ঢাকার ইতিবৃত্ত প্রথম ও প্রধান/২

ঢাকার প্রথম পত্রিকা, থিয়েটার, নাটক, যাত্রা
ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রথম বাংলা সংবাদপত্র ঢাকা প্রকাশ। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় উর্দু সংবাদপত্র আল মাশরিক। ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত হয় ঢাকার প্রথম বিজ্ঞান পত্রিকা ভিষক। ঢাকার প্রথম থিয়েটার পূর্ববঙ্গ রঙ্গভূমি। ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দের এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। দীনবন্ধু মিত্রের নীল দর্পণ ঢাকায় প্রদর্শিত প্রথম নাটক।’সীতার বনবাস’ যাত্রাপালাটি ঢাকায় প্রদর্শিত প্রথম যাত্রা।

বায়োস্কোপ/ সিনেমা হল এবং বাণিজ্যিক ব্যাংক
১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে নবাব আহসানউল্লাহ কলকাতা থেকে বায়োস্কোপ এনে পরিবার ও ঢাকাবাসীকে দেখানোর ব্যবস্থা করেন। ঢাকার পিকচার হাউস নাট্যমঞ্চটি (শাবিস্তান হল) ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে সিনেমা হলে রূপান্তরিত হয়। এটিই ঢাকার প্রথম সিনেমা হল। ঢাকার প্রথম বাণিজ্যিক ব্যাংক ছিল ঢাকা ব্যাংক।

ঢাকার প্রথম ডক্টরেট-পিএইচডি/ প্রথম মুসলিম গ্র্যাজুয়েট
নিশিকান্ত চট্টোপাধ্যায় বাংলার যাত্রাপালা নিয়ে গবেষণা করে সুইজারল্যান্ড থেকে প্রথম ঢাকাবাসী হিসেবে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। আদিনাথ সেনের মতে, ঢাকার প্রথম মুসলমান গ্র্যাজুয়েট খাজা মুহম্মদ আসগর।

নারী চিত্রশিল্পী, ঢাকার প্রথম চলচ্চিত্র ঢাকার প্রথম পুর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র
ঢাকার নবাব পরিবারের মেয়ে মেহেরবানু খানম ঢাকার প্রথম নারী চিত্রশিল্পী। ঢাকার নবাব পরিবারের যুবক খাজা আদিল ও খাজা আজমল ঢাকার প্রথম ছবি সুকুমারী নির্মাণ করেন। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত ঢাকার প্রথম পূর্ণাঙ্গ নির্বাক চলচ্চিত্র দি লাস্ট কিস।

ঢাকার প্রথম জজ ও প্রথম ম্যাজিস্ট্রেট এবং প্রথম চেয়ারম্যান
মি. ডে ঢাকার প্রথম ম্যাজিস্ট্রেট। ১৭৭৮ খ্রিষ্টাব্দে মি. ডানকানসান ঢাকার প্রথম জজ নিযুক্ত হন। জনগণের ভোটে নির্বাচিত ঢাকার প্রথম চেয়ারম্যান আনন্দ চন্দ্র রায়। ঢাকার প্রথম নায়েব নাজিম মুহম্মদ আলী খান।

ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও পাবলিক মার্কেট
ঢাকার নবাব পরিবারের খাজা নাজিমউদ্দিন ও খাজা শাহাবউদ্দিন ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ শে শেমার্চ ঢাকায় প্রথম ডিপার্টমেন্টাল স্টোর খোলেন। ঢাকা পৌরসভার চেয়ারম্যান নবাব ইউসুফজান ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই এপ্রিল ঢাকায় প্রথম পাবলিক মার্কেট প্রতিষ্ঠা করেন।

খেলাফত কমিটির অধিবেশন
নবাব সলিমুল্লার জ্যেষ্ঠপুত্র খাজা হাবিবুল্লাহর উদ্যোগে ডিসেম্বর ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে আহসান মঞ্জিলে ঢাকা খেলাফত কমিটির প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

ব্যালট পেপারে নির্বাচন
১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ শে সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে ঢাকায় প্রথম ব্যালট পেপার ব্যবহৃত হয়।

