Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
দাপ্তরিক প্রমিত বাংলা বানান – Page 9 – Dr. Mohammed Amin

দাপ্তরিক প্রমিত বাংলা বানান

২৭. সাধারণত সরাসরি উদ্ধৃতির ক্ষেত্রে ইনভারটেড কমা (“ ”) ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য ক্ষেত্রে এর ব্যবহার সমীচীন নয়। ওই সব ক্ষেত্রে ঊর্ধ্ব-কমা (‘ ’) ব্যবহার করুন।
২৮. পত্রে ‘সূত্রস্থ’ লেখা বাঞ্ছনীয় নয়। এর পরিবর্তে ‘সূত্রে উল্লিখিত’ বাগ্ভঙ্গিটি লিখুন। এটি যেমন শ্রুতিমধুর তেমনি সহজবোধ্য।
২৯. পত্রে প্রয়োজনবোধে বহুল পরিচিত আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের নাম উল্লেখই যথেষ্ট। এরূপ সংস্থার নামের শেষে দেশ বা অবস্থান লেখার প্রয়োজন নেই। তবে অপরিচিত সংস্থাসমূহের ক্ষেত্রে দেশ ও অবস্থান লেখা উচিত। এককথায়, পত্র এমনভাবে লেখা উচিত যাতে তা প্রেরকের কাছে এর স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে উপস্থাপিত হয়।
৩০. বাংলায় কোনো পত্র লেখার সময় যতদূর সম্ভব বাংলা শব্দ ব্যবহার করা উচিত। যে সব প্রতিষ্ঠানের নাম বাংলায় প্রচলন ও পরিচিতি লাভ করেছে, সেগুলো বাংলায় লেখা উচিত। প্রয়োজনবোধে বাংলার সঙ্গে ইংরেজি প্রতিশব্দ ব্র্যাকেটে লেখা যেতে পারে। অনেকে বাংলায় লিখিত পত্রে মাঝে মাঝে ইংরেজি শব্দ বসিয়ে দেন। এটি উচিত নয়।
৩১. বাংলা ভাষায় লেখা কোনো পত্রের বাক্য-সূচনা ইংরেজি শব্দ, ভরমঁৎব কিংবা ধননৎবারধঃরড়হ দিয়ে করা ঠিক নয়। কোথাও ধননৎবারধঃরড়হ ব্যবহার করতে হলে প্রথম ব্যবহারের সময় সম্পূর্ণ নাম এবং ব্র্যাকেটে ধননৎবারধঃরড়হ লিখে অতঃপর ধননৎবারধঃরড়হ লেখা যেতে পারে।
৩২. কোনো সভায় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে সচিব বা অন্য কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার জন্য প্রণীত খসড়ায় সাদামাটাভাবে ‘এ বিভাগের অনাপত্তি তুলে ধরা যেতে পারে’ না-লিখে সুস্পষ্ট মন্তব্য/সুপারিশ উল্লেখ করা সমীচীন।
৩৩. ইংরেজিতে পত্র বা প্রতিবেদন লেখার সময় অনাবশ্যকভাবে রোমান হরফ বা ক্যাপিট্যাল লেটারের (পধঢ়রঃধষ ষবঃঃবৎ) ব্যবহার পরিহার করতে হবে। ইংরেজি ভাষায় যে সব ক্ষেত্রে পধঢ়রঃধষ ষবঃঃবৎ ব্যবহারের বিধান রয়েছে কেবল সেসব ক্ষেত্রে তা ব্যবহার করতে হবে।
৩৪. ‘অত্র’ শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘এখানে’। ‘অত্র’ না লিখে ‘এ’ বা ‘এই’ লিখুন। ইতঃপূর্বে লিখুন, ইতিপূর্বে নয়। এতদ্বারা নয়, লিখুন এতদ্দ¦ারা।
৩৫. বচন পরিবর্তনে প্রমিত-রীতি অনুসরণে সতর্ক থাকতে হবে। অনেকে কর্মকর্তার বহুবচন-প্রকাশে লেখেন ‘কর্মকর্তাগণ, কর্মকর্তাবৃন্দ’ কিন্তু নেতার বহুবচন-প্রকাশে লেখেন : নেত্রীবৃন্দ। এমনটি করা সমীচীন নয়। লিখুন কর্মকর্তৃগণ বা কর্মকর্তৃবৃন্দ, শ্রোতৃবৃন্দ প্রভৃতি। কোনো শব্দের শেষে তা থাকলে তা বহুবচন করার সময় ‘ত’-এর নিচে র-ফলা যুক্ত হয়। এটাই ব্যাকরণের নিয়ম। অতএব নেতা শব্দের বহুবচন যে কারণে নেতৃবৃন্দ বা নেতৃগণ সে একই কারণে কর্মকর্তা শব্দের বহুবচন কর্মকর্তৃবৃন্দ বা কর্মকর্তৃগণ।
