Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
দাপ্তরিক প্রমিত বাংলা বানান – Page 6 – Dr. Mohammed Amin

দাপ্তরিক প্রমিত বাংলা বানান

প্রমিত বানান ও বহুবচন
প্রমিত বানানের ব্যবহার

চলিতরূপে বাংলা ক্রিয়াপদ ব্যবহারে বাংলাভাষীদের স্বেচ্ছাচারিতা অবিশ্বাস্যমাত্রায় বিপজ্জনক। ব্যাকরণগতভাবে ক্রিয়াপদের মোট ৪৮টি রূপ হতে পারে। বানান তারতম্য করে ৪৮টি রূপকে ৭৯৭টি কিংবা তারও অধিক সংখ্যক রূপে পরিণত করা হচ্ছে। এটি স্বেচ্ছাচারিতা ছাড়া আর কিছু নয়। ৭৯৭টি ক্রিয়ারূপের মধ্যে বর্তমান কালের ১৯৪টি, অতীত কালের ৫৬৪টি এবং ভবিষ্যৎ কালের ৫৭টি। ক্রিয়াপদের মূল তথা ধাতুর সঙ্গে ‘তো, এ, ল, বার, আ, ও, লুম’ প্রভৃতি কৃৎপ্রত্যয় যুক্ত করা হলে ক্রিয়াপদের রূপের সংখ্যা এক হাজারের অধিক হয়ে যেতে পারে। এমন স্বেচ্ছাচারী মনোভাব অবিলম্বে পরিহার করা বাঞ্ছনীয়। ক্রিয়াপদের ব্যবহার ও বানানরীতির সমতা বিধানের লক্ষ্যে চলিত ভাষায় ক্রিয়াপদের বিভিন্নরূপ-দানে নিম্নবর্ণিত সূত্রগুলো মেনে চলা উচিত :
১. ক্রিয়াপদে কোনো অবস্থাতে ‘লুম, লেম, তুম, তেম’ ইত্যাদি প্রত্যয় ব্যবহার করা যাবে না। যত বড় সাহিত্যিকই তা ব্যবহার করে থাকুন না কেন, তা আমরা পড়ব, কিন্তু লিখব না। কেউ ভুল করলে আমাকেও ভুল করতে হবে কেন?
২. ক্রিয়াপদে সর্বাবস্থায় ঊর্ধ্ব-কমা বর্জনীয়। যেমন ক’রে, ধ’রে লেখা ঠিক নয়। লিখুন করে, ধরে ইত্যাদি।
৩. তুমি বা তোমরা প্রভৃতি শব্দ লেখার ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎকালে পালনীয় অনুজ্ঞার বেলায় ক্রিয়াপদের শেষে ‘ও’ কিংবা ‘ও-কার’ বসে। তবে কয়েকটি ক্ষেত্রে প্রয়োজনবোধে ‘য়ো’ বসানো যেতে পারে। যেমন
তুমি আমার সাথে স্কুলে যেয়ো।
তোমরা এক সাথে ভাত খেয়ো।
৪. ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞার বেলায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্রিয়াপদের রূপ ভিন্ন হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ক্রিয়াপদের প্রথম বর্ণের ‘ও’ বা ‘ও-কার’ পরিবর্তিত হয়ে ‘উ বা উ-কার’ হয়ে যেতে পারে। যেমন ওঠো > উঠো, ছোটা > ছুটা ইত্যাদি।
৫. খাওয়া, যাওয়া, গাওয়া, দেওয়া, নেওয়া ইত্যাদি ক্রিয়াপদের প্রথম বর্ণের ‘আ-কার, এ-কার’ পরিবর্তিত হয়ে শব্দের শেষে ‘ও-কার’-রূপে যুক্ত হবে। যেমন খাওয়া > খেয়ো, গাওয়া > গেয়ো ইত্যাদি।
৬. কৃদন্ত শব্দ ক্রিয়াপদরূপে ব্যবহৃত হলে সে সব ক্ষেত্রে ‘ও-কার’ বসানো যাবে না। কেউ কেউ আজকাল ‘পাঠান, দেখান, করান’ ইত্যাদির পরিবর্তে ‘পাঠানো, করানো, দেখানো’ লিখে থাকেন। এমনটি সমীচীন নয়। ‘ও-কার যুক্ত করলে শব্দগুলো ক্রিয়াবিশেষ্যজাত বিশেষণে পরিণত হয়। যেমন জাপান হতে ‘আনানো’ জিনিস। কামার দিয়ে ‘বানানো’ পাতিল। এখানে ‘আনানো এবং ‘বানানো’ ক্রিয়াবিশেষ্যজাত বিশেষণ, ক্রিয়া নয়।