ঘোড়াগাড়ি, মোটর গাড়ি ও পাকা রাস্তা নির্মাণ
আরমেনিয়ান জিএম সিরকোর ঢাকায় প্রথম ঘোড়ার গাড়ি প্রবর্তন করেন। তখন এটি ঠিকাগাড়ি নামে পরিচিতি পায়। ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে নবাব সলিমুল্লাহ ঢাকায় প্রথম মোটরগাড়ি চালু করেন। যুবরাজ মুহম্মদ আজম ১৬৭৮ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় প্রথম পাকা রাস্তা নির্মাণ করেন।

জেনারেটরে বৈদ্যুতিক বাতি
নিউইয়র্ক শহরে ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্যুৎ আসার ১৯ বছর এবং লন্ডনে বিদ্যুতের ব্যবহার শুরু হওয়ার ১৩ বছর পর ঢাকা শহরে বিদ্যুতের ব্যবহার শুরু হয়।

সড়কে কেরোসিন বাতির ব্যবহার
বাংলাদেশে বাতি ব্যবহারের কার্যক্রম শুরু হয় ১৮৬৯ খ্রিষ্টাব্দে। ঢাকার তৎকালীন সিভিল সার্জন ড. হেনরি কাটক্লিফ ঢাকার স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে সড়ক বাতির জন্য গ্যাস লাইটের পরিবর্তে কেরোসিন তেলের বাতি স্থাপনের প্রস্তাব করেন। ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে খাজা আব্দুল গনি ঢাকায় একটি গ্যাস লাইটের ফ্যাক্টরি স্থাপন করেন। ১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা শহরে ১০০ টি ল্যামপোস্ট স্থাপনের জন্য নাগরিক কমিটি কর্তৃক ৬৫০০ রুপি প্রদান করা হয়। এ টাকা দিয়ে ওয়াইজঘাট থেকে চকবাজার পর্যন্ত ৬০ টি কেরোসিন বাতির ল্যামপোস্ট স্থাপন করা হয়।

বৈদ্যুতিক বাল্ব আবিষ্কার এবং আহসান উল্লাহ নাইট কমান্ডার স্টার
১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে টমাস আলভা এডিসন স্বচ্ছ বৈদ্যুতিক বাল্ব আবিষ্কার করেন। ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দের খাজা আব্দুল গনির পুত্র খাজা আহসানউল্লাহ প্রত্যেকটি ঘর বৈদ্যুতিক বাতির আলোয় আলোকিত করার প্রতিশ্রুতি দিলে সরকার তাকে উৎসাহিত করার জন্য নাইট কমান্ডার অব স্টার উপাধিতে ভূষিত করে। ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে লর্ড ডাফারিন গ্যাস বাল্ব স্থাপনের উদ্দেশ্যে ঢাকায় আসেন। ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা মিউনিসিপালকে কেরোসিনের বাতি সরিয়ে গ্যাস লাইট স্থাপনের পরামর্শ দেওয়া হয়, কিন্তু কোনো কারণে তা সম্ভব না হওয়ায় নবাব বাহাদুর তার প্রতিশ্রুতি রাখতে ব্যর্থ হন। তারপর ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে তার দুলাভাই নবাব খাজা ইউসুফ জান ঢাকা মিউনিসিপালের চেয়ারম্যান হওয়ায় সে সমস্যা সমাধানের পথ খুলে যায়।

ঢাকার রাস্তায় প্রথম বৈদ্যুতিক বাতি
১৯০১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই ডিসেম্বর ঢাকা তথা বাংলাদেশে প্রথম বিদ্যুতের ব্যবহার শুরু হয়। এ লক্ষ্যে খাজা আহসানউল্লাহ ৪,৫০,০০০ রুপি দান করেছিলেন। ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই ডিসেম্বর ঢাকার রাস্তায় প্রথম বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলে উঠে। নবাব আহসান উল্লাহর আমন্ত্রণে ঢাকায় আগত ছোট লাটের সেক্রেটারি বোলটন, আহসান মঞ্জিলে বিকাল ৫টায় সুইচ টিপে ব্যক্তিগত জেনারেটর চালুর মাধ্যমে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালান। এই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য “দি ঢাকা ইলেকট্রিক ট্রাস্টিস” পরিষদ গঠন করা হয়।

রিক্সা
১৯৩৬-৩৭ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার মৌলভীবাজারের দুই জন ব্যবসায়ী, ব্যবসায়িক উদ্দেশে কলকাতার চন্দননগর থেকে ১৮০ টাকায় ঢাকায় দুটি রিক্সা আমদানি করে ঢাকায় প্রথম রিকশা চালু করেন।

ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অব বেঙ্গল
১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় “ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অব বেঙ্গল” প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে ব্রিটিশ ভারতে প্রথমবারের মতো ফটোগ্রাফির প্রবর্তন হয়। ১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা একটি ক্যামেরার অধিকারী হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ১৮৪৪ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে এফএম মন্টারিও কলকাতায় একটি পেশাদারি ফটোগ্রাফিক স্টুডিও খোলেন এবং ছয় বছর পর ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অব বেঙ্গল প্রতিষ্ঠিত হয়

প্রথম ছবি তোলা ও ছবি তোলার দোকান
১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় প্রথম ফটোগ্রাফির মাধ্যমে ছবি তোলা হয়। ১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যভাগে ঢাকার কিছু উদ্যমী ফটোগ্রাফি প্রচলনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। জনৈক গোপীনাথ দত্ত মিটফোর্ড হাসপাতালের কাছে ভগীরথ সাহার বাসভবনে একটি দোকান খোলেন। সেখানে ছবি বাঁধাইয়ের কাঠের তৈরি ফ্রেম বিক্রি হতো। ১৯ শতকের শেষদিকে নবাব খাজা আহসানুল্লহ (১৮৪৬-১৯০১) এবং তাঁর পুত্র নবাব খাজা সলিমুল্লহ (১৮৭১-১৯১৫)-র পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকায় ফটোগ্রাফি বিকশিত হয়। খাজা আহসানুল্লাহ ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতাভিত্তিক “ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অব ইন্ডিয়া”য় যোগদান করেন।

ঢাকার প্রথম ফটোগ্রাফিক স্টুটিও
ঢাকায় ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দের ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ১৬ নম্বর নবাবপুর রোডে “আরসি দাস অ্যান্ড সন্স” নামে প্রথম ফটোগ্রাফিক স্টুডিও প্রতিষ্ঠিত হয়। ইস্ট পাকিস্তান ফটোগ্রাফিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

বেতার কেন্দ্র
১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই ডিসেম্বর নাজিমউদ্দিন রোডে, খান বাহাদুর নাজির উদ্দিন সাহেবের ভাড়া বাড়িতে দুটি স্টুডিও নিয়ে অল ইন্ডিয়া রেডিও ঢাকার বেতার সম্প্রচার শুরু করা হয়। পরে এটি শাহবাগে স্থানান্তর করা হয়।

ঢাকার প্রথম আধুনিক হাসপাতাল এবং ঢাকার প্রথম হাসপাতাল
মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত প্রথম আধুনিক হাসপাতাল। ঢাকার কালেক্টর এবং প্রাদেশিক আপিল বিভাগের জজ স্যার রবার্ট মিটফোর্ডের নামানুসারে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। স্যার মিটফোর্ডের সময় মহামারী আকারে ভয়াবহ কলেরা দেখা দেয় এবং ঢাকায় দৈনিক ১৫০ থেকে ২০০ জন মারা যাচ্ছিল। মিটফোর্ড জনগণের এই দুর্দশা দেখে মর্মাহত হন এবং ১৮৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ইংল্যান্ডে মৃত্যুর আগে তাঁর সম্পত্তির বেশির ভাগই; প্রায় ৮,০০,০০০ টাকা, ঢাকার জনসাধারণের কল্যাণমূলক কাজ এবং একটি হাসপাতাল ভবন নির্মাণের জন্য বাংলার সরকারের নামে উইল করে দেন। এই উইল তাঁর উত্তরাধিকারীদের দ্বারা বিতর্কিত হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে সুপ্রিম কোর্ট বাংলার সরকারের পক্ষে আংশিক রায় দেন। যার সুবাদে ১,৬৬,০০০ টাকা পাওয়া যায়। এই অর্থে বর্তমান স্থানে ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে হাসপাতাল নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তখন এই স্থানটি ‘কাটরা পাকুড়তলী’, বাবুবাজার নামে পরিচিত ছিল। পূর্বে এই জায়গায় ওলন্দাজ কুঠি ছিল। কলকাতার দেশীয় হাসপাতালের শাখা হিসেবে ১৮০৩ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় প্রথম হাসপাতাল স্থাপিত হয়।

দেখুন:  ঢাকার প্রথম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ

ঢাকা পৌরসভা থেকে সিটি কর্পোরেশন

ঢাকার প্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠার

বিসিএস প্রিলিমিনারি থেকে ভাইভা কৃতকার্য কৌশল

Language
error: Content is protected !!