ঢাকার প্রথম বিদ্যালয়
১৮১৬ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে ছোট কাটরায় স্থাপিত লিওনার্দোর স্কুলটি ঢাকার প্রথম বিদ্যালয়। ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই জুলাই প্রতিষ্ঠিত “কলেজিয়েট স্কুল” ঢাকার প্রথম সরকারি বিদ্যালয়। ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ব্রাহ্মসমাজের উদ্যোগে ফরাশগঞ্জের একটি বাড়িতে মাত্র দুজন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে ঢাকার প্রথম বালিকা বিদ্যালয়।
ঢাকার প্রথম বিদ্যালয়
ঢাকার প্রথম বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব ব্যাপটিস্ট মিশনারি ওয়েন লিওনার্দোর। তিনি ১৮১৫ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় আসেন এবং ১৮১৬ খ্রিষ্টাব্দে একক প্রচেষ্টায় মূলত খ্রিষ্টান শিশুদের জন্য স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। এটিই ঢাকা নগরীতে প্রতিষ্ঠিত আধুনিক শিক্ষা প্রদানের জন্য প্রতিষ্ঠিত প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
ঢাকার প্রথম সরকারি কলেজ
১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই জুলাই রবিবার উপমহাদেশের প্রথম আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবের ঢাকার প্রথম কলেজ “ঢাকা কলেজ” প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ২০ শে এপ্রিল জেনারেল কমিটি অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন লর্ড বেন্টিঙ্কের নিকট বাংলা প্রেসিডেন্সির প্রধান প্রধান জনবহুল শহরে ইংরেজি সাহিত্য এবং বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য যতগুলো সম্ভব বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব করেন। এই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. জেমস টেইলারের কাছে প্রতিবেদন চাওয়া হয়। তাঁর অত্যন্ত অনুকূল প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ জুলাই থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয় “ঢাকা ইংলিশ সেমিনারি স্কুল”, যা বর্তমানে “ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল” নামে পরিচিত। পরবর্তীকালে গভর্নর জেনারেল লর্ড অকল্যান্ড এবং জেনারেল কমিটি অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন (এবহবৎধষ ঈড়সসরঃঃবব ড়ভ চঁনষরপ ওহংঃৎঁপঃরড়হ) কতগুলো কেন্দ্রীয় কলেজ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেন। তৎপরিপ্রেক্ষিতে ১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দে “ঢাকা ইংলিশ সেমিনারি স্কুল”কে একটি কলেজে বা একটি আঞ্চলিক উচ্চতর ইংরেজি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করা হয়, যার নাম দেয়া হয় ঢাকা সেন্ট্রাল কলেজ বা সংক্ষেপে ঢাকা কলেজ এবং ঢাকা ইংলিশ সেমিনারি স্কুলের নাম দেওয়া হয় “ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল”। ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং হিন্দু কলেজের শিক্ষক জে. আয়ারল্যান্ডকে ঢাকা কলেজের প্রথম প্রিন্সিপাল নিযুক্ত করা হয়।
ঢাকার প্রথম নৈশ কলেজ
১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে বকশিবাজারে স্থাপিত নাইট কলেজ ঢাকার প্রথম নৈশ কলেজ। এটি বর্তমানে ফার্মগেটে স্থানান্তরিত তেজগাঁও কলেজ।
ঢাকার প্রথম বেসরকারি কলেজ
জগন্নাথ কলেজ ঢাকার প্রথম বেসরকারি কলেজ। মানিকগঞ্জ জেলার বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল চৌধুরী ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর পিতার নামে ঢাকায় জগন্নাথ স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা জুলাই “জগন্নাথ স্কুল” জগন্নাথ কলেজে উন্নীত হয়। শ্রীকুঞ্জ লাল নাগ (১৮৮৪-১৮৯৫) ছিলেন জগন্নাথ কলেজের প্রথম প্রিন্সিপাল। ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দের ১লা মার্চ একটি দলিলের মাধ্যমে ট্রাস্টি বোর্ডের হাতে কলেজের ভার অর্পণ করা হয়। কিশোরীলাল রায় চৌধুরী, রায়চন্দ্র কুমার দত্ত বাহাদুর ও আনন্দচন্দ্র রায় ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হন। কিশোরীলাল রায় চৌধুরীর মৃত্যুর পর ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ শে আগস্ট সম্পাদিত নতুন দলিল অনুযায়ী পুনরায় ট্রাস্টি বোর্ড গঠিত হয়। এ সময় ঢাকার কমিশনার স্যার রবার্ট নাথানের প্রচেষ্টায় আশি হাজার টাকার অনুদান পাওয়া যায়। জগন্নাথ কলেজের শুরুতে ছাত্র ছিল ৪৮। ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে ছাত্রের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫০০। সে সময় এই কলেজে আইএ, আইএসসি ও বিএ (পাস) ছাড়াও ইংরেজি, দর্শন ও সংস্কৃত বিষয়ে অনার্স এবং ইংরেজিতে এমএ পড়ানো হতো। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় সংসদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হলে জগন্নাথ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজির প্রফেসর ড সিরাজুল ইসলাম খান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে যোগদান করেন।
ঢাকার প্রথম সরকারি বিদ্যালয়
১৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই জুলাই ইংরেজি বিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ‘ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল’ ঢাকার এবং বর্তমান বাংলাদেশের প্রথম সরকারি বিদ্যালয়। এ স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন রেডগে নামক এক ইংরেজ মিশনারি। ১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দে এই স্কুল প্রাঙ্গনে ঢাকা কলেজের ভিত্তি স্থাপন করা হয়। তবে পঞ্চাশের দশকে ঢাকা কলেজ বর্তমান অবস্থানে চলে আসে। নবাব আবদুল লতিফ খান বাহাদুর, সিআইই নবাব হওয়ার আগে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। এ স্কুলের অবস্থান বুড়িগঙ্গা নদীর অদূরে আহসান মঞ্জিল, বাহাদুর শাহ পার্ক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সদর ডাকঘর, বাংলাবাজার, সদরঘাট প্রভৃতির মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত।
ঢাকার প্রথম কারিগরি শিক্ষালয়
১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দে সরকার ঢাকা সার্ভে স্কুল নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। এটি ঢাকার প্রথম কারিগর শিক্ষালয়। ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে খাজা আহসানউল্লাহ এ প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ১.১২ লাখ টাকা দান করেন। ফলে এটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ইঞ্জিনিয়াারিং শিক্ষালয় হিসেবে প্রসার লাভ করে এবং ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে নামকরণ করা হয় আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের কাছে এর নিজস্ব ভবন নির্মিত হয়। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে এটি বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত হয়। মি. এন্ডারসন এর প্রথম অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের অগাস্ট মাসে প্রতিষ্ঠানটিকে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ উন্নীত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ হিসেবে কার্যক্রম শুরু করা হয়। জনাব হাকিম আলী এর অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের ১লা জুন এটি একটি পূর্ণাঙ্গ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করে নাম রাখা হয় “পূর্বপাকিস্তান প্রকৌশল ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়”। তৎকালীন কারিগরি শিক্ষা পরিচালক ড. এম. এ. রশিদ প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর নিযুক্ত হন। অধ্যাপক এ এম আহমেদ প্রকৌশল অনুষদের প্রথম ডিন, গণিতজ্ঞ এম এ জব্বার প্রথম রেজিস্ট্রার ও মমতাজউদ্দিন আহমেদ প্রথম কম্পট্রোলার নিযুক্ত হন।
ঢাকা মাদ্রাসা
ঢাকা মাদ্রাসা বা মোহসিনীয়া মাদ্রাসা মাদ্রাসা ঢাকার প্রথম মাদ্রাসা। এটি বেঙ্গল সরকারের ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর জর্জ ক্যাম্পবেলের সময় মাদ্রাসা সংস্কার কমিটির অনুমোদনক্রমে ঢাকায় আলিয়া মাদ্রাসার একটি শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। হাজী মুহম্মদ মোহসীন ফান্ডের আর্থিক সহযোগিতায় মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয় বলে এর নামকরণ করা মোহসিনীয়া মাদ্রাসা। তবে এটি ঢাকা মাদ্রাসা নামেই সমধিক পরিচিতি। এ মাদ্রাসার প্রথম সুপারিনটেন্ডেন্ট ছিলেন বাহরুল উলুম মাওলানা ওবায়দুল্লাহ আল ওবায়দী সোহরাওয়ার্দী। মওলানা ওবায়দুল্লাহ ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই মার্চ ঢাকার পাটুয়াটুলীতে একটি ভাড়া বাড়িতে মাদ্রাসা, হোস্টেল এবং নিজের বাসস্থানের ব্যবস্থা করে মাদ্রাাসার কার্যক্রম শুরু করেন। পরে তিনি রায় সাহেব বাজারে তিনতলা আরেকটি বাড়ি ভাড়া করে মাদ্রাসা স্থানান্তর করেন। প্রথম বছরে মাদ্রাসার ছাত্রসংখ্যা ছিল ১৬৯। নওয়াব খাজা আবদুল গণি মাদ্রাসার জমি কেনার জন্য সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা দান করেন। এ অর্থ দিয়ে বর্তমান বাহাদুর শাহ পার্কের পাশে মাদ্রাসার নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য দুই একর চল্লিশ শতাংশ জমি ক্রয় করা হয়। মাওলানা ওবায়দুল্লাহর তত্ত্বাবধানে মুসলিম স্থাপত্য রীতি অনুযায়ী মাদ্রাসা ভবন নির্মাণ করা হয়। মাদ্রাসার নকশা তৈরি করেন মেজর ম্যান এবং ভবন নির্মাণের প্রকৌশলী ছিলেন বিভিয়ান স্কট। ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দে মাদ্রাসা নিজস্ব ভবনে চলে আসে। ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে এ মাদ্রাসা থেকে তিনজন ছাত্র প্রথম এন্ট্রান্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়। ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত হাজী মুহম্মদ মোহসীন ফান্ড হতে এ মাদ্রাসার ব্যয় নির্বাহ করা হতো।
ঢাকার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এটি ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের ১লা জুলাই যাত্রা শুরু করে।
ঢাকায় বই আকারে মুদ্রিত প্রথম পাঠযোগ্য বিষয়
১৮৪৯ খ্রিষ্টাাব্দে ঢাকার ছোট কাটরায় অবস্থিত কাটরা প্রেস থেকে ব্যাপটিস্ট মিশনারি প্রকাশিত “The first report of the East bengal Missionary Society MDCC-CXL VIII, with an Appendix etc.” প্রতিবেদনটি ঢাকা থেকে পুস্তক-আকারে মুদ্রিত ও প্রকাশিত প্রথম বই।