Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
তিনে দুয়ে দশ: একাদশ পর্ব – Dr. Mohammed Amin

তিনে দুয়ে দশ: একাদশ পর্ব

ড. মোহাম্মদ আমীন

তিনে দুয়ে দশ: একাদশ পর্ব

ওমর হাতের আঙুল গুণে দেখল, আমি পাচ্ছি দশটি, এগারো হয় কীভাবে?

ড. মোহাম্মদ আমীন

প্রথমে ডান হাত থেকে উলটো শুরু করি। কনিষ্ঠা ১০, অনামিকা ৯, মধ্যমা ৮, তর্জনী ৭, বৃদ্ধা ৬; ঠিক আছে?
হ্যাাঁ।
এবার ছয়-এর সঙ্গে বাম হাতের পাঁচটি যোগ করো। কত হয়?
এগারো।
দারুন টিচার, দারুণ। যাই করুন, আমার কমিশনটা ঠিক সময়ে দিয়ে দেবেন।
ওমরকে যত ভয়ানক মনে করেছিলাম, দেখা গেল সে তার চেয়েও ভয়ানক। গৃহশিক্ষকের বেতন থেকেও সে কমিশন আদায় করে। বিচিত্র অভিজ্ঞতার আশায় মনটা ফুরফুরে হয়ে উঠল। মজার হবে টিউশনিটা, দেখি ছেলেটা কতদূর যেতে পারে। হাল ছেড়ে দেব না।
একদিন জানতে চাইল রাজিব, তোমার ছাত্র ওমরের খবর কী?
ভেবেছিলাম রাজিবকে কমিশনের কথাটা বলে দিই। বললে, কোনো লাভ হবে না। সে তানজিমা ম্যামকে গিয়ে কথাটা বলে দেবে, তিনি বলে দেবেন ওমরকে। এতদিনের নৃশংস পরিশ্রমে ওমরের সঙ্গে যে ভাব জমেছে তা মুহূর্তের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। আমার সব আশা ভেস্তে যাবে। কাউকে বলব না।
ওমরের সঙ্গে সময়টা কেমন যাচ্ছে? রাজিব আবার প্রশ্ন করল।
ওমরের মতো ভালো ছেলে আর হয় না।
আমি বলেছিলাম না? ছেলে নয়, হীরের টুকরা।
ঠিক বলেছ, আমি বললাম, “তবে ঘষেমেজে ঔজ্জ্বল্যটা বের করার কষ্টটা সহ্য করতে হচ্ছে। পাকা জহুরি না হলে বিপদ।”
এজন্যই তোমাকে লাগিয়েছি।
থ্যাংক ইউ।
মাস শেষ হওয়ার এক দিন আগে একটি সাদা খামে তিনশ বিশ টাকা ভরে ওমরের হাতে দিলাম।
ওমর খামের দিকে তাকিয়ে বলল, এটা কী?
দেখো?
প্রেমপত্র নয় তো টিচার? আমার এক বান্ধবীকে তার টিচার এভাবে খামে ভরে প্রেমপত্র দিয়েছিলেন। তারপর কী হয়েছে জানেন? ওই টিচারকে ধরে রামধোলাই।
রামধোলাই কী?
রাম তার প্রতিপক্ষকে যে ধোলাই দিতেন। বলুন-না টিচার, খামে কী?
তোমার কমিশন, তিনশ বিশ টাকা।
ওমর খাম থেকে টাকাগুলো বের করে গুণে নিয়ে বিশ টাকা আমার হাতে দিয়ে বলল, এটা রাখেন।
আমি তা নিতে নিতে বললাম, যাক, বিশ টাকা আয় হলো।
তিনশ টাকা আমার জন্য কিছু না, কিন্তু টিচার নিজের আয় বলে অনেক বেশি মনে হয়। ডিআইজি সাহেব বলেনÑ নিজের আয়ের এক টাকা অন্যের দানের এক লাখের সমান। আমার মনে হয়, টিচার তারও বেশি। আপনি কী বলেন?
তোমার আয়টা বৈধ নয়।
আমি টিচার এই টাকা দিয়ে যদি কিছু কিনতে যাই, তাহলে কেউ কী বলবেÑদেব না, এটা বৈধ নয়? যথাসময়ে টাকাটা দেওয়ায় আমি খুব খুশি হয়েছি। আপনি সৎ মানুষ। টিচারদের সৎ হতে হয়, অবশ্য তাদের অসৎ হওয়ার কোনো সুযোগও নেই। আমড়া গাছ দিয়ে কি ঢেঁকি বানানো যায়? টিচারকে ঘুস দেবে কে? ঘুস খেতে হলে ঘুসি দেওয়ার জোর থাকতে হয়। আমার স্কুলের শিক্ষকগণ নিরীহ কোনো ছাত্র সালাম দিতে ভুল করলে শাস্তি দেয়। আমি লাথি দিলেও কিছু বলে না। হাসি দিয়ে বলেÑ বাবা ব্যথা পেয়েছ? তুমি কষ্ট করে লাথি দিতে গেলে কেন? বললে আমি আমাকেই লাথি দিতাম। আমি খুব খুশি হয়েছি, যথাসময়ে কর্তব্য পালন করেছেন।
আমিও যথাসময়ে তোমাকে টাকাটা দিতে পেরে খুশি।
টিচার, আপনি খুব ভালো মানুষ। টিচারদের ভালো না হয়ে কোনো উপায় নেই। নিরীহদের ভালো থাকতেই হয়। টিচারদের ক্ষমতা কনস্টেবলের চেয়েও কম।