৭. ক্রিয়াপদের সঙ্গে ‘ছিল’ যুক্ত হলে নিত্য অতীত বা সাধারণ অতীত কাল বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত ‘ছিল’ শব্দটি ক্রিয়াপদের সঙ্গে সেঁটে থাকবে, পৃথক বসবে না। যেমন খেয়েছিল, বসেছিল, গিয়েছিল, নিয়েছিল, পেয়েছিল, বলেছিল ইত্যাদি।
৮. ক্রিয়াপদের সঙ্গে ‘না, নাই, নি’ ইত্যাদি ‘না-বাচক’ শব্দ যুক্ত হলে তা পৃথক বসবে। যেমন যাব না, খাব না, দেখি নাই, বলি নাই, দেখি নি, মারি নি। অনেকে ‘নি’ পদটিকে একত্রে লেখার পক্ষে। যেমন আনন্দবাজার অনুসৃত বাংলা বানান বিধিতে ক্রিয়াপদের সঙ্গে ‘নেই’ শব্দের চলিত রূপ ‘নি’ শব্দটি সেঁটে বসানোর পক্ষে বলা হয়েছে। বাংলা একাডেমি পৃথক বসানোর পক্ষে বললেও পরবর্তীকালে আবার ‘নি’ শব্দকে ক্রিয়াপদের সঙ্গে সেঁটে লিখছে। যদিও বাংলা একাডেমি এ বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট মত দেয়নি। এরূপ দ্বৈত-নীতির কারণে বাংলা ভাষা এখনও আদর্শরীতি প্রতিষ্ঠা করতে পারছে না।
৯. চলিত ভাষায় গদ্য রচনায় ‘সাথে, মাঝে, শোয়া, দেয়া, নেয়া’ ইত্যাদি না লিখে ‘সঙ্গে, মধ্যে, শোওয়া, দেওয়া, নেওয়া’ লিখুন। এটি গদ্যকে শানিত এবং কবিতাকে সৌকর্যময় করে তোলে। মেয়ের পোশাক যেমন ছেলেদের গায়ে বেমানান, তেমনি কিছু শব্দ আছে যা কবিতায় মানায় কিন্তু গদ্যে মানায় না। যেমন সাথে, মাঝে, তব, লহ, মোর ইত্যাদি।
বহুবচনের ব্যবহার
১. বাক্যে বহুবচনের দ্বিত্ব হবে না। যেমন ছাত্রীরা সবাই সমস্বরে চিৎকার দিয়ে উঠল। এ বাক্যে একই বিশেষণের জন্য ‘ছাত্রীরা’ ও ‘সবাই’ দুটো বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে। বাক্যটি ভুল। শুদ্ধ হবে ‘ছাত্রীরা সমস্বরে চিৎকার দিয়ে উঠল’ কিংবা ‘সব ছাত্রী সমস্বরে চিৎকার দিয়ে উঠল’।
অনেকে বাক্যের সৌন্দর্যের জন্য সীমিতমাত্রায় বহুবচনের দ্বিত্ব প্রয়োগ দূষণীয় নয় বলে থাকেন। তা কিন্তু বর্জনীয়, এ রীতি প্রচলিত হলে বাক্য ও ভাষায় সে¦চ্ছাচারিতা বেড়ে যাবে। মনে রাখবেন, সাজগোছ ভালো কিন্তু অতিরিক্ত কোনো কিছু ভালো নয়। শ্রুতিমাধুর্যের নামে বাক্যে স্বেচ্ছাচারিতার প্রশ্রয় সৌন্দর্যের নামে ক্রমশ পরিধেয় বস্ত্র ছোট করে ফেলার নামান্তর।
সখিরা সব এল ঐ, ছেলেরা সব গেল কই। শুধু শ্রুতিমাধুর্যের জন্যই বাক্য দুটোয় বহুবচনের দ্বিত্ব ঘটানো হয়েছে। এমনটি করা উচিত নয়। এটি শুধু সৌন্দর্যের জন্য শালীনতা ত্যাগ করার মতো অগ্রহণীয়। কবিতা লেখার জন্য যাঁদের অহরহ ব্যাকরণের রীতিনীতি ভাঙতে হয় তাঁদের কবিতা লেখা উচিত নয়। গাড়ি চালাতে গিয়ে যে ড্রাইভার বারবার দুর্ঘটনা ঘটায় তার গাড়ি চালানো উচিত নয়।