৩৬. একই বাক্যে একই পদের জন্য একাধিক বহুবচনাত্মক পদের প্রয়োগ বাক্যকে হাস্যকর ও বাহুল্যদোষে দুষ্ট করে তোলে। যেমন সব অফিসারবৃন্দ যথাসময়ে হাজির হয়েছেন। এখানে ‘সব’ যেহেতু বহুবচনাত্মক পদ সুতরাং পুনরায় অফিসার শব্দের সঙ্গে বহুবচনাত্মক পদ যুক্ত করা সমীচীন নয়।
৩৭. বিভিন্ন পত্র ও সার-সংক্ষেপে কখনো কখনো ‘সুতারং’, ‘উল্লেখিত’ ও ‘তদানুযায়ী’ ইত্যাদি লেখা হচ্ছে। এগুলো অশুদ্ধ বানান। এ শব্দগুলোর শুদ্ধ বানান হচ্ছে যথাক্রমে সুতরাং, উল্লিখিত, তদনুযায়ী।
৩৮. ‘সফরকালীন সময়ে’ বা ‘মেয়াদকালে’ বা চলাকালীন সময়ে বাগ্ভঙ্গির শুদ্ধ রূপ হচ্ছে যথাক্রমে : ‘সফরকালে’ এবং ‘মেয়াদে’ ও চলাকালীন/চলাকালে।
৩৯. ‘যেন’ ও ‘যাতে’ শব্দদ্বয় অনেক সময় অভিন্ন অর্থে ব্যবহার করা হয়। তবে শব্দদ্বয়ের অর্থে সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে। তাই ‘যেন’ শব্দের পরিবর্তে ‘যাতে’ কিংবা ‘যাতে’ শব্দের পরিবর্তে ‘যেন’ ব্যবহার সমীচীন নয়। দাপ্তরিক পত্রে সার্বিক বিবেচনায় ‘যাতে’ শব্দটির ব্যবহার অধিক যুক্তিযুক্ত।
৪০. ‘সাথে’ শব্দের পরিবর্তে ‘সঙ্গে’, ‘প্রেক্ষিতে’ শব্দের পরিবর্তে ‘পরিপ্রেক্ষিতে’, ‘আর্থিক-সহায়তার’ পরিবর্তে ‘আর্থিক-সহায়তা’ এবং ‘ুড়ঁৎ য়ঁরপশ ৎবংঢ়ড়হংব’ এর পরিবর্তে ’ুড়ঁৎ বধৎষু ৎবংঢ়ড়হংব’ লেখা সমীচীন। তবে এটি কোনো ব্যাকরণ-সিদ্ধ কঠিন কোনো বিধি নয়। কিন্তু বাক্যের সৌন্দর্য, আধুনিক প্রমিত রীতির অভিন্ন মান বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন।
৪১. গরমিল, বিদ্যুৎ, উচিত, যাবৎ এ শব্দগুলোর বানানের শুদ্ধতার প্রতি যত্নবান হওয়া বাঞ্ছনীয়।
৪২. স্মরণ, শরণ, সরণ এ শব্দগুলোর অর্থ ভিন্ন। এগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন থাকা দরকার।
৪৩. ঘটনোত্তর, যুগোপযোগী, পরিষ্কার, পুরস্কার, রক্ষণ, অসম, সুষম, পরিষেবা, উপর্যুক্ত এ শব্দগুলোর বানান অনেকে ভুল করে থাকেন। এ সব শব্দের বানান যাতে ভুল না-হয় তদ্বিষয়ে সতর্কতা বাঞ্ছনীয়।
৪৪. বিশেষণ সর্বদা সংশ্লিষ্ট বিশেষ্যের অব্যবহিত পূর্বে রাখা বাঞ্ছনীয়। যেমন ‘খাটি গরুর দুধ’ নয়, লিখুন : গরুর খাঁটি দুধ। ‘বিজ্ঞ বিরোধীপক্ষের আইনজীবী’ নয়, লিখুন : ‘বিরোধীপক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবী’ প্রভৃতি।
৪৫. অনেকে ‘ও’ আর ‘এবং’-এর ব্যবহার গুলিয়ে ফেলেন। বস্তুত ‘এবং’ যুক্ত করে দুটি বাক্য বা বাক্যাংশকে। যেমন কামাল ও জামালের বিরোধ মীমাংসা হয়ে গিয়েছে এবং উভয়ের মধ্যে আবার নতুনভাবে ব্যবসায় শুরু হয়েছে। অন্যদিকে ‘ও’ সংযুক্ত করে দুটি পদকে। যেমন আম, জাম, লিচু ও কলা দেশীয় ফল।
