তাফালিং আফালিং ও গাদলা দিন

ড. মোহাম্মদ আমীন

তাফালিং আফালিং ও গাদলা দিন: এবং খই ফোটা

তাফালিং আফালিং ও গাদলা দিন: পাবনার আঞ্চলিক শব্দ তাফাল। এই তাফাল থেকে তাফালিং শব্দটি উদ্ভূত।বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘বাংলা একাডেমী বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান [অখণ্ড], [প্রথম প্রকাশ ১৯৬৫, তৃতীয় পুনর্মুদ্রণ ২০০৯]’ অনুযায়ী ‘তাফাল্’, পাবনার আঞ্চলিক শব্দ। শব্দটির অর্থ ঝঞ্ঝাট, ঝামেলা প্রভৃতি। তাফালিং অর্থ ঝামেলাকারী, ঝামেলা করা, ঝঞ্ঝাটকারী, ঝঞ্ঝাট করা, মাস্তানি, বেপরোয়া কাজকর্ম, গুন্ডামি প্রভৃতি।

তাফাল-এর মতো আর একটি শব্দ হাওড় অঞ্চলে প্রায়শ ব্যবহৃত হয় সেটি ‘আফাল’। ‘আফাল’ অর্থ হাওড়ে সৃষ্ট উত্তাল ঢেউ। ‘আফাল’ যখন হাওড় অঞ্চলে তাফালিং শুরু করে তখন প্রকৃতির যে রূদ্র রূপ ধারণ করে সেটাকে বলা হয় তুফান।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, ঝড়, অবিরাম বৃষ্টি, দমকা হাওয়া, ঝিরঝির বৃষ্টি প্রভৃতির সঙ্গে প্রচণ্ড বেগে প্রবহমান বাতাসের ফলে হাওড়ের জলরাশিতে প্রবল ঢেউ সৃষ্টি হয়। এরূপ পরিস্থিতিকে বলা হয় ‘গাদলা দিন’।গাদলা দিনের কারণে হাওড়ে সৃষ্ট বড়ো বড়ো ঢেউকে ‘আফাল’ বলে। সম্ভবত বাদলা দিন হতে ‘গাদলা দিন’ কথাটির উদ্ভব। চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলে, টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিকে “গাজল” বলা হয়।
কুমিল্লা ও জামালপুর-সহ আরও অনেক এলাকায় টানা গুড়িগুড়ি বৃষ্টির দিন বা মেঘাচ্ছন্ন অবস্থাকে গাদলা বা গাদলা দিন বলা হয়। বরিশালে ধান সিদ্ধ করার বড় উনুনকেও তাফাল বলে। বরগুনা ও বরিশালে এক বিশেষ ধরনের চুলা অর্থেও তাফাল শব্দটি ব্যবহৃত হয়। কথায় বলে, “উঠছি যহন তাফালে, যা আছে থাক কপালে।”

খই ফোটা:. ‘খই ফোটা’ বাগ্‌ভঙ্গি দিয়ে অনর্গলভাবে অতিদ্রুত কথা বলা, বক্তৃতার মতো দ্রুত কথা বলা প্রভৃতি অর্থ প্রকাশ করা হয়। ‘খই’ ও ‘ফোটা’ শব্দ দিয়ে ‘খই ফোটা’ বাগ্‌ভঙ্গিটি গঠিত। ‘খই’ ধান্যজাত একপ্রকার শুকনো ও সুস্বাদু খাদ্য। এ খই প্রস্তুত-প্রণালির কার্যক্রম থেকে বাগ্‌ধারাটির সৃষ্টি। হাঁড়িতে বালু গরম করে তাতে ধান দিয়ে খই ভাজা হয়। তপ্ত বালিযুক্ত কড়াইতে ধান দিয়ে নাড়াচাড়া করলে তা অবিরাম শব্দে হাঁড়ির ভেতর ফুটতে থাকে। হাঁড়ির এ ধানকে কোনো অবস্থাতে সশব্দ ফোটা থেকে থামানো যায় না। ফুটতেই থাকে। এভাবে খই ফোটার কার্যক্রম ও ধরন থেকে বাংলা ‘খই ফোটা’ কথার উদ্ভব।

উৎস: পৌরাণিক শব্দের উৎসকথন ও ক্রমবিবর্তন অভিধান, ড. মোহাম্মদ আমীন
Language
error: Content is protected !!