Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
জেনোম্যানিয়া: বিদেশবাতিক, বিদেশপুজো – Dr. Mohammed Amin

জেনোম্যানিয়া: বিদেশবাতিক, বিদেশপুজো

ইংরেজি অভিধানমতে জেনোম্যানিয়া (Xenomania) শব্দের অর্থ: “An extreme passion for foreign things, customs or people.” বাংলায় শব্দটির প্রতিশব্দ হতে পারে— বিদেশবাতিক,

বিদেশপুজো বা বিদেশিপুজো। এর বিপরীত Xenophobia। বিদেশি— দ্রব্য, সংস্কৃতি, আচার-আচরণ, ফ্যাশন; এককথায় বিদেশি যে-কোনো বিষয় বা বস্তুর প্রতি অত্যধিক আকর্ষণকে জেনোম্যানিয়া বা  বলা হয়। ইংলিশ রেকর্ড নির্মাতা গায়ক ব্রেইন থমাস হিগিনস (Brian Thomas Higgins; জন্ম: ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দ) শব্দটির উদ্ভাবক।

ইংলিশ গায়ক হিগিনস ব্রিটেন তথা দেশীয় শিল্পীদের নিয়ে অ্যালবাম বের করতেন। মানসম্পন্ন হলেও তিনি সুবিধা করতে পারছিলেন না।তাঁর প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল জনপ্রিয়তার দিক থেকে অন্তত চল্লিশে অবস্থান। কিন্তু বারবার আশাহত হচ্ছিলেন।

১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অস্ট্রেলিয়ান গায়ক Dannii Minoque-এর সঙ্গে বিদেশি ফ্যাশন, কালচার এবং বিদেশি অঙ্গভঙ্গি সহযোগে একটি অ্যালবাম বের করেন। যা প্রচুর বিক্রি হয়। মধ্যম মানের একজন বিদেশি গায়কের সঙ্গে গান করে এমন উচ্চমানের সাফল্যলাভ হিগিনসকে বিদেশি নাগরিক বিদেশি বিষয়বস্তুর প্রতি আগ্রহী করে তোলে।

হিগিনস ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে মার্কিন গায়ক চের (Cher) এর সঙ্গে যৌথভাবে বিদেশি রং ও বিদেশি ঢঙে আর একটি অ্যালবাম বের করেন। এই অ্যালবামের “All I Wana Do” গানটি তিন বার Ivor Novello পুরস্কার অর্জন করে। হিগিনস দেখতে পেলেন, লন্ডনের অধিকাংশ শ্রোতা বিদেশিবাতিকগ্রস্ত। বিশেষ করে আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার প্রতি তাদের আসক্তি প্রবল। এই দুর্বলতাকে তিনি কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেন। বুদ্ধি করে আমেরিকান সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে আমেরিকান চের-এর সঙ্গে আর একটি অ্যালবাম বের করেন। এই অ্যালবামের ‘Believe’ গানটি ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে লন্ডন রেকর্ড সৃষ্টি করে। হিগিনস রাতারাতি পৃথিবীখ্যাত হয়ে যায়।

বিদেশি গায়ক, বিদেশি সংস্কৃতি এবং বিদেশি রীতিনীতি নিয়ে প্রকাশিত অ্যালবামের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে থমাস হিগিনস ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে লন্ডনের বাইরে ওয়েস্টারহাম (Westerham)-এর কেন্ট এলাকায় জেনোম্যানিয়া নামের একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান খুলেন।এরপর জেনোম্যানিয়া শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে যায়। এই প্রতিষ্ঠানটির অধিকাংশ রেকর্ডই ছিল বিদেশি লোক নিয়ে নির্মিত বিদেশি বস্তু ও বিদেশি রীতিনীতি নির্ভর।

কিছু কিছু লোক এত প্রবলভাবে বিদেশিবাতিকে আক্রান্ত যে, বিদেশি কুকুর দেখলেও প্রেমে পড়ে যায়।নব্বই বয়স্কা বুড়িকেও বিয়ে করে বসে উনিশে যুবক। বিদেশি মলকেও নির্মল ভেবে চুমো খায়। আমাদের দেশে উচ্চপদে ও উচ্চবেতনে অনেক বিদেশি কাজ করে। কেবল বিদেশি- এটাই তাদের ওই পদে ওই বেতন চাকরি করার একমাত্র যোগ্যতা। অথচ দেশের অনেকে এদের চেয়ে দক্ষ ও যোগ্য হলেও কমবেতনে নিম্নপদে ওই বিদেশের অধীনে কাজ করে।

ধনী-গরিব প্রত্যেক দেশে এমন বাতিকগ্রস্তের দেখা মেলে। তবে তুলনামূলকভাবে শিক্ষা-দীক্ষা ও প্রভাব-প্রতিপত্তিতে দুর্বল দেশে এরকম বাতিকগ্রস্ত লোকের সংখ্যা বেশি দেখা যায়। তবে এদের আসক্তি মনোগত। অপেক্ষাকৃত অগ্রসর দেশের প্রতি অনগ্রসর দেশের লোকের এমন বাতিকগ্রস্ততার প্রাবল্য লক্ষণীয়। গরিব দেশের এরূপ বাতিকগ্রস্ত লোকের বেশির ভাগ ধাবিত হয় ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি। ধনী দেশের লোকের এই বাতিক দেখা যায় ফ্যাশন বা সংস্কৃতি ও আচার-আচরণের প্রতি।

জেনোম্যানিয়া: বিদেশবাতিক, বিদেশপুজো