কীভাবে হলো দেশের নাম (এশিয়া)
ড. মোহাম্মদ আমীন
তাইওয়ান (Taiwan)
তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার চীনা মূল-ভূখন্ড তীরবর্তী অঞ্চল এবং জাপানের মূল-ভূখন্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। জাপানের রিউকিউ দ্বীপপুঞ্জের ঠিক পশ্চিমেই তাইওয়ান দ্বীপের অবস্থান। তা ইওয়ান (Táiwān) শব্দ হতে আধুনিক তাইওয়ান (Taiwan) নামের উদ্ভব। এর অর্থ Terraced Bay বা সমুদ্র সোপান । কিন্তু আধুনিক গবেষণায় তাইওয়ান নামের ব্যুৎপত্তি সম্পর্কে সম্পূর্ণ নতুন একটি ব্যাখ্যা পাওয়া গিয়েছে। ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রেকর্ডে আধুনিক তাইওয়ানকে ফোর্ড জিল্যান্ডিয়া (Fort Zeelandia) নামে দেখানো হয়েছে। ওই রেকর্ডে ট্যাইউয়ান (Tayouan) বা ট্যেইওয়ান (Teyowan) নামের একটি উপজাতির তালিকাও সংযোজিত ছিল। ওই রেকর্ড দৃষ্টে প্রতীয়মান হয় যে, ফোর্ড জিল্যান্ডিয়ায় ট্যাইউয়ান নামের উপজাতি বসবাস করত। তারাই ছিল সেখানে প্রভাবশালী। তাই অনেকে মনে করেন, ট্যাইউয়ান উপজাতিদের নাম হতে তাইওয়ান নামের উদ্ভব। আর একটি প্রাচীন অভিমত হচ্ছে, হোকেইন শব্দ হতে তাইওয়ান নামের উদ্ভব। এর অর্থ অন্যায়ভাবে মৃতদের দাফন। সমুদ্রযাত্রাকালে অনেক নাবিককে যাত্রার ঝুকি এড়ানোর জন্য এ দ্বীপে এনে মাটিচাপা দেওয়া হতো। তবে অনেকে এটাকে নিছক গুজব মনে করেন।
তাইওয়ানের মোট আয়তন ৩৬,১৯৩ বর্গ কিলোমিটার বা ১৩,৯৭৪ বর্গমাইল। এটি ২৪৫ মাইল লম্বা এবং ৮৯ মাইল প্রশস্ত। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে তাইওয়ানের মোট জনসংখ্যা ২,৩৪,৬১,৭০৮ এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যা ৬৪৪। আয়তন বিবেচনায় তাইওয়ান পৃথিবীর ১৩৬-তম বৃহত্তম দেশ হলেও জনসংখ্যা বিবেচনায় এটি পৃথিবীর ৫২-তম জনবহুল দেশ, আবার জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় ১৫-তম। কনফুসিয়ানিজম, তাউইজম এবং বুড্ডিজম তাইওয়ানে প্রচলিত ধর্ম। তবে তারা ধর্মবিশ্বাস নিয়ে উগ্রতা কখনও চিন্তাও করতে পারে না।
২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে, তাইওয়ানের জিডিপি (পিপিপি) ১,০২১.৬০৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার (২১-তম), সে হিসাবে মাথাপিছু আয় ৪৩,৫৯৯ ইউএস ডলার(১৭-তম)। অন্যদিকে, জিডিপি (পিপিপি) ৫০৫.৪৫২ বিলিয়ন ইউএস ডলার (২৬-তম), সে হিসাবে মাথাপিছু আয় ২১,৫৭১ ইউএস ডলার(৩৯-তম)। মুদ্রার নাম নিউ তাইওয়ান ডলার। তাইওয়ান পৃথিবীর ১৭-তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। তাইওয়ান সত্যি অতি সুন্দর একটা দ্বীপ। এর ডাক নাম ইলাহ্ পরমোজা (Ilha Formosa)। যার অর্থ সুন্দর দ্বীপ। পর্তুগিজ নাবিকরা দ্বীপটিকে এ নামে ডাকতে পছন্দ করতেন। তাইওয়ানকে অনেকে আদর করে (The Kingdom of the Corals) বা প্রবাল রাজ্য বলে থাকেন। চায়না ভাষায় তাইওয়ান মানে সমুদ্র সোপান (terraced bay)।
