টাকা উড়ানো/ টাকা ওড়ানো

ড মোহাম্মদ আমীন

টাকা উড়ানো/ টাকা ওড়ানো

“টাকা কি আসলে ওড়ে? বাগধারাটির উদ্ভব হলো কীভাবে?” শুবাচির প্রশ্ন।

অষ্টাদশ শতকের কথা।কলকাতার সিঁদুরিয়াপট্টির এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর এক যুগল হনুমান ছিল। একদিন হনুমানজি তার প্রেয়সীকে ছাদে রেখে

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

গৃহস্বামীর শয়নকক্ষে ঢুকে পড়ে। ঢুকতেই নজরে পড়ে— বেশ যত্ন করে রাখা কালচে রঙের এক পেটিকা ।
হনুমানজি মনে করল এখানে নিশ্চয় অতি সুস্বাদু খাবার রয়েছে। নইলে এত সযত্নে রাখবে কেন? বুদ্ধি করে পেটিকাটি নিয়ে চিলেকোঠার ছিদ্র দিয়ে চিলের ছাদে উঠে প্রেয়সীর কাছে নিয়ে গেল।

দেখো সোনা কী দারুণ খাবার আছে ভেতরে?
পেটিকাটি খুলে তাদের মাথা খারাপ। কোনো খাবার নেই। সব ছোটো ছোটো কাগজ; ফুরফুরে শুকনো। আসলে কাগজগুলো ছিল সব একশ টাকার নোট। হনুমান কি আর টাকা চেনে? শুকনো কাগজ দিয়ে কী করবে তারা?
রাগে গজগজ করতে করতে হনুমান যুগল অবজ্ঞাভরে কাগজগুলো উড়ানো শুরু করে বাতাসে। আকাশে টাকা দেখে কলকাতাবাসী হুমড়ি খেয়ে পড়ে।কিন্তু কে টাকা উড়াচ্ছে তা কেউ দেখতে পাচ্ছে না, দেখার ইচ্ছাও নেই। টাকা ধরতে হবে আগে।
হনুমান দম্পতির মজাই লাগছিল মানুষের কাণ্ড। একটা কাগজ উড়ানোর কিছুক্ষণ পর আর একটা ছাড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যে মানুষে-মানুষে হুড়োহুড়ি, ঠ্যালাঠ্যেলি, কাড়াকাড়ি্ এবং ভিড়াভিড়ি এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশ বাহিনী অনিবার্য হয়ে পড়ে। পুলিশ এল। আকাশে টাকা উড়ছে দেখে তারাও লোভ সংবরণ করতে পারল না। কয়েক জন পুলিশও ব্যস্ত হয়ে পড়ে উড়ন্ত টাকা ধরার ছুটন্ত কাজে। মানুষের কাণ্ড দেখে আর হনুমান দম্পতি হাসে।
সিঁদুরিয়াপট্টিতে টাকা উড়ানোর কথা লোকেমুখে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সারা কলকাতা এবং কলকাতা হতে পুরো বঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে।
মানুষের মধ্যেও অনেকে সিঁদুরিয়াপট্টির হনুমানের মতো কাজ করে। তাই টাকা উড়ানো কথাটি হুনুমান ছেড়ে মানুষের জন্য বাগ্‌ধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায়। বাগ্‌ধারা হিসেবে টাকা উড়ানো কথার অর্থ— (ক্রিয়ায়) অপব্যয় করা, অযথা ব্যয় করা, অপচয় করা, অপ্রয়োজনে ব্যয় করা, খরচ আবশ্যক নয় তবু খরচ করা।
Language
error: Content is protected !!