তিনে দুয়ে দশ: সপ্তদশ পর্ব

ড. মোহাম্মদ আমীন

তিনে দুয়ে দশ: সপ্তদশ পর্ব

প্রতিমাসে শেষ তারিখের আগের দিন চকচকে একখানা পাঁচশ টাকার নোট সোনালি ব্যাংক থেকে নিয়ে সাদা খামে ভরে ওমরের হাতে তুলে দিই। ওমর নোটখানা দেখে খামের কোনায় তারিখ লিখে ড্রয়ারে রেখে দেয়।
রমজান মাসে খামটা খুলে ওমর বিস্মিত হয়ে বলল, টিচার, আপনি ভুল করেছেন।
কী ভুল?
একটা অঙ্কে সেদিন শুধু দুই কম হয়েছিল বলে বকা দিয়েছিলেন। আপনি পাঁচশ বেশ-কম করে ফেললেনÑ আপনাকে কী দেওয়া উচিত?
কীভাবে?
কত টাকা দিয়েছেন?
গুনে দেখোনি?
পাঁচশ টাকা বেশি দিয়ে ফেলেছেন। টিচার মানুষ, এত বড়ো ভুল হলে সামনে আপনার আরো বড়ো বিপদ আছে।

ড. মোহাম্মদ আমীন

ভুল হয়নি। অতিরিক্ত পাঁচশ টাকা ইদের বোনাস। প্রতি ইদে পাবে।
বোনাস মানে কী জানেন টিচার? বোনকে ডাকা। বোন+আস্= বোনাস। আপনি স্যার বোনাস পেলে কী করেন?
বোনকে ডাকি। বোন আসে, মার্কেটে যাই। বোনকে সাধের সওদা করে দিই। তুমি কী করবে?
বোন অনেক ভালো জিনিস। বোন থাকলে কত মজা হতো।
তোমার কোনো বন্ধু নেই?
বাবা থাকলে বন্ধু থাকত।
ডিআইজি সাহেব তোমার কে?
সে ডিআইজি।
ওনিই তো তোমার বাবা।
পুরো বিভাগে একজনই ডিআইজি। আমিও একজন। খেলতে গেলেও সঙ্গে গাড়ি যায়, গাড়ির সঙ্গে পুলিশ। এভাবে কী বন্ধুত্ব হয়? সরকারের উচিত প্রত্যেক বিভাগে কয়েকজন ডিআইজি করা। নইলে ডিআইজির ছেলেদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার জন্য কিছু ছেলেমেয়ে পাঠিয়ে দেওয়া।
তোমার কোনো বন্ধু নেই?
মানুষ কী?
কাল পড়ে জানলাম, “Men are like pumpkins. It seems like all the good ones are either taken or they’ve had everything scraped out of their heads with a spoon.” তবে তুমি দিন পাম্পকিন মানে মানুষ হতে যাচ্ছ।
বাহ্যিক আচরণে মানুষ স্যার এক ধরনের পিপীলিকা। তবে একটা কথা আছে।
কী?
সামাজিক নিবিড়তা বিবেচনায় পিপীলিকা মানুষের কয়েক ধাপ নিচে। পিপীলিকার দিকে তাকালে আমাকে হাতি মনে হয়, মাংসর্বস্ব জন্তু।
কীভাবে?
মানুষের মতো এরাও দলবদ্ধ হয়ে বাস করে। সমাজ বানায়। কিন্তু মানুষের মতো এত হানাহানি নেই। টিচার, আমার সমাজ

পুথিনিলয়, বাংলাবাজার।

এখানেই সীমাবদ্ধ। ডিআইজি সাহেব আমাকে যার-তার সঙ্গে মিশতে দেয় না। স্ট্যাটাস নষ্ট করা যাবে না। আমি স্ট্যাটাস নষ্ট করিনি, তাদের নষ্ট করে দিতে চেয়েছিলাম। আপনি এসে সব ভন্ডুল করে দিলেন।
আমি কী করলাম?
পর্ন সিডি থেকে নজরুল-রবীন্দ্রনাথে নামিয়ে এনেছেন, তাস থেকে পাঠিয়ে দিয়েছেন সার্ত্রে।
ফিজিক্সের কোনো চ্যাপ্টার নিয়ে প্রবলেম আছে?
ফিজিক্স স্যার পুরোটাই প্রবলেম।
কী বলো?
পদার্থ মাত্রই শক্তি। যত শক্তি তত প্রবলেম, ডিআইজির শক্তি বেশি বলে সমস্যাও বেশি। তবে যত প্রবলেম তত সলিউশন। আপনিই বলেছেন।
তার মানে কোনো প্রবলেম নেই?
আমি ফিজিক্সে নোবেল প্রাইজ নেব। সবচেয়ে কমবয়সের যে পাঁচজন নোবেল প্রাইজ পেলেনÑ তাঁদের সবাই ফিজিক্সেই পেয়েছেন।
রসায়নটা বের করো।
জানেন টিচার, আমার কিন্তু অনেক টাকা।
ওই টাকা দিয়ে কী করবে?
কিছু টাকা বুড়ো বয়সে খরচ করব। ওই বয়সে মানুষের অনেক টাকা প্রয়োজন হয়, কিন্তু কেউ দেয় না। বাকি টাকা দিয়ে বজ্রপাত উৎপাদনের মেশিন বানাব। বজ্রপাতের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।
বজ্রপাতে প্রতিবছর অনেক লোক মারা যায়।
বজ্রপাত না হলে প্রাণিকুল ধ্বংস হয়ে যাবে। বজ্রপাতের মাধ্যমে ওজোন তৈরি হয়। আমি ওজোন সরবরাহ করব মঙ্গল গ্রহে। ওখানে ওজোনের চাহিদা প্রবল । ভালো ব্যাবসা হবে। আপনিও থাকতে পারেন, পার্টনার।
এত টাকা দিয়ে কী করবে।
পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্লভ মৌল এস্তেতিন সংগ্রহ করব।
আমি কোনোদিন নাম শুনিনি।
মোল্লার দৌড় মসজিদ।
কী বললে?
সারা পৃথিবীতে মাত্র ২৮ গ্রাম এস্তেতিন আছে। আমি একাই ২০ গ্রাম সংগ্রহ করে একটা এস্তেতিন মিউজিয়াম বানাব।
আমাকে ঢুকতে দেবে?
আপনি মিউজিয়ামের কেয়ার টেকার থাকবেন। টিচার, অ্যান্টিম্যাটার নাম শুনেছেন?
শুনেছি।
পৃথিবীর সবচেয়ে দামি ধাতু।
এক গ্রামের মূল্য কত জানেন?
না।
একশ মিলিয়ন ডলার।
এতসব কোত্থেকে শিখেছ?
এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা।
অনেক কিছু জেনে নিয়েছ।
আমি অ্যান্টিম্যাটার দিয়ে একটা ব্রেসলেট বানাব। আর একটা আংটি বানিয়ে আপনাকে দেব। আপনি কিন্তু আংটিটা কাউকে দিতে পারবেন না। এমনকি আমাকেও।
আমার বউকে দিতে পারব?
একদম না।
কেন?
আপনার বউ কি আমার টিচার?
তুমি কি অ্যান্টিম্যাটার সংগ্রহ শুরু করে দিয়েছ?
হ্যাঁ।
কোথায়?
ওমর আঙুলের ইশারায় শেলফের বইগুলো দেখিয়ে বলল, ওই যে দেখুন।


শুবাচ গ্রুপ এর লিংক: www.draminbd.com
—————————————————-
——————————-
ওয়েব লিংক
—————————
অন্যান্য
Language
error: Content is protected !!