তাইওয়ানের জাতীয় পতাকার উপরের অংশ সাদা সূর্যখচিত নীল আকাশ কুওমিনটাঙ দলের পতাকা। সাদা সূর্যে ১২টি রশ্মি বছরের বারো মাস এবং চায়নিজ বারো ঘণ্টার প্রতীক। পতাকার লাল অংশে রিপাবলিক অব চায়না প্রতিষ্ঠার স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহতদের প্রতীক। তাইওয়ানের জাতীয় পতাকা প্রথম ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে চায়না মূল ভূখণ্ডে উত্তোলন করা হয়। ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে এটি তাইওয়ানের জাতীয় পতাকা হিসাবে গণ্য হয়। অলিম্পিক গেমস, এশিয়ান গেমস বা অন্যান্য আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থা, সম্মেলন বা অনুষ্ঠানে তাইওয়ানের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা যায় না। তৎপরিবর্তে চাইনিজ তাইপে পতাকা উত্তোলন করা হয়। কারণ চায়না তাইওয়ানকে এখনও নিজেদের প্রদেশ বলে মনে করেন। চায়নার সঙ্গে আন্তজার্তিক বিরোধ এড়ানোর জন্য এমনটি করা হয়। তাইওয়ান জাতিসংঘের সদস্য নয়। পিপলস রিপাবলিক অব চায়নার আপত্তির কারণে রিপাবলিক চায়না শাসিত তাইওয়ানের পরিবর্তে চায়নাকে জাতিসংঘের সদস্য করা হয়। তাইওয়ান সরকারিভাবে চীন প্রজাতন্ত্র নামে পরিচিত। সাধারণত প্রজাতন্ত্রী চীন-শাসিত এলাকা বোঝাতেও ‘তাইওয়ান’ ব্যবহৃত হয়। প্রজাতন্ত্রী চীন প্রশান্ত মহাসাগরের তাইওয়ান দ্বীপ, অর্কিড আইল্যান্ড, গ্রিন আইল্যান্ড শাসন করে থাকে।
২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় গণচীনের ওপর জাপানিরা হামলা করলে তা প্রতিরোধ করার জন্য চীনের কুওমিনতাং পার্টি ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির একত্রে জাতীয় যুক্তফ্রণ্ট গড়ে তুলে জাপানি আক্রমণ প্রতিরোধ করে। যুদ্ধে জয়ী হবার পর চিয়াং কাইশেকের নেতৃত্বাধীন কুওমিনতাং পার্টি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট হয়ে সরকার গঠন করতে চায়। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি নিজেরাই সরকার গঠন করতে চাইল। এ অবস্থায় দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। কুওমিনতাং পার্টি গৃহযুদ্ধে পরাজিত হলে তাদের “চীন প্রজাতন্ত্র” (বা রিপাবলিক অব চায়না) সরকার উৎখাত হয়। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ১ অক্টোবর চীন গণ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। কুওমিনতাং বাহিনী তাইওয়ানে গিয়ে রিপাবলিক চায়না সরকার প্রতিষ্ঠা করে। তাদের সমর্থন দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
এখানে দারিদ্র্যের হার ও সংখ্যা পৃথিবীর সবচেয়ে কম। তাইওয়ানের রাস্তায় প্রায় ২,৯১,০০০ এর অধিক হকার বা বিক্রেতা রয়েছে। যাদের আয় অন্য অনেক উন্নত দেশের আয়ের তুলনায় অনেক বেশি। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই আমিরাতের বরুজ খালিফার পর তাইওয়ানের তাইপে-১০১ বা তাইপে ফিনানসিয়াল সেন্টার উচ্চতার দিক হতে পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম ভবন। অতি শিল্পোন্নত দেশ হলেও তাইওয়ানের রিসাইক্লিং হার বা পুনর্বব্যবহার-হার পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি। তাই দূষণ যত বেশি হওয়ার কথা তত বেশি নয়।
সিরিয়া (Syria) : ইতিহাস ও নামকরণ
লেসোথো (Lesotho): ইতিহাস ও নামকরণ
লাইবেরিয়া (Liberia) : ইতিহাস ও নামকরণ
লিবিয়িা (Libya) : ইতিহাস ও নামকরণ
মাদাগাস্কার (Madagascar) : ইতিহাস ও নামকরণ
মালাউই (Malawi) : ইতিহাস ও নামকরণ
সূত্র: কীভাবে হলো দেশের নাম, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।