তুমি আমার চেয়েও ভালো, কিন্তু বোকা।
আমাকে সবাই চালাক বলে। আপনিই প্রথম বোকা বললেন।
তুমি এ পর্যন্ত যাদের সঙ্গ পেয়েছ, সবাই তোমার চেয়ে বোকা ছিল। তাই তারা তোমাকে বুদ্ধিমান বলেছে। শেয়াল পশুরাজ্যে বুদ্ধিমান, কিন্তু মনুষ্য রাজ্যে? আসলে তুমি একটি বোকার হদ্দ। জীবনে তোমার মতো বোকা কোনো ছাত্র-ছাত্রী আমি পাইনি।
আমি ওমরের দিকে তাকালাম। লজ্জায় সে ঘামতে শুরু করেছে। এমন অপদস্থ সে আর হয়নি। এতদিন সেই আমাকে অপদস্থ করেছে আসছিল।
কী, ঘামছ কেন? গরম লাগে? এসিটা ছেড়ে দেব?
টিচার, আসলেই কি আমি বোকা?
আমি তোমাকে বুদ্ধিমান বানিয়ে দেব।
কতদিন সময় লাগবে?
তিন-চার মাসের বেশি লাগবে না।
তিন-চার মাস সময় দেব। বলতে হবে, আমি বোকামির কী করলাম?
তুমি মাত্র চল্লিশ পার্সেন্ট চাইলে। ষাট পার্সেন্ট চাইলে আরও একশ ষাট টাকা বেশি পেতে।
যদি না দিতেন?
দরকষাকষি হতো। আমি কিন্তু দিয়ে দিতাম।
এখন দিন।
তুমি বোকা বুঝেছিলাম, কিন্তু এত বোকা এই মাত্র জানলাম। চুক্তি আর দরদাম হয়ে যাওয়ার পর আবার তা নাড়াচাড়া করা বলদবোকার কাজ।
আমি বলদ?
বলদ-বোকা।
আমি মাইন্ড রিডার না। তো আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। চার মাসের মধ্যে আমাকে বুদ্ধিমান বানিয়ে দিতে হবে। নইলে আপনার কপাল মুসিবত আছে।
অশালীন আচরণের মিথ্যা অভিযোগ এনে চ‚ড়ান্ত অপমান করে ছাড়ব। বলদ পর্যন্ত ডেকেছেন আপনি। আপনার শেখানো কাজ শুরু করুন।
আমি বললাম, তুমি আমার কাছ থেকে শিখছ আর আমি শিখছি তোমার কাছ থেকে। ওইদিন তিন আর দুইয়ে কত হয়েছিল?
দশ।
পরস্পরের বেতন যথাসময়ে দিয়ে দেওয়া উচিত। তাহলে শ্রমের মর্যাদা মাসের প্রথমদিকে আসার এবং হাসার সুযোগ পায়। আমি তোমাকে মাইন্ড রিডার বানিয়ে দেব। তবে আমি যা বলি তা শুনতে হবে, মানতে হবে। না করা চলবে না। রাজি?
রাজি।
আমি কাগজে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, অমিয় ভ‚ষণ মজুমদার, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, জনাথন সুইফট, মাক্সিম গোর্কি, আকবর হোসেন, রোমেনা আফাজ, ফাল্গুনী মুখোপাধ্যয়, ডা. লুৎফর রহমান, এলিস গ্রিভেন, জুলিয়া ডোনাল্ড সন্স, ড. সিউসÑ এর নাম লিখে বললাম, এদের লেখা কিছু বই সংগ্রহ করে নিও।
তারপর?
আগে বইগুলি আসুক, তারপর বলব।
কালই চলে আসবে।
গুড বয়।
আপনি আমার কাছ থেকে কী শিখছেন টিচার?
আয় করার কৌশল।
আর?
তুমি না থাকলে তিনে দুয়ে দশ কীভাবে করতাম।
থ্যাংক ইউ টিচার। সব মানুষ যদি আপনার মতো হতো!
তাহলে কী হতো?
আমি এতদিনে অনেক টাকা আয় করতে পারতাম। অনেক বই হতো আমার। না পড়লে দেখাতে পারতাম। আমার বই পড়তে ইচ্ছা করে না। বই বলতে পারে না।
বলিয়ে নিতে হয়।
আর কোনো টিচার তোমাকে টাকা দিয়েছেন?
না।
বলেছিলাম না, এই পর্যন্ত কোনো বুদ্ধিমান লোকের সঙ্গ তুমি পাওনি। ওরা বুদ্ধিমান হলে কমিশন দিতেন। না দিলে আসবে কীভাবে? নদীর পানি যায় বলে আসে। সাগরের সঙ্গে সম্পর্ক হয়। বদ্ধ জলাশয় হাহাকার করে, পচে মরে দুর্গন্ধে।
একজন মেনে নিয়েছিলেন। তবে ত্রিশ পার্সেন্ট।
বিদায় করে দিয়েছ যে?
কোনো টিচারকে আমরা বিদায় করিনি। সবাই নিজে নিজে বিদায় নিয়েছেন। এই টিচারের নাম ছিল এমদাদ। মুখ থেকে গুয়ের

