬০০ জন এবং প্রতি বর্গকিলোমিটার জনসংখ্যার ঘনত্ব ২২৬। আয়তন বিবেচনায় জার্মানি পৃথিবীর ৬৩-তম বৃহত্তম দেশ কিন্তু জনসংখ্যা বিবেচনায় ১৬-তম। আবার জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় পৃথিবীর ৫৮-তম জনবহুল দেশ। জার্মান দেশটির সরকারি ভাষা এবং জনগণ সরকারিভাবে জার্মান নামে পরিচিত।
২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে, জার্মানির মোট জিডিপি (পিপিপি) ৩.৮৪২ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ৪৭,০৩৩ ইউএস ডলার। অন্যদিকে, জিডিপি (নমিনাল) ৩.৩৭১ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ৪১,২৬৭ ইউএস ডলার। মাথাপিছু আয় বিবেচনায় জার্মানি পৃথিবীর ২০-তম ধনী দেশ। মুদ্রার নাম ইউরো। বার্লিন দেশের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর।
আয়তনের দিক থেকে জার্মানি ইউরোপের ৭ম বৃহত্তম রাষ্ট্র। দেশটির মধ্য দিয়ে রাইন, দানিউব, এলবে প্রভৃতি বিখ্যাত নদী প্রবাহিত। নদীর অবারিত প্রবাহত দেশটিকে বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত করেছে। জার্মানিতে নগরায়নের হার অত্যন্ত উঁচু। বার্লিন দেশের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। প্রাক্তন পশ্চিম জার্মানির রাজধানী বন শহরে এখনও অনেকগুলো সরকারি অফিস রয়েছে। জার্মান এ দেশের প্রধান ভাষা। দুই-তৃতীয়াংশ লোক রোমান ক্যাথলিক বা প্রোটেস্টান্ট খ্রিস্টান।
জার্মানি বহু খ্যাতিমান লেখক, শিল্পী, স্থপতি, সঙ্গীতজ্ঞ এবং দার্শনিকের জন্মভূমিএদের মধ্যে সম্ভবত ইয়োহান সেবাস্টিয়ান বাখ ও লুডভিগ ফান বেটোফেন সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পরিচিত। ফ্রিডরিশ নিৎসে, ইয়োহান ভোলফগাং ফন গোটে এবং টমাস মান জার্মান সাহিত্যের দিকপাল।
জার্মানি বিশ্বের একটি প্রধান শিল্পোন্নত দেশ। এর অর্থনীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের পরে ৩য় বৃহত্তম। জার্মানি লোহা, ইস্পাত, যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম এবং মোটরগাড়ি রপ্তানি করে। জার্মানি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান আর্থনীতিক চালিকাশক্তি।
১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে মিত্রশক্তি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানিকে পরাজিত করে। যুদ্ধের সময় ব্রিটিশ, ফরাসি, মার্কিন ও সোভিয়েত সেনারা একেকটি অঞ্চলের দায়িত্বে ছিল। জার্মানের পরাজয়ের পর দেশটি মূলত চারটি অঞ্চলে বিভক্ত ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পশ্চিমা শক্তিগুলির মধ্যকার মিত্রতা ১৯৪০-এর দশকের শেষে ভেঙে গেলে সোভিয়েত অঞ্চলটি জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র তথা পূর্ব জার্মানিতে পরিণত হয়। পশ্চিম-নিয়ন্ত্রিত বাকি তিন অঞ্চল একত্রিত হয়ে পশ্চিম জার্মানি গঠন করে। জার্মানির ঐতিহাসিক রাজধানী বার্লিন পূর্ব জার্মানির অনেক অভ্যন্তরে অবস্থিত ছিল। তা সত্ত্বেও শহরটিকে দুই দেশের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। কিন্তু পূর্ব জামানি হতে বহু লোক সমৃদ্ধ পশ্চিম জার্মানিতে অভিবাসী হওয়া শুরু করে। এটি রোধ করার জন্য ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব জার্মানি সরকার বার্লিনে একটি প্রাচীর তুলে দেয়। ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব ও পশ্চিম বার্লিনের বাসিন্দারা বার্লিন প্রাচীর ভেঙে ফেলে। আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের ৩ অক্টোবর দুই জার্মানি একত্রিত হয়ে জার্মান ফেডারেল প্রজাতন্ত্র গঠন করে।
১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দে অটো ফন বিসমার্কের নেতৃত্বে একত্রিত হওয়ার পর জার্মানিতে দ্রুত শিল্পায়ন ও আর্থনীতিক প্রবৃদ্ধি ঘটে। বিংশ শতকের শুরুতে জার্মানি ইউরোপে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চষ্টা করলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে। ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে পরাজয় হলে রাজনীতিক ও আর্থনীতিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। উগ্র জাতীয়তাবাদী নাৎসি পার্টির আবির্ভাব ঘটে। নাৎসি পার্টি ১৯৩০-এর দশকে আডলফ হিটলারের নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে জার্মানির আগ্রাসনের ফলে দ্বিতীয় বারের মত বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও জার্মানি পরাজিত হয়।
ফরচুন গ্লোবাল ৫০০ নির্বাচিত ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের রাজস্বের ভিত্তিতে বিশ্ব স্টকমার্কেটের তালিকাভুক্ত সেরা ৫০০ কর্পোরেশনের ৩৭টির প্রধান কার্যালয় জার্মানিতে। সুপরিচিত বৈশ্বিক জার্মান ব্র্যান্ডগুলো হলো বিএমডব্লিও, ভক্সওয়াগন, এডিডাস, মার্সিডিস বেঞ্জ, অডি, পোরশে, ডিএইচএল, টিমোবাইল, লুফথানসা, এসএপি, নিভিয়া ইত্যাদি।
জার্মান ভাষায় জার্মানিকে ‘ডাস লান্ড ড্যার ডিখটার উন্ড ডেনকার’ বলা হয়ে থাকে। এর অর্থ হচ্ছে ‘কবি ও চিন্তাবিদের’। একটি জাতির দেশ হিসাবে উত্থানের অনেক আগে থেকেই জার্মান সংস্কৃতির আবির্ভাব এবং নিবিড় বিস্তার বিশ্ব ইতিহাসের বিরল ঘটনা। এই জন্যে জার্মান সংস্কৃতিকে ইউরোপের উচ্চ সংস্কৃতি থেকে আলাদা করে চিহ্নিত করা মুশকিল। ইতিহাসের কিছু জাঁদরেল মনিষী, যেমন ভোল্ফগাংক্ আমাডেয়ুস মোৎসার্ট, ফ্রানৎস কাফকা, কার্ল মার্ক্স, ফ্রিডরিখ এঙ্গেলসএবং পাউল কেলান যদিও বা আধুনিক অর্থে জার্মান নাগরিক ছিলেন না, কিন্তু তাঁদের ঐতিহাসিক অবস্থান, কাজ ও সামাজিক গুরুত্ব বুঝতে হলে অবশ্যই তাঁদের দখতে হবে জার্মান সংস্কৃতির দৃষ্টিকোণ থেকে।
ফ্রান্স বিশ্বের জনঘনত্ববহুল দেশের একটি। তবু দেশের এক তৃতীয়াংশ অরণ্যঘেরা। ভাষাভাষীর সংখ্যা বিবেচনায় জার্মান পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম ভাষা। এখনও পৃথিবীর ৫টি দেশের দাপ্তরিকভাষা জার্মান। দেশগুলো হচ্ছে জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, লুক্সেমবার্গ ও লিচটেনস্টেইন। পৃথিবীর ১০০ মিলিয়ন লোক জার্মান ভাষায় কথা বলে। পৃথিবীর প্রথম ছাপা বইয়ের জনক জার্মানি।
