ড. মোহাম্মদ আমীন
প্রচলিত ব্যাকরণবিধির তোয়াক্কা না-করে একটি শব্দ বা তার অংশ বিশেষের সঙ্গে অন্য একটি শব্দের অংশবিশেষ যোগ করে গঠিত নতুন শব্দকে জোড়কলম শব্দ বলে। ইংরেজিতে এমন শব্দকে বলা হয়: portmanteau word সন্ধি, সমাস, প্রত্যয় বা অন্যকোনো ব্যাকরণিক নিয়মে গঠিত শব্দ জোড়কলম শব্দ হবে না।জেড়কলম শব্দ গঠনের একটি সাধারণ রেওয়াজ আছে। যে দুটি শব্দ নিয়ে জোড়কলম শব্দ গঠিত হয়, তার প্রথমটির শেষাংশ এবং দ্বিতীয়টির প্রথমাংশ ছেঁটে ফেলে যা থাকে তা ক্রমানুসারে পাশাপাশি একীভূতকরণের মাধ্যমে জোড়কলম শব্দ তৈরি করা হয়। যেমন: Camera+ Recorder= Camcorder, ধোঁয়া+কুয়াশা= ধোঁয়াশা প্রভৃতি।পদ্ধতিটি অনেকটা গাছের অঙ্গজপ্রজননের জোড়কলম পদ্ধতির মতো।তাই নাম হয়েছে জোড়কলম শব্দ। এর অন্য নাম খিচুড়ি শব্দ।
সুকুমার রায় বাংলায় বাংলা ভাষার ব্যাকরণ না-মেনে শব্দসৃষ্টির এই অপূর্ব কৌশলের পথিকৃৎ। তবে কেবল বাংলায় নয়, বিশ্বের সব প্রধান প্রধান ভাষাসমূহে এভাবে শব্দ গঠিত হয়। প্রায় সব ভাষায় এটি একটি বহুল প্রচলিত এবং জনপ্রিয় ও স্বীকৃত পদ্ধতি। শব্দ সৃষ্টির এই পদ্ধতি অনুসরণ করে বাংলা ইংরেজি মিলে গঠিত হয়েছে:
বাংলা ইংরেজি (বাংলা+ইংরেজি) মিলে বাংরেজি,
বাংলা ইংলিশ (বাংলা+ইংলিশ) মিলে বাংলিশ,
বাংলা আরবি (বাংলা+আরবি) মিলে বাংরবি,
আরবি বাংলা (আরবি+বাংলা) মিলে আরংলা,
আরবি ইংলিশ আরবি+ইংলিশ) মিলে আরলিশ,
বাংলা হিন্দি মিলে (বাংলা+হিন্দি) বাংদি.
চট্টগ্রাম ও ঢাকা (চট্টগ্রাম+ঢাকা) মিলে চট্টকা
বঙ্গভবন ও সচিবালয় মিলে (বঙ্গভবন+সচিবালয়) বঙ্গবালয়
অনুরূপ: ভাশুর(>ভ্রাতৃশ্বশুর), পশুরি (>পাঁচসেরি), ভাজ (>ভ্রাতৃজায়া), আমৈল্যা (আম+ বেল+ইয়া), গুমুট (গুল্ম +উট [আগাছা]), দাঙ্গামা (দাঙ্গা + হাঙ্গামা), জল+রঙ=জল্রঙ, ফাগুন+দিনে=ফাগুন্দিনে, অস্ট্রালেশিয়া, আফ্রোশিয়া ইত্যাদি। সুকুমার রায় তাঁর ‘খিচুড়ি’ নামের ছড়ায় এমন আরও কিছু শব্দ ব্যবহার করেছেন। যেমন- হাতি + তিমি = হাতিমি, সিংহ + হরিণ = সিংহরিণ, বক + কচ্ছপ = বকচ্ছপ, গিরগিটি + টিয়া= গিরগিটিয়া।
অভিধানে ব্যুৎপত্তি-সহ স্থান দিয়েছে। অনুরূপ আরও কিছু জোড়কলম শব্দের উদাহরণ:
“হাঁস ছিল, সজারু, (ব্যাকরণ মানি না),
হয়ে গেলে 'হাঁসজারু' কেমনে তা জানি না।
বক কহে কচ্ছপে-"বাহবা কি ফুর্তি!
অতি খাসা আমাদের বকচ্ছপ মূর্তি।"
টিয়ামুখো গিরগিটি মনে ভারি শঙ্কা-
পোকা ছেড়ে শেষে কিগো খাবে কাঁচা লঙ্কা?
ছাগলের পেটে ছিল না জানি কি ফন্দি,
চাপিল বিছার ঘাড়ে, ধড়ে মুড়ো সন্ধি!
জিরাফের সাধ নাই মাঠে-ঘাটে ঘুরিতে,
ফড়িঙের ঢং ধরি, সেও চায় উড়িতে।
গরু বলে, "আমারেও ধরিল কি ও রোগে?
মোর পিছে লাগে কেন হতভাগা মোরগে?"
হাতিমির দশা দেখ-তিমি ভাবে জলে যাই,
হাতি বলে, "এই বেলা জঙ্গলে চল ভাই"।
সিংহের শিং নেই, এই তার কষ্ট-
হরিণের সাথে মিলে শিং হল পষ্ট।”
breakfast+lunch=brunch
camera+ recorder= camcorder
fantastic+fabulous= fantabulous
smoke+fog=smog
car+hijack= carjack
এগুলোকে বলা হয় blend words.বাংলায় এ ধরণের একটিমাত্র শব্দ পেলাম ‘ধোঁয়া +কুয়াশা=ধোঁয়াশা । এমন আরও শব্দ থাকলে কেউ দয়া করে জানাবেন কি?
উৎস: ড. মোহাম্মদ আমীন, বাংলা ভাষার মজা, পাঞ্জেরী পাবলিকেশণ্স লি।
শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ) প্রমিত বানানবিধি
শুবাচ আধুনিক প্রমিত বাংলা বানান অভিধান
এক মিনিট সময় দিন বানানগুলো শিখে নিন
এই লেখার লিংক: https://draminbd.com/জোড়কলম-শব্দ-বা-খিচুড়ি-শব্/