টিচার, আমাকে একটা কাজ করে দিতে হবে।
কী কাজ?
একটা চিঠি লিখে দিতে হবে।
চিঠি তো প্রায় সময় লিখে দিই।
পাঠ্য পুস্তকের চিঠি নয়।
কীসের চিঠি?
জীবন পুস্তকের চিঠি। স্কুলে সব ধরনের চিঠি লেখা শেখানো হয়, কিন্তু জীবনের চিঠি কীভাবে লিখতে হয় তা শেখানো হয় না, ভুয়া সিলেবাস।
জীবনের চিঠি কী?
প্রেমপত্র। আমার প্রেমিকা, সরি বান্ধবী নিহা নিশাতকে দেওয়ার জন্য একটা চিঠি লিখে দিতে হবে।
বহুদিন পর আবার মাথাটা গরম হয়ে গেল হঠাৎ— এ কেমন ছাত্র, শিক্ষককে দিয়ে প্রেমপত্র লেখায়?
তোমার লজ্জা করছে না?
লজ্জা কীসের? বেতন মওকুফ চেয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে ভিখ মাগার পত্র লেখানোর সময় লজ্জা করে না? বনভোজনের বর্ণনা দিয়ে বন্ধুর কাছে পত্র, টাকা চেয়ে বাবার কাছে চিঠি, ছোটো বোনের বিবাহে বন্ধুকে আমন্ত্রণ— এসব জীবনে কয়বার লাগে? প্রেমপত্র মৃত্যু অবধি প্রয়োজন। কিন্তু এটি শেখানো হয় না, ফালতু একটা শিক্ষাব্যবস্থা, অসহ্য!
ওমর রেগে যাচ্ছে। কূলে এসে তরি ডুবানো চলবে না। ওমরের মাথার চুলগুলো আর একবার এলোমেলো করে দিয়ে বললাম, কী লিখব?
আপনার মতো করে আপনি লিখে দিন। প্রেমপত্র না কী বলে। নিহা নিশাত আমার সঙ্গ না পেয়ে অ্যাবনরমাল হয়ে গেছে। তার মা-বাবা এসে কান্নাকাটি করে গেছেন। আত্মহত্যাও নাকি করে ফেলতে পারে। আগের মতো সময় দিই না। তাস খেলি না, সিনেমা দেখি না। তার সময়গুলো আপনিই নিয়ে নিচ্ছেন। সে আত্মহত্যা করলে দায়ী হবেন আপনি।
আদুরে গলায় বললাম, কী লিখব বলতে হবে তো?
ভালোবাসার কথা সবার জন্য একরকম। শুদ্ধ বানানের মতো। আপনি টিচার কোনো মেয়েকে চিঠি দেননি?
না।
আপনি একটা বলদ।
কী বললে?
আপনি কী স্যার কখনো চাকরির জন্য দরখাস্ত করেছেন?
না।
কিন্তু চাকরির দরখাস্ত লিখতে পারেন। ওভাবে প্রেমপত্রও লিখতে পারবেন। না পারলে আগামীকাল কাউকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়ে আনবেন। আপনি আমাকে

শেখাতে এসেছেন। এটি আপনার দায়িত্ব। দরখাস্তের মতো প্রেমপত্রও জীবনের অংশ। আমি শিক্ষামন্ত্রী হলে, প্রেমপত্র লেখার কৌশল শিরোনামের একটা আবশ্যিক চ্যাপ্টার দেব। অকার্যকর সিলেবাস— বন্ধুর কাছে বনভোজনের বর্ণনা দিয়ে পত্র লেখা শেখানো হয়, কিন্তু প্রেমিক-প্রেমিকার কাছে পত্র লেখা শেখানো হয় না। গুষ্টি মারি এমন শিক্ষা ব্যবস্থার। টিচার, লিখতে পারবেন?
