ড. মোহাম্মদ আমীনের রায়োহরণ
ড. হায়াৎ মামুদ
রায়োহরণ একটি উপন্যাস এবং লেখক ড. মোহাম্মদ আমীন। প্রথমে বলে রাখি, বইটি পড়লে আপনি অভিভূত না-হয়ে পারবেন না। পারবেন না এই জন্যই যে— এখানে আছে আপনার কথা আমার আর আমাদের সবার কথা। একটি উপন্যাসের চরিত্রে সাত জন
নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর আনোগোনা এবং কথোপকথন থাকলে তা অভিভূত করার মতোই বই, বই-কি। সংলাপ ও চরিত্রস্বরূপতার কারণে এটি দার্শনিক বিশ্লেষণ বিবৃত একটি বহুমাত্রিক উপন্যাসে পরিণত হয়েছে। এখানে প্রেম-দ্রোহ, আদর-ঘৃণা, ফুল-রক্ত, জাতি-আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল এবং প্রাত্যহিক জীবনের খুঁটিনাটি দিকগুলো ভালোবাসা, অভিমান, জয়পরাজয় আর প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির বিদগ্ধ রম্যতা ও নিকষ বাস্তবতার সমাহিত সৌকর্ষে তুলে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। জামাল নজরুল ইসলাম, স্টিভেন হকিং, অমর্ত্য সেন, অমিয় চক্রবর্তী, মাসাহিতো, সুসানা ইয়োগানা, রচনা, পিসি রায়, প্রমিতা, মাদার মারিয়া, দার্শনিক চিকুচি, লুসি, রবার্ট, অমিয় বাগচী, জয়ন্ত নারলিকর, আবদুস সালাম, ওয়েনবার্গ, জোসেফসন, ফ্রিম্যান ডাইসন, রিচার্ড ফাইনম্যান, সুব্রহ্মনিয়াম চন্দ্রশেখর, জিম মার্লিস, রজার পেনরোজ, জ্যা অ্যান্দুজ, মার্টিন রিজ, লুইজ জনসন, হোয়েল, জ্যাজ ওয়ান, জন টেইলর, সৈয়দ আবুল হোসেন, লেনভেল ভ্যালেসিয়ান, হারুটিউনিয়ান, কামাল সিদ্দিকী, ড. আনিসুজ্জামান, তসলিমা নাসরিন, বৎশিবা প্রমুখ বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ এই উপন্যাসের চরিত্র— ঠিক যেমনটি দেখা গিয়েছিল ‘অর্হণা’ উপন্যাসে। গ্রন্থের এসব চরিত্র এবং কথোপকথন বিবেচনায় ‘সন্মিত্রা’ অসাধারণ হয়ে উঠেছে। উপন্যাসাটি পড়া শুরু করলে আপনি নিমিষে পরিচিত ও খ্যাতিমান ব্যক্তিদের মাঝে হারিয়ে যাবেন। হারিয়ে যাবেন ক্ষুদ্র থেকে বিশ্বায়নে— খুলে যাবে বিশাল এক অজানা অধ্যায় অবলোকনের বদ্ধ জানালা।

রায়োহরণ অর্থ কী?
রায়োহরণ শব্দের অর্থ জানার জন্য ‘রায়োহরণ’ উপন্যাসের একটা সংলাপ দিলাম :
“ফারহিদা : হাঁটার সময় জৈন সন্ন্যাসী-সন্ন্যাসীনীদের হাতে ঝাঁটার মতো একটি জিনিস দেখা যায়। এটা কী?
অতিবীর : রায়োহরণ। এর মাধ্যমে তাঁরা রাস্তা ঝাঁট দিয়ে দিয়ে অগ্রসর হন। বসার আগে বসার জায়গাটিও ঝাঁট দিয়ে নেন। তবে পরিষ্কার করার জন্য নয়।
মাসুদ : কেন?
: যাতে কোনো কীটপতঙ্গ তাঁদের পায়ের চাপে মারা না যায়।”
রায়োহরণ শব্দের অর্থ জানার জন্য ‘রায়োহরণ’ উপন্যাসের একটা সংলাপ দিলাম :
“ফারহিদা : হাঁটার সময় জৈন সন্ন্যাসী-সন্ন্যাসীনীদের হাতে ঝাঁটার মতো একটি জিনিস দেখা যায়। এটা কী?
অতিবীর : রায়োহরণ। এর মাধ্যমে তাঁরা রাস্তা ঝাঁট দিয়ে দিয়ে অগ্রসর হন। বসার আগে বসার জায়গাটিও ঝাঁট দিয়ে নেন। তবে পরিষ্কার করার জন্য নয়।
মাসুদ : কেন?
