ড. মোহাম্মদ আমীন
১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে ফেব্রুয়ারি আহমদ শরীফ মারা যান। তিনি আমাদের দূরসম্পর্কীয় আত্মীয়— পিতামহের ভাই হন। তখন আমি বান্দরবানের ম্যাজিস্ট্রেট।
পরদিন পত্রিকায় লিখেছেন, আহমদ শরীফ তাঁর দুই চক্ষু দান করে দিয়েছেন। পুরো শরীরটাও হাসপাতালে গবেষণার জন্য দিয়ে গিয়েছেন। সার্কিট হাউসে কয়েক সহকর্মী— নুরনবী, নুরুল আলম নিজামী, মুনীর চৌধুরী ও আমি আলাপ করছিলাম।আমরা সবাই ব্যাচম্যাট।পত্রিকা পড়ছিল নুরনবী।
একসময় পত্রিকা থেকে চোখ তুলে নুরনবী বললেন, আমীন, তোমার জেঠামহ আহমদ শরীফ নির্ঘাত জাহান্নামে যাবে।
কেন?
নুরনবী বললেন, তাকে আল্লাহর কাছে যেতে হবে। আল্লাহ তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে যখন দেখবেন চক্ষু নেই, তখন আল্লাহ তাঁকে বলবেন আহমদ শরীফ — তোমার চক্ষু দুটি কই?
আহমদ শরীফ বলবেন: প্রভু, আমি তোমার দুই অন্ধ বান্দাকে আমার দুই চক্ষু দিয়ে এসেছি।
কেন দিলে?
আহমদ শরীফ বলবেন, “তারা দেখতে পাচ্ছিল না তাই। এখন তারা আমার চোখ দিয়ে আপনার দুনিয়ার সৌন্দর্য উপভোগ করছে।” তখন আল্লাহ কী বলবেন জানো?
আমি বললাম, কী বলবে?
হারামজাদা, আমার কারখানায় কি চোখের অভাব ছিল? আমি যাকে চোখ দিইনি, তুমি তাকে চোখ দিতে গেলে কেন? তারা তোমাকে দেওয়া আমার চোখ দিয়ে পাপ কাজ করছে। তুমি খোদাদ্রোহী, আমি সৃষ্টিকর্তার ওপর টক্কর দিতে চেয়েছে; আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করে কবিরাহ গুনাহ করেছ। খোদদ্রোহীর একমাত্র শাস্তি জাহান্নাম — এই কে আছিস, আহমদ শরীফকে জাহান্নামে নিয়ে যা।
আমি বললাম, তুমি যে তোমার ছেলের অসুখ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাও, সেটিও তো তাহলে খোদাদ্রোহী কাজ হয়, নাকি?
জীবন বাঁচানো ফরজ, নুরনবী বলল।