ড. মোহাম্মদ আমীন
অভিধানমতে, ‘দেয়া’ শব্দের অর্থ দেওয়া (give) নয়, ‘দেয়া’ শব্দের অর্থ মেঘ, আকাশ প্রভৃতি। কিন্তু প্রয়োগমতে, দেওয়া শব্দের অর্থ হিসেবে দেয়া হরদম ব্যবহার হচ্ছে বাংলাভাষীর মুখে আর কলমে।
রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন :
“রিম্ ঝিম্ রিম্ঝিম্ ঘন দেয়া বরষে
কাজরি নাচিয়া চল, পুর-নারী হরষে।”
কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন :
“এসো হে সজল শ্যাম-ঘন দেয়া
বেণু-কুঞ্জ-ছায়ায় এসো তাল-তমাল বনে
এসো শ্যামল ফুটাইয়া যূথী কুন্দ নীপ কেয়া।”
বাক্যে ক্রিয়া হিসেবে ব্যবহৃত ‘দেওয়া’ শব্দের অর্থ হচ্ছে: give, কোনোকিছু প্রদান করা, উপহার প্রদান প্রভৃতি। যেমন: তাকে একটি বই দেওয়া হলো। আঞ্চলিক বা কথ্য ভাষায় ‘দেওয়া’ অর্থে ‘দেয়া’ শব্দের ব্যবহার করা হয়। অভিধানে প্রদত্ত অর্থ বিবেচনা করলে প্রমিত রীতিতে ‘দেওয়া’ অর্থে দেয়া লেখা সংগত নয়। কোনোকিছু বহন করা বা গ্রহণ করা, ক্রয়া করা প্রভৃতি অর্থ প্রকাশে ‘নেওয়া’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। যেমন : আমার কিছু বই নেওয়া দরকার। বিমানের টিকেট নেওয়া হলো। অন্যদিকে ‘নেয়া’ হচ্ছে ‘নেওয়া’ শব্দের আঞ্চলিক রূপ, যা প্রমিত রীতিতে ব্যবহার করা অসংগত।
অসংগত হলেও চলিত রীতিতে দেওয়া অর্থে দেয়া এবং নেওয়া অর্থে নেয়া শব্দের প্রয়োগ এত বহুল যে, অনেক খ্যতিমান কবি-সাহিত্যিকদের লেখাতেও এই অসংগত বানান হরদম দেখা যায়। বিখ্যাত ‘দেয়া নেয়া’ ছবির কথা এখনো মনে ভাসে, হার্দিক মমতায়, এখনো আমি দেখি সেই গভীর আবেগে।
এই নিবন্ধে আমি ‘দেয়া’ ও ‘নেয়া’ শব্দের ব্যাকরণিক অর্থের বিশ্লেষণ করেছি মাত্র। তবে, প্রচলন ব্যাকরণের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, অনেক বেশি প্রভাবশালী। অধুনা দেয়া-নেয়া বহুল প্রচলিত শব্দ। তাই এদের এখন অশুদ্ধ বলে দাবিয়ে রাখা যাবে না। যাকে দাবিয়ে রাখা যাবে না, তাকে অশুদ্ধ বলে লাভ নেই। এখন দেওয়া অর্থে দেয়া বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। শব্দের স্বীকৃতি প্রচলনে। প্রচলন বিবেচনায় ‘দেয়া’ শব্দটি ‘দেওয়া’ অর্থে ব্যবহার ও প্রয়োগের সকল শুদ্ধতা বহু আগে অর্জন করে বসে আছে। অতএব, দেওয়া’ অর্থে ‘দেয়া’ প্রচলনগতভাবে নিঃসন্দেহে সংগত এবং জনপ্রিয়তা বিবেচনায় তাকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
গীতি ও সংগীত : নজরুলগীতি ও রবীন্দ্রসংগীতের পার্থক্য
প্রায়শ ভুল হয় এমন কিছু শব্দের বানান/২
পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি. পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি. মোবাইল: ০১৮১৯ ৮৮৫৮১৭ পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.