দেখি চেষ্টা করে।
লিখুন।
লিখছি।
লিখতে থাকুন। বৃষ্টির মাঝে প্রেমপত্র লিখলে শব্দগুলো জলের মতো নরম হয়। কাগজে মেঘের আনাগোনা ঘটে। আমি আপনার জন্য চকলেট নিয়ে আসি।
নিহা নিশাতকে ফেরাতে হবে। চিঠি লিখতে শুরু করলাম গভীর প্রেমের নিবিড় মমতায়। ওমর আমাকে অনেকগুলো চকলেট দিয়ে বলল, কাম ফ্রম সুইজারল্যান্ড।
থ্যাংক ইউ।
ওমর চিঠি পড়ে বলল, স্যার কেয়ামত হয়ে যাবে।
কার?
নিহা নিশিতের। এ চিঠি পড়ে সে আত্মহত্যার চিন্তা ছেড়ে বাঁচার জন্য পাগল হয়ে যাবে। তার দাদি পর্যন্ত আমার প্রেমে পড়ে যাবে। আপনি স্যার প্রেমপত্র লিখলে একানব্বই বছরের বুড়ি পর্যন্ত উনিশ বছরের যুবতি হয়ে যাবে। সো সুইট টিচার। আপনি এত ভালো কেন?
এই বয়সে প্রেম করা ভালো নয়— আমি বললাম।
যা ভালো নয়, আমি তাই করব। প্রেমের যেমন জাত নেই, তেমনি নেই বয়স। আমি কিন্তু প্রেম করছি না।
কী করছ?
আপনি টিচার বন্ধুদের চিঠি দেন না?
দিই।
নিহা আমার বন্ধু। তাকে চিঠি দেব-না?
তুমি তাকে ভালোবাস?
বাঁচতে হলে কাউকে না কাউকে ভালোবাসতে হয়। ভালোবাসার কেউ ছিল না তাই ভাসতাম, বাসতাম বলতে পারছি না। বাবার বন্ধুর মেয়ে। একসময় সে ছাড়া আমার আর কেউ ছিল না। আপনি আমার নিহা নিশাতকে অসাধারণ থেকে আমার জন্য খুব সাধারণ করে দিয়েছেন। এখন আমার অনেক ভালোবাসা। অনেক প্রেম, অনেক অনেক।
কে?
বই, আপনি, আমার হোমটাস্ক। স্কুলে আপনার থিয়োরি অ্যাপ্লাই করছি। এখন ক্লাসম্যাটরা আগের মতো আমাকে এড়িয়ে চলে না। বন্ধুত্ব করার জন্য এগিয়ে আসে। আমিও এগিয়ে যাই। আসলে স্যার, বড়ো হতে হলে আগে কীভাবে ছোটো হতে হয় তা জেনে নেওয়া দরকার। এটি না জানলে কেউ কখনো বড়ো হতে পারবে না। আপনার কাছে যা যা শিখেছি তার মধ্যে ছোটো হওয়ার কৌশলটা বেস্ট।

শ্রদ্ধা নেওয়ার জন্য বড়োরা যদি মাথাটা একটু না নোয়ায় তো ছোটোরা কীভাবে শ্রদ্ধা করবে?
ইদের চৌদ্দ দিন পর আমার জন্মদিন। কীভাবে পালন করব?
তোমার সব বন্ধুদের দাওয়াত দেবে। কয়জন তোমার বন্ধু?
সব মিলে ত্রিশ জন হবে। আগে নিহা ছাড়া কেউ ছিল না।
একজনকেও বাদ দেবে না।
আমার কয়েকজন বন্ধু আছে, তাদের ভালো জামাকাপড় নেই। তারা আসবে না।
তোমার অনেক টাকা। ওখান থেকে কিছু খরচ করে তাদের নতুন জামাকাপড় উপহার দাও। দেখবে, কত ভালো লাগে।
টাকা কমে যাবে। অ্যান্টিম্যাটার মহাদামি। অনেক টাকা জমাতে হবে।
অ্যান্টিম্যাটার কেন কিনবে?
আনন্দের জন্য।
দান অ্যান্টিম্যাটারের চেয়ে দামি। এর আনন্দ এস্তেতিনের চেয়ে দুর্লভ।
সত্যি?
হ্যাঁ।
থ্যাংক ইউ টিচার। আমি পরীক্ষা করে দেখব। মিথ্যা হলে সব টাকা আপনাকে ফেরত দিতে হবে। রাজি?
রাজি।