: যাতে কোনো কীটপতঙ্গ তাঁদের পায়ের চাপে মারা না যায়।”
ধর্মানুসারীর সংখ্যা বিবেচনায় মুসলিম পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সম্প্রদায়। বৈশ্বিক বিবেচনায় এক সময়ের প্রভাবশালী মুসলিম সম্প্রদায় বর্তমানে কেন এবং কী কারণে প্রায় প্রভাবহীন সম্প্রদায়ে পরিণত হয়েছে— তার স্বরূপ বিশ্লেষণ এবং উত্তরণের উপায়-নির্দেশ এই উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু। অনৈক্য একটি সম্প্রদায়কে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে- তার নির্যাস পাওয়া যাবে উপন্যাসটিতে। এই উপন্যাসের চরিত্রসমূহের অধিকাংশই আমাদের জানাশোনা এবং প্রায় প্রত্যেকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় কৃতিত্বের অধিকারী। তাঁদের মতামত উপন্যাসটিকে ইতিহাসে উন্নীত করেছে। বিশ্বে আর্থ-রাজনীতিক ও ধর্মীয় কারণে সংঘটিত ঘটনাবলিকে উপজীব্য করে রচিত এই উপন্যাসটি পাঠ করলে মুসলিম সম্প্রদায়ের অতীত ও বর্তমান অবস্থা, অন্যান্য ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক, মুসলিম সম্প্রদায়ের আন্তক্রৈয়িক, সামষ্টিক ও রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের সার্বিক চিত্র এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর দৃষ্টিভঙ্গি ও তার প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে। অধিকন্তু, জানা যাবে— বিশ্বে মুসলিম সম্প্রদায়ের বর্তমান অবস্থা এবং বৌদ্ধিক ও কৌশলগত অবস্থান আর তার সম্ভাব্য পরিণতি এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর তুলনায় তাদের অবস্থান। কেন তাদের এমন অবস্থা এবং কী করে তা থেকে উদ্ধার পাওয়া যাবে তাও উপন্যাসটিতে বর্ণিত হয়েছে। উপন্যাসটি মূলত মুসলিম সম্প্রদায়ের ক্রান্তিকালকে তুলে ধরে তা থেকে উত্তরণের একটি প্রাণবন্ত ইশতাহার।
বাস্তবতার মাঝে কিছু কল্পনার মসলা দিয়ে বহুমুখী অভিধায় সজ্জিত বইটি একবার পড়–ন, তারপর বুঝতে পারবেন, ইতিহাসের চেয়েও কত বাস্তব হতে পারে উপন্যাস, ঘটনার চেয়েও কত প্রাঞ্জল হতে পরে বর্ণনা, অনুভূতির চেয়ে কত সরস হতে পারে লেখা এবং
প্রেমের চেয়েও কত মুগ্ধকর হতে পারে চরিত্ররাজির আহ্বান। স্যমন্তক সিরিজের তৃতীয় ও শেষ উপন্যাস সন্মিত্রা আপনার চিন্তাকে নাড়া দিতে সক্ষম হবে- এটি আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি। এমন একটি বৈশ্বিক চরিত্র-সজ্জিত উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের উপন্যাস ভা-ারকে সমৃদ্ধ করবে- নিঃসন্দেহে। উপন্যাসটির একটি অনুচ্ছেদ দেখুন, তাহলে বুঝবেন বইটির অন্তর্নিহিত বিষয়বস্তু:

“শরীরের ক্ষুদ্রাতক্ষিুদ্র একটি কোষ অসুস্থ হলে পুরো শরীরকে অসুস্থতার দায় নিতে হয়। পুরো মুসলিম সম্প্রদায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত নয় তবু দায়ী করা হচ্ছে তাদের, দায় নিতে হচ্ছে। এর চেয়ে কঠিন পরাজয় আর কী হতে পারে? তুমি দোষ করেছ কি না সেটা বিষয় নয়, তুমি অপরাধী বিবেচিত হচ্ছ এটাই বিষয়। তোমার মনে কী আছে সেটি বিষয় নয়, আসল বিষয় হচ্ছে তোমার নামে কী প্রচারিত হচ্ছে সেটি। আইএস, তালেবান প্রভৃতি সন্ত্রাসী গ্রুপের বিরুদ্ধে মুসলিম সম্প্রদায়ের যেভাবে সোচ্চার হওয়ার প্রয়োজন, তা হচ্ছে না। বরং কোনো না কোনো পক্ষ থেকে তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।”
—————————————————————————————————————————————
উপন্যাসটির প্রকাশক ওসমান গণি, আগামী প্রকাশনী, বাংলাবাজার, ঢাকা। মোবাইল: ০১৯১৯-২১৯০২৪
————————————————————————————————————————————-