পুথিনিলয়, বাংলাবাজার।

মতো দুর্গন্ধ আসত। ডিআইজির পুরো বাংলো গু-ময় হয়ে গিয়েছিল। আমার চেয়েও বোকা ছিল।
কীভাবে বুঝেছিলে?
পড়াতে আসার কয়েকদিন পর বললাম, টিচার, মুখটা আপনার মলদ্বার। গুয়ের গন্ধ আসে। মাউথ ওয়াশ নিয়ে আসি। কথা শুনে তিনি, “জানোয়ারের বাচ্চা জানোয়ার” বলে চড় মেরে দিলেন আমাকে।
তুমি কী করলে?
বলেন তো কী করেছি? বলতে পারবেন না। এমন একটা কাজ করেছি, যা শুনলে আপনি হতভম্ব হয়ে যাবেন, সরি ভয়ে শিউরে উঠবেন।
কী কাজ?
বলেছিলামÑ টিচার, আমার বাবাও আমাকে জানোয়ারের বাচ্চা ডাকে। আজ থেকে আপনাকে ওমর নামের জানোয়ারের সঙ্গে আমাদের বাসার চিড়িয়াখানায় কুকুর-বিড়াল- শিয়াল-ঘোড়া-গোরু-ছাগল নামের সেসব জানোয়ার আছে তাদেরও পড়াতে হবে। চলুন, চিড়িয়াখানায়। ভয়ে অস্থির হয়ে পালিয়ে বাঁচলেন ভদ্রলোক।


——————————-
ওয়েব লিংক