তিনে দুয়ে দশ একটি দিগ্-দর্শন উপন্যাস

শাখান মাহমুদ তমন

তিনে দুয়ে দশ একটি দিগ্-দর্শন উপন্যাস

তিনে দুয়ে দশ কিশোর উপন্যাসটি বজ্রপাতের মতো এগিয়ে গেছে। কিশোর বয়সটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যা ভয়ংকর সুন্দর! শিশুকাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রত্যেকটা মানুষের যে-কোনো একসময় কমবেশি কুরুচিপূর্ণ আচরণ ফুটে উঠে। গল্পের প্রধান চরিত্রে শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীর প্রবল তিক্ত অভিজ্ঞতাকে লেখক সুনিপুণ মেধা লিপিতে  ষোলোআনা পূর্ণ করার প্রতিজ্ঞা করেছেন- ‘যা অবিশ্বাস্য হলেও বিশ্বাসে সমৃদ্ধ করেছেন।’

আমি শুধু কিছু মৌলিক বিষয়কে সামনে আনার চেষ্টা করব। একটা গল্প বা জীবন অগণিত কালের সাক্ষী। মূলত কিশোর উপন্যাস হলেও তা ‘দিগ্‌দর্শন’

শাখান মাহমুদ তমন

করে মানুষ তৈরির হাতিয়ার হিসেবে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অবিভাবকের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এটি।যে অস্ত্রটি হবে, বিশ্বস্ত, ন্যায়পরায়ণ, শিক্ষানুরাগী, জ্ঞানের সূত্র, অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের দিগন্তরে।

প্রত্যেকটা মানুষের কণ্ঠস্বর, চেহেরার গঠন, নাম, ধর্ম, চিন্তাভাবনার শক্তি আলাদা। তারপরও আমাদের বাস্তব এবং কল্পনা শক্তি একত্রিত করে মনের ভাব প্রকাশ করতে হয়। পিতা-মাতা বলে-  “অমুকের মতো আচরণ করো না।তমুকের মতো হতে হবে।” কিন্তু আমরা সর্বদা ভুলে যাই, প্রতিটা সেকেন্ড হচ্ছে নতুন দিগন্তের সূচনা। নতুন দেখা ভোর। অদ্ভুত রস, সচেতনতা চিন্তার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে,‘ তিনে দুয়ে দশ’ দিগ্‌দর্শন গ্রন্থটি। বা শিক্ষকের ভাষায়, ভাবনাগুলো মূখ্য খাবার।

গ্রন্থটি শুরু হয়েছে একজন ছাত্রের পেশা দায়িত্ব থেকে। যিনি একজন ছাত্র তিনি একজন ছাত্রের দায়িত্ব নিতে হবে। একজন ছাত্র কীভাবে শিক্ষক হয়, কীভাবে শিক্ষক হয়ে ছাত্রকে আলোকিত করে? এমনভাবে লেখক গল্পটির ইতি টেনেছেন, যা প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার বা গল্পের স্থান ব্যক্তি সবার বিষয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করেছেন। এটাই গল্পের রোমাঞ্চ, যা লেখক বা শিক্ষক দেখাবে কীভাবে একজন ‘অথর্ব ’ ওমরকে, “সৈয়দ ওমর সুলতান তৈরি করে। ”

টিচারের বন্ধু রাজীব উপন্যাসের সূচনা করেছেন। যাকে পড়াতে হবে, তাঁর নাম ওমর। রাজিবের ভাষায়, “তুমি ছাড়া এই ছেলেকে কেউ পড়াতে পারবে না, যেমন মেধাবী, তেমন বিপজ্জনক। শয়তানিতে হিটলার, বুদ্ধিতে স্মাগলার আর ভদ্রতায় ট্রাফালগার।”
অত্যন্ত ভারসাম্যহীন ছাত্র, যার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। ওমরের পিতা প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা।ওমর কাউকে তোয়াক্কা করে না, পিতাকে বাবা বলে ডাকে না, বাবাও সন্তানকে পশুর সাথে তুলনা করেন। মা, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, কাউকে সম্মান করে না।ফলে ওমরের উন্মাদনা আত্মহত্যার মন-মানসিকতা হয়ে যায়।
এমনকি শিক্ষককে হাত তুলতেও দ্বিধা করে না। শিক্ষকের কাছ থেকে কমিশন চায়, টিচার যতটা ছাত্রের বিষয়ে জানতেন, তাঁর ধারণার চেয়ে নগণ্য হয়ে যায় ছাত্র! টিচার তাঁর সম্পর্কে অতীতের কিছু অভিজ্ঞতা আলোচনা করেছেন। টিচার একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তাঁর পিতা একজন শিক্ষক, আরো প্রভাবশালীর সম্পর্কে সৌহার্দ্য অভিজ্ঞতা সামনে এনেছেন। গল্পের প্রধান চরিত্রে টিচার এবং ওমর , নায়িকাকে খুঁজে নেওয়ার দায়িত্ব পাঠকের।

তবে একটা বিষয় খটকা লাগলো, ব্যক্তি, স্থান, প্রবল গোপনীয়তা ছিল। কিন্তু এমনভাবে লেখক উপন্যাস সাজিয়েছেন, যা আমি ছাত্র হতেই বাধ্য হলাম!তবে কেন শুধু, ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ‘ওমর’ নামটি সামনে এনেছেন? বাস্তবতা হচ্ছে ইসলামের বিষয়ে আলোচনা না করে পাঠককে ঠকিয়েছেন বলে

পুথিনিলয়, বাংলাবাজার।

মনে হয় ! এমনভাবে লেখক গল্পটি সমাপ্ত করেছেন, মনে হয় ধর্ম সভ্যতার জন্য নয়, শুধু মনে মনে ভাবার জন্য, গোপনে আলোচনা করার জন্য ! কিন্তু গল্পের শেষটাতে পাঠকের অশ্রু নির্গত করতে টিচার সক্ষম হয়েছেন।

ভালোবাসার লাইনগুলো :

রোগ ধরতে না পারলে চিকিৎসা করবে কীভাবে?