৪৬. ‘এমতাবস্থায়’ শব্দের চেয়ে ‘এ অবস্থায়’ অতএব, তাই প্রভৃতি অনেক শ্রুতিমধুর। ‘এ অবস্থায়’ লিখলে এ বাগ্ভঙ্গিটির পর কমা দিতে হবে। অধিকন্তু এমতাবস্থায় শব্দটি প্রায়োগিক ও ব্যাকরণগত বিবেচনায় শুদ্ধ নয়।
৪৭. ‘উপ’, ‘সহ’ প্রভৃতি বিশেষণবাচক শব্দ পরের শব্দের সঙ্গে যুক্ত করে লিখতে হবে। যেমন উপসচিব, উপপরিচালক, সহসভাপতি। কিন্তু ‘যুগ্ম’ শব্দটি আলাদা বসবে। যেমন যুগ্ম সচিব।
৪৮. বাংলা হরফের মধ্যে ব্যবহৃত ইংরেজি হরফ বাংলার চেয়ে ২ পয়েন্ট ছোট হবে।
৪৯. চিঠিপত্রে বহুল-ব্যবহৃত ‘সবিনয়ে অনুরোধ’ বাগ্ভঙ্গিটি বাহুল্য দোষে দুষ্ট। অনুরোধ সবসময় বিনয়পূর্বক করা হয়। তাই অনুরোধের ক্ষেত্রে ‘সবিনয়’ শব্দটি বাহুল্য।
৫০. ‘ইহা মহোদয়ের সদয় অবগতির জন্য প্রেরণ করা হলো’ এ বাক্যে সাধু-চলিতের মিশ্রণ রয়েছে। বাক্যটি লিখবেন এভাবে ‘মহোদয়ের সদয় অবগতির জন্য এই পত্র প্রেরণ করা হলো’ অথবা লিখুন, ‘মহোদয়ের সদয় অবগতির জন্য এটি প্রেরণ করা হলো’।
৫১. ‘সাথে’ ও ‘মাঝে’ শব্দ দুটি কবিতা ও পদ্যে বেশি মানায়। গদ্যের ক্ষেত্রে লিখতে হবে ‘সঙ্গে’ ও ‘মধ্যে’।
৫২. শব্দের শেষে বিসর্গ দেবেন না। যেমন সাধারণত, কার্যত, মূলত, বস্তুত, প্রধানত, প্রায়শ প্রভৃতি বাক্যের শেষে অনেকে বিসর্গ দিয়ে লেখেন। যেমন সাধারণতঃ, কার্যতঃ, মূলতঃ, বস্তুতঃ, প্রধানতঃ, প্রায়শঃ প্রভৃতি। এমন লিখবেন না।
৫৩. না-বাচক অব্যয়সমূহের মধ্যে ‘না’ শব্দের অন্ত্যে সেঁটে বসবে না। যেমন খাব না, পাব না, দেব না, আমি না ইত্যাদি। তবে না-বাচক ‘নি’ পূর্ববর্তী শব্দের সঙ্গে সেঁটে বসবে। যেমন খাইনি, পাইনি, যাইনি প্রভৃতি।
৫৪. ‘ভূ’ মানে ভূমি, মাটি, পৃথিবী প্রভৃতি। ভূগোল, ভূমণ্ডল, ভূমিকম্প, ভূপৃষ্ঠ, ভূতল, ভূধর, ভূম, ভূম্যাধিকারী, ভূলোক, ভূর্লোক প্রভৃতি বানানে ‘দীর্ঘ ঊ-কার’ হলেও ‘ভুবন’ বানানে ‘হ্রস্ব উ-কার। ভূগোল, ভূমণ্ডল, ভূমিকম্প, ভূপৃষ্ঠ, ভূতল, ভূধর, ভূম, ভূম্যাধিকারী, ভূলোক, ভূর্লোক প্রভৃতি শব্দের উৎসমূল ‘ভূ’ বা ‘ভূমি’ বা ‘মাটি’ কিন্তু ভুবন শব্দের উৎসমূল ‘ভূ’ বা মাটি নয়। ভারতীয় পুরাণে বর্ণিত ‘সপ্তস্বর্গ ও সপ্তপাতাল’কে একত্রে ভুবন বলা হয়। ভুবন নিজেই একটি নির্দিষ্ট অর্থ স্বাধীনভাবে ধারণ করে। ‘ভুবন’ এর ‘ভু’ যেমন মাটি নয়, তেমনি এর অন্তর্গত ‘বন’ কোনো জঙ্গলও নয়। কাজেই নজরুল ‘ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ’ গজলে ‘ত্রিভুবন’ বলতে শুধু পৃথিবীকে প্রকাশ করেননি, ‘সপ্তস্বর্গ ও সপ্তপাতাল’ও বুঝিয়েছেন। তবে ‘ভূ’ বা ‘ভূমি’ বা ‘মাটি’ যেহেতু ‘ভুবন’-এর একটি অংশ তাই অনেকে ভুবন শব্দটি ‘পৃথিবী’র একটি সমার্থক শব্দ হিসাবেও ব্যবহার করে থাকেন।