ড. মোহাম্মদ আমীন
বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত ও সংস্কৃত ‘দীর্ঘিকা’ হতে উদ্ভূত খাঁটি বাংলা ‘দিঘি’ শব্দের অর্থ— খনন করা হয়েছে এমন গভীর ও বৃহদাকার স্থির জলাশয়, সরোবর প্রভৃতি। দীঘি ছিল একসময় বাংলাদেশের শহর ও গ্রামের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। গ্রামের প্রায় মাঝখানে কিংবা খননে অর্থদাতা বা শাসকগণের ইচ্ছেমতো স্থানে বিশাল প্রস্তুতি নিয়ে দিঘি খনন করা হতো। তৎকালীন রাজা-বাদশা, জমিদার কিংবা প্রভাবশালী ধনাঢ্য ব্যক্তিরা প্রজাসাধারণের পানীয় জলের অভাব দূর করার জন্য বা সেবামূলক কাজ হিসেবে কিংবা পুণ্য অর্জন, মানত রক্ষা অথবা নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দিঘি খননে অর্থ ব্যয় করতেন বা উদ্যোগ নিতেন। একসময় নদী ছাড়া দিঘি ছিল জনগণের বিশুদ্ধ পানীয়জলের অন্যতম উৎস। পানীয়জলের অভাব মেটানো ছাড়াও দিঘি ছিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের অন্যতম স্থান, দিঘির অদূরে গড়ে উঠত হাটবাজার, অফিস-আদালত, প্রভাবশালীদের বাড়িঘর ইত্যাদি। দিঘি ছিল গ্রামের ঐতিহ্য আর সমৃদ্ধির প্রতিক। দিঘি নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক গল্প, কবিতা, রূপকথা।ব্যথা-বেদনার কত কহিনি জড়িয়ে আছে দিঘি নামটির সঙ্গে। রামসাগর দিঘি, মহারাজার দিঘি, কমলারানি দিঘি, খানদিঘি প্রভৃতি বাংলাদেশের কয়েকটি বিখ্যাত দিঘি।
অন্যদিকে, সংস্কৃত ‘পুষ্কর’ থেকে উদ্ভূত খাঁটি বাংলা শব্দ ‘পুকুর’-এর অর্থ পুষ্করিণী, ছোটো জলাশয়। এককথায় বলা যায়, বৃহৎ জলাশয় হলো দিঘি আর তুলনামূলকভাবে ছোটো জলাশয় হলো পুকুর। তবে, জলাশয়ের আয়তন কত হলে পুকুর এবং কত হলো দিঘি হয় তার কোনো সুনির্দিষ্ট পরিমাপ নেই। অনেক সময় বড়ো আকৃতির গর্তকেও পুকুর বলা হয়। আবার অনেক সময় অনেক দিঘির মতো বড়ো আকারের জলাশয়কেও পুকুর বলা হয়। তবে নামটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে খননের সময় নির্ধারিত হয়ে যেত। সব দিঘিতে সারাবছর পানি থাকে, কিন্তু সব পকুরে সারাবছর পানি থাকে না। সাধারণত দিঘি, সংশ্লিষ্ট শাসকগণের উদ্যোগে খনন করা হতো।পুকুর খনন করা হতো ব্যক্তিগত উদ্যোগে। এখন দিঘি খনন করা বন্ধ হয়ে গেছে বলা যায়। তবে গ্রামেগঞ্জে এখনও নানা প্রয়োজনে পুকুর খনন করা হয়।