শর্ত নেই বলে স্বত্বও নেই।শর্ত কর্তের প্রাণ।বিনা স্বার্থে এবং বিনা স্বত্বে যা করা হয়, তাতে আন্তরিকতা থাকে না। ক্ষুধা না থাকলে যেমন স্বাদ আসে না,তেমনি স্বার্থ-স্বত্ব না থাকলে আগ্রহ ও থাকে না।

কথা জ্ঞানের বিজ্ঞাপন।

নদীর পানি যায় বলে আসে। বহমান নদীর সঙ্গে সাগরের সম্পর্ক হয়।বদ্ধ জলাশয় হাহাকার করে, পচে মরে দুর্গন্ধ।।

মনুষ্যত্ববোধসম্পন্ন মানুষ সৃষ্টির সেরা, অন্যথায় সর্বনিকৃষ্ট।

কত মানুষ প্রতিদিন বৃদ্ধ হচ্ছে, মরে যাচ্ছে;সময়কে কখনো বৃদ্ধ হতে দেখেছ? নষ্ট হয়ে পচে যেতে দেখেছ?

প্রসংসা লাশের লোমেও শিহরণ ছড়িয়ে দেয়, আমি কোন ছার।

একটা জিনিস আমি জানতাম না। জানতে পারলাম লজ্জার কী- এ তো আনন্দের বিষয়। আমি জানতে পেরেছি -আমি অনেক কম জানি।
এর চেয়ে বড়ো জানা আর কিছু হতে পারে না। আমি ওমরের কাছেও অনেক শিখেছি।

জাবির ইবনে হাইয়ান,রসায়ন বিজ্ঞানের প্রথম জনক।

একজন মানুষ সবকিছু জানে না। জানা সম্ভবও নয়। আমি যা জানি না, তা শিখে এসে তোমাকে জানাব।এটাই শিক্ষকতা। তুমি যা জানতে চেয়েছো এবং আমি যা বলতে পারিনি, লিখে নিয়েছি। আগামীকাল উত্তর দেব।

ধনীর মেয়ে কালোও শশী,বোচকা গালে ভোরের হাসি।

শিকার কষ্ট পাবে বলে কি শিকারি বন্দুক বন্ধ করে হরিনাম করে?

হাতির মুখে ছাগলের দাঁত মানায় না।

ধনীদের সবকিছু ফরমাল। এক টাকা দান করতে গিয়ে দশ টাকা জাঁকজমকের পেছনে খরচ করেন।।

বইয়ের সৃজন ক্ষমতা আছে, ক্রেস্ট নপুংসক। সে গর্ব দিতে পারে, জন্ম দিতে পারে না।বাজা গাভিকে কেউ গোয়ালে রাখে না,কসাইখানায় পাঠিয়ে দেয়।

দরখাস্তের মতো প্রেমপত্রও জীবনের অংশ।

লিখতে থাকুন। বৃষ্টির মাঝে প্রেমপত্র লিখলে শব্দগুলো জলের মত নরম হয়। কাগজে মেঘের আনাগোনা ঘটে আমি আপনার জন্য চকলেট নিয়ে আসছি।

প্রেমের যেমন জাত নেই, তেমনি নেই বয়স।

মিথ্যা বলা মহা পাপ,চরমতম অভিশাপ ;মিথ্যা কথা যারা কয়, তারা কোনো মানুষ নয়;সত্যে যদি এত পাই, মিথ্যা কেন বলব হায়!

ড. মোহাম্মদ আমীন

একটা চুমো,অনেক গভীর আবেগে- শেষ হবে না কোনোদিন,ভালোবাসায় ভালোবাসায় সারা দুনিয়া ছড়িয়ে পড়বে, Teacher forever.

ম্যাথম্যাটিক্স ইজ দা ফাদার অব সায়েন্স।

ভালোবাসা যেখানে বিন্দু, দোষ সেখানে সিন্ধু।

লেখক ড.মোহাম্মদ আমীন সম্পর্কে জানতে হলে, তিনে দুয়ে দশ পড়তে হবে তা নয়, ‘তিনে দুয়ে দশ’ সর্বজনীন উপন্যাস।

বই :তিনে দুয়ে দশ
ধরণ: কিশোর উপন্যাস
লেখক:ড. মোহাম্মদ আমীন
প্রকাশনী:পুথিনিলয় প্রকাশনী
পৃষ্ঠা : ৬৪
প্রচ্ছদ: মামুন হোসাইন
মূল্য : ১২০ টাকা।

অনুসজ্জায়:  রাশিদা আকতার মিশু

সূত্র: তিনে দুয়ে দশ একটি দিক-দর্শন উপন্যাস, শাখান মাহমুদ তমন, শুদ্ধ বানান চর্চ (শুবাচ)।

পুরো উপন্যাস পড়তে চাইলে: তিনে দুয়ে দশ (Tine Due Dash): ড. মোহাম্মদ আমীন

——-

শুবাচ গ্রুপের লিংক: www.draminbd.com
Language
error: Content is protected !!