২. বহুবচন রূপ দেওয়ার জন্য বহুল ব্যবহৃত বর্ণগুচ্ছ ‘রা, এরা, গুলি, গুলো, দের, দিগের, গণ, বৃন্দ, সমূহ, সব, সকল, সমুদয়, কুল, বর্গ, নিচয়, পাল, রাশি, রাজি, নিকর, মালা, আবলি, উচ্চয়, গুচ্ছ, গ্রাম, জাল, দাম, নিকর, ব্রজ, মালা, রাজি, সমুচ্চয়, সংঘ, কুল, পাল, ব্রাত, মহল, যূথ ইত্যাদি।
৩. উন্নত প্রাণিবাচক শব্দের সঙ্গে সাধারণত ‘রা বা গণ’ ব্যবহার করা হয়। তবে কবিতায় ‘অ-প্রাণি’ কিংবা ইতরপ্রাণির সঙ্গেও ‘রা/গণ’ ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। অ-প্রাণিবাচক শব্দে সাধারণভাবে ব্যবহৃত বর্ণগুচ্ছ হচ্ছে : ‘আবলি/আবলী (পদাবলী), উচ্চয় (পু®েপাচ্চয়), গুচ্ছ (শব্দগুচ্ছ), জাল (শরজাল), দাম (শৈবালদাম), নিকর (পু®পনিকর), ব্রজ (ভূধরব্রজ), মালা (কথামালা), রাজি (বৃক্ষরাজি), সমুচ্চয় (বচনসমুচ্চয়), রাশি (ফুলরাশি), সংঘ (শিশুসংঘ)’ ইত্যাদি।
প্রাণিবাচক শব্দে ব্যবহৃত বহুবচনবাচক বর্ণগুচ্ছগুলো : ‘কুল (বিহঙ্গকুল), পাল (মৃগপাল), ব্রাত (মধুকরব্রাত), মহল (রমণীমহল), যূথ (মৃগযূথ), গণ (সখিগণ), বৃন্দ (অতিথিবৃন্দ), বর্গ (প্রজাবর্গ), মণ্ডল (শিক্ষকমণ্ডলী)’। ‘চয়, দল, নিচয়, পুঞ্জ, মণ্ডল, শ্রেণি, সমূহ, কুল, সকল ও সব’ প্রত্যয়গুলোকে প্রাণিবাচক ও অপ্রাণিবাচক উভয়ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়।
৪. বহুবচনবাচক বর্ণগুচ্ছ সাধারণত শব্দের পরে বসে। তবে ‘সারা, কিছু, বিভিন্ন, হরেক, অঢেল, অনেক, বিস্তর, বহু, নানা, ঢের, অগণিত, অন্যান্য, অসংখ্য, যাবতীয়, সমস্ত, সমুদয়’ বহুবচনবাচক প্রত্যয় শব্দের আগে বসে।
যেমন ‘সারা বছর, কিছু কলা, বিভিন্ন লোক, হরেক রকম, অঢেল টাকা, অনেক দিন, বিস্তর স¤পদ, বহু দিন, নানা কথা, যাবতীয় তথ্য, সমস্ত কৌশল, সমুদয় ভাবনা’ ইত্যাদি। মনে রাখা উচিত, বহুবচনবাচক এ শব্দাবলি বিশেষ্যের পূর্বে আলাদাভাবে বসে।
৫. বিশেষ্য কিংবা বিশেষণ পদের দ্বিত্ব প্রয়োগের মাধ্যমে বহুবচন বুঝানো হয়। যেমন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা, মণ মণ ধান, রাশি রাশি বই, হাজার হাজার মানুষ, লাখ লাখ পাখি, কোটি কোটি তারা ইত্যাদি।
৬. শব্দের শেষে ও-যুক্ত করে বহুবচন প্রকাশ করা যায়। যেমন হাজারো কথা, লাখো শহিদের রক্ত-ভেজা স্বাধীনতা মোর। এখানে ‘হাজারো’ এবং ‘লাখো’ বহুবচনরূপে ব্যবহৃত হয়েছে।
৭. বিদেশি প্রত্যয়যোগ করে বাংলা ভাষায় কিছু কিছু শব্দকে বহুবচনে পরিণত করা হয়। যেমন মুরিদ + আন = মুরিদান, কাগজ + জাত = কাগজাত ইত্যাদি।
এখানে বিদেশি ‘-আন’ ও ‘-আত’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে শব্দ দুটো বহুবচনে পরিণত হয়েছে।