ড. মোহাম্মদ আমীন
‘তৈয়ার’ থেকে তৈরি। ‘তৈরি’ বিশেষ্য ও ক্রিয়া উভয়রূপে ব্যবহার হতে পারে। তবে ক্রিয়া হিসেবে সমধিক ব্যবহৃত। যেমন : সে বাড়ি তৈরির কাজে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকে। মা আমাদের জন্য সেমাই তৈরি করছেন। অন্যদিকে ‘তৈয়ারী’ থেকে ‘তৈরী’। ‘তৈরী’ বিশেষণ পদ। এটি ‘খ্রিষ্টাব্দ’ শব্দের মতো আত্তীকৃত শব্দ। তাই উৎস বিদেশ হলেও দীর্ঘ-ঈকার। প্রয়োগ : হাতে-তৈরী সৈমাই খেতে বেশ লাগে। জাপানের তৈরী গাড়ি বাংলাদেশে প্রচুর পাওয়া যায়।
জামিল চৌধুরী সম্পাদিত বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে (২০১৬) হাজার হাজার শব্দের ন্যায় ‘তৈরী’ শব্দটিও বাদ পড়েছে। অসম্পূর্ণ ও আংশিক কার্যকর এ অভিধানটিতে শব্দ খুঁজতে গেলে না-পাওয়ার সম্ভবানাটাই বেশি থাকে। অবশ্য অভিধানে না-থাকলে শব্দটি নেই বা অশুদ্ধ এমন মনে করার কোনো অবকাশ নেই। গবেষকদের মতে, বাংলায় দুই লাখের কাছাকাছি শব্দ আছে। অভিধানসমূহে এ পর্যন্ত আশি হাজারের বেশি পাওয়া যায় না। তার মানে বাকি শব্দগুলো কি অশুদ্ধ?
শুবাচের নিয়মিত লেখক যুবায়ের আহমাদের ভাষায়, ‘তৈরি’ বলে যদি তৈরিকৃত বুঝানো হয়, তাহলে দীর্ঘ-ঈ কার হবে। অন্যথায় হ্রস্ব-ই কার। যেমন, মা পিঠা তৈরি করছেন। তাঁর হাতের তৈরী পিঠার স্বাদই আলাদা! ও পোশাক তৈরি করে আর ওর পিতা তৈরী পোশাকের দোকান দেন। এই প্রসঙ্গে শুবাচ কবি শাহিদুল হকের ছড়টা প্রণিধানযোগ্য
তৈরি এবং তৈরী
তৈরী পোশাক কিনব না আর তৈরি করেই পরব
তৈরি এবং তৈরী নিয়ে চিন্তা কেন করব ?
বিশেষ্য আর ক্রিয়া পদে তৈরি হবে লিখতে
বিশেষণে তৈরী সবই বাধ্য হবে শিখতে।
তৈয়ার থেকে তৈরি এল তৈয়ারীতে তৈরী
পড়তে যখন মাথা ঘোরে সবই লাগে বৈরী।
দুঃসংবাদ হলো এই যে, এখন বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে কোনো তৈরী নেই। এখন সব ‘তৈরি’। অতএব, বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানের কথা মানলে আপনাকে ‘তৈরী’ লেখা থেকে বিরত থাকতে হবে।যে-কোনো কাজে আপনাকে লিখতে হবে ‘তৈরি’। এমনকি জাপানের তৈরী ক্যালকুলেটরেও।
গবেষণা, প্রাতিষ্ঠানিক অধ্যয়ন, মাতৃভাষা জ্ঞান, প্রাত্যহিক প্রয়োজন, শুদ্ধ বানান চর্চা এবং বিসিএস-সহ যে-কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অতি প্রয়োজনীয় কয়েকটি লিংক :
মানিকগঞ্জ জেলার নামকরণ ও ঐতিহ্য
হাতিয়া উপজেলার নামকরণ ইতিহাস ও ঐতিহ্য
পটুয়াখালী আগুনমুখা নদীর নামকরণ
ভেদরগঞ্জ উপজেলা ও ইউনিয়নসমূহের নামকরণ