খ্রিসমাস ঐতিহ্যের সূত্রপাত ফ্রান্স হতে। জার্মানিতের ৩০০ প্রকারের অধিক রুটি এবং ১,৫০০ রকমের বিয়ার এব! ১,০০০ প্রকার সসেজ পাওয়া যায়। বিয়ারকে দাপ্তরিকভাবে ফুড ইন ব্যাভারিয়া বলা হয়। চেক ও অস্ট্রিয়ার পরি বিয়ার পানে জার্মানির স্থান তৃতীয়। পৃথিবীর বৃহত্তম বিয়ার উৎসব অক্টোবারফাস্ট প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসে জার্মানির মিউনিকের ব্যাভারিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়। এখানে রুটি মিউজিয়াম রয়েছে। ফ্রান্সে দুর্গের সংখ্যা ১৫০। বিয়ারের দোকানে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালে মনে করবে আপনি একটি বিয়ার চাইছেন। যদি তর্জনি দেখান তাহলে দুটি বিয়ার চাইছেন। একটি বৃদ্ধাঙ্গুলির জন্য এবং অন্যটি তর্জনির জন্য।
জার্মানির অধিকাংশ ট্যাক্সি মার্সিডিস। জার্মানির বার্লিন রেলওয়ে স্টেশন ইউরোপের সর্ববৃহৎ ট্রেন- স্টেশন। বার্লিন শহর প্যারিসের চেয়ে ৯গুণ বড়। জার্মানির ৬৫% মহাসড়কে কোনো গতিসীমা নেই। চিড়িয়াখানার সংখ্যা বিবেচনায় জার্মানির স্থান প্রথম। জার্মানিতে ৪১৪টি চিড়িয়াখানসহ ৭০০ এর অধিক জুলজিক্যাল গার্ডেন, বন্যপ্রাণী পার্ক, অ্যাকুরিয়াম, পক্ষী পার্ক, প্রাণী সংরক্ষণাগার বা সাফারি পার্ক আছে। প্রজাতির সংখ্যা (১,৫০০) ও প্রাণীর সংখ্যা (১৪,০০০) উভয় বিবেচনায় বার্লিন জুলজিক্যাল গার্ডেন পৃথিবীর বৃহত্তম
২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে পৃথিবীর কনিষ্ঠতম বিলোনিয়ার ছিলেন জার্মান প্রিন্স দ্বিতীয় এলবার্ট ভন থ্রুন উন্ড ট্যাক্সিস (Albert II von Thurn und Taxis)। তার সম্পদের মূল্য ছিল ১.৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার।
ইনসুলিন, ক্লারিনেট, পকেট ওয়াচ, অটোমেটেড ক্যালকুলেটর, লাইট ব্লাব, টেলিভিশন (আংশিক), প্যারাফিন, পেট্রল/গ্যাসলিন ও ডিজেল ইঞ্জিন, টেলিফোন, অটোমোবাইল, মটরসাইকেল, ফ্লোরসেন্ট ল্যাম্প, প্রেগনেন্সি টেস্ট, জেট ইঞ্জিন, এলসিডি মনিটর এবং ওয়াকম্যান প্রভৃতিসহ আরও অনেক জিনিস আবিষ্কারের কৃতিত্ব জার্মানবাসীর। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ১০২ জন জার্মানি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। পৃথিবীর প্রথম দেশ হিসাবে জার্মানি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে দিনের আলো বা দিবালোক সংরক্ষণ সময় (Daylight saving time) পদ্ধতি গ্রহণ করে। জার্মানিতে মোট ৫,৭৫২টি জাদুঘর আছে। যা ইতালি ও যুক্তরাজ্যে যৌথভাবে যত জাদুঘর আছে তার চেয়ে বেশি। জার্মানির যে কোনো জায়গায় প্রকাশ্যে বিয়ার পান করা যায়।
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন জার্মানীর উল্ম (Ulm) শহরে জন্মগ্রহণ করেন। আইনস্টাইন তার চাচাতো বোনকে বিয়ে করেন। জার্মান বিজ্ঞানী উইলহেম কনার্ড রন্টজেন ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে এক্স-রে আবিষ্কার করেন।
ফিনল্যান্ড (Finland) : ইতিহাস ও নামকরণ
ফ্রান্স (France) : ইতিহাস ও নামকরণ
জর্জিয়া (Georgia) : ইতিহাস ও নামকরণ
সূত্র: কীভাবে হলো দেশের নাম, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।
বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক