ড. মোহাম্মদ আমীন
‘টিকটিকি’ সরীসৃপ জাতীয় একটি ক্ষুদে নীরিহ প্রাণী। এদের চারটি এবং পায়ের আঙুলগুলো এতই দক্ষ যে, যে কোনো মসৃণ দেওয়াল বেয়ে ওঠতে পারে। এটি সাধারণত ঘরের দেওয়ালে থাকে এবং তার আয়তনের চেয়ে ছোট পোকামাকড় মনের আনন্দে ধরে ধরে খায়। টিকটিকি বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। প্রাণীটি ক্ষতিকর নয় এবং এর মল গন্ধহীন বলে গৃহবাসী মানুষ এটাকে তেমন অবাঞ্চিত মনে করে না।
আমাদের বহুল পরিচিত ‘টিকটিকি’র সংস্কৃত নাম গৃহগোধিকা। ‘গৃহ’ মানে ঘর এবং ‘গোধিকা’ মানে গুইসাপ। সুতরাং ‘গৃহগোধিকা’

শব্দের অর্থ হচ্ছে ঘরে থাকা গুইসাপ। আসলেই টিকটিকি দেখতে অনেকটা গুইসাপের মতো। তাই সংস্কৃতে প্রাণিটার নাম গৃহগোধিকা।
‘টিকটিক’ এর সঙ্গে ‘ই’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে বাংলায় ‘টিকটিকি’ শব্দটি গঠিত হয়েছে। তো বাংলায় কেন প্রাণীটার নাম ‘টিকটিকি’ হলো? প্রাণীটা ‘টিক টিক’ শব্দে ডাকে। তাই এর নাম ‘টিকটিকি’। টিকটিকি নিয়ে বেশ মজার একটি খনার বচন আছে।
“হাঁচি টিকটিকি বাধা
যে মানে না সে গাধা।”
‘টিকটিকি’ শব্দের আর একটি অর্থ আছে এবং সেটি ইংরেজি detective শব্দের প্রতিশব্দ। এ ‘টিকটিকি’ অর্থ ‘গুপ্তপুলিশ’ বা ‘গোয়েন্দা’। টিকটিকি যেমন তার শিকারীর কর্মকাণ্ড নীরবে-নিঃশব্দে পর্যবেক্ষণ করে আকস্মিক তৎপরতায় দ্রুতগতিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে শিকারকে ধরে ফেলে, তেমনি ডিটেকটিভ বা গোয়েন্দারাও অপরাধীর কর্মকাণ্ড নিঃশব্দে-নীরবে অনুসন্ধান করে অপরাধীকে পালানোর কোনো সুযোগ না-দিয়ে ধরে ফেলে। এজন্য বাংলা ভাষায় গোয়েন্দার আর এক নাম ‘টিকটিকি’।
‘যে ত্রিকোণাকার কাষ্ঠদণ্ডে বেঁধে ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্তকে বেত মারা হয়” তাকেও ‘টিকটিকি’ বলা হয়। এ ত্রিকোণাকার বস্তুটির ‘টিকটিকি’ নামের সার্থকতা কাজী নজরুল ইসলামের “তুমি টিকটিকি জানি ঠিক ঠিকই” বাক্যে পাওয়া যায়। কোনো মারাত্মক অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির মুখ থেকে ‘ঠিক কথা’ বের করার জন্য বেত মারা হয়। অপরাধীকে সাধারণত ‘টিকটিকি’ বা ‘গুপ্তপুলিশ’ ত্রিকোণাকার কাষ্ঠে বেঁধে বেত্রাঘাত করত এবং বলত,“ঠিকঠিকই বলো”। আঘাতে আঘাতে জর্জরিত অভিযুক্ত ঠিক কথা বলুক বা না বলুক ‘টিকটিকির’ মারের চোটে জড়িত গলায় বলেই যেত “ঠিকটিকই — টিকটিকি— টিকটিকি’। এভাবে অভিযুক্তকে বেত্রাঘাতের নিমিত্ত তৈরি ত্রিকোণাকার বস্তুটির নাম হয়ে যায় ‘টিকটিকি’।
কি না বনাম কিনা এবং না কি বনাম নাকি