ড. মোহাম্মদ আমীন
দোয়া দুয়া; ভুঁই ভুঁইয়া ভূঞা ভূঁঞা ভূঁইঞা; না কি নাকি; পতাকাবিদ্যা, ভেক্সিলিলোজি
দোয়া ও দুয়া
বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত আরবি ‘দোয়া’ ( উচ্চারণ: দোআ) শব্দের অর্থ প্রার্থনা, আশীর্বাদ, মঙ্গলকামনা প্রভৃতি।‘দুয়া’ একটি আঞ্চলিক শব্দ। এর সঙ্গে ‘দোয়া’ শব্দের কোনো সম্পর্ক ও মিল নেই। চট্টগ্রাম অঞ্চলে ‘দুয়া’ শব্দটি দুটি(দুইটি) অর্থ প্রকাশে ব্যবহার করা হয়।
ভুঁই ভুঁইয়া ভূঞা ভূঁঞা ভুঁইয়া ভূঁইঞা
ভুঁই: সংস্কৃত ভূমি থেকে উদ্ভূত ভুঁই অর্থ ভূমি, চাষের জমি (রবীন্দ্রনাথের ভাষায়: শুধু বিঘে দুই ছিলো মোর ভুঁই- – -। বিদেশবিভুঁই।
ভুঁইয়া: বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, সংস্কৃত ভৌমিক থেকে উদ্ভূত খাঁটি বাংলা শব্দ ভুঁইয়া অর্থ বিশেষ্যে প্রাচীন জমিদার বা সামন্তরাজ, ভূস্বামী ( যেমন: বারোভুঁইয়া); পদবিবিশেষ। তবে নাম বা নামের অংশ হিসেবে ভূইয়া, ভুঁইয়া, ভূঁইয়া, ভুঞা, ভূঞা, ভূঁঞা প্রভৃতি বানান দেখা যায়। এসব বানান নামধারীর নাম বা নামের অংশ হিসেবে ব্যক্তিগত নামশব্দ। এর সঙ্গে প্রমিত বানানের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রমিত বানান একটাই: ভুঁইয়া।
সূত্র: কোথায় কী লিখবেন বাংলা বানান: প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.
না কি বনাম নাকি
না কি: কিছু জানার বা ব্যাখ্যা চাওয়ার প্রশ্নে না কি লিখুন। বাক্যে এটি অর্থবহ পদ। তাই বাক্য হতে ‘না কি’ তুলে নিলে অর্থের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে বা বাক্যটি আদর্শমান হারিয়ে ফেলে কিংবা অর্থহীন হয়ে যায়। যেমন:
১. তুমি এখন কক্সবাজার না কি চট্টগ্রাম?
২. কাঁঠাল না কি আনারস?
৩. তুমি না কি আমি?
ওপরের বাক্যসমূহ (১ ২ ৩) থেকে না কি তুলে নিলে বাক্যের অর্থ পরিবর্তন হয়ে যাবে।
নাকি: নাকি আলংকারিক পদ। প্রকৃতপক্ষে বাক্যে এর কোনো অর্থ থাকে না। ‘নাকি’ পদের কাজ কেবল অলংকারের মতো সৌন্দর্য-বর্ধন। তাই নাকি পদটি বাক্য হতে তুলে নিলেও অর্থের পরিবর্তন ঘটে না।যেমন:
৪. সে নাকি বিদেশ যাবে।
৫. তুমি নাকি আমার সঙ্গে যাবে না?
৬. তার ভাই নাকি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে।
৪ ৫ ও ৬ নং বাক্য থেকে নাকি তুলে নিলেও বাক্যের অর্থের পরিবর্তন হবে না।
এই সাধারণ নিয়মগুলো মনে রাখলে আশা করি আর ভুল হবে না।
সূত্র: ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।
ভেক্সিলিলোজি
পতাকাবিষয়ক অধ্যয়নকে ভেক্সিলিলোজি (vexillology) বা পতাকাবিদ্যা বলা হয়। লাতিন ভাষায় ভেক্সিলাম (vexillum) অর্থ পতাকা। ইংরেজি ভাষায় এটাকে বলা হয় ফ্ল্যাগ।
ঠাকুর (পদবি) এল যেভাবে
‘ঠাকুর’ বাংলার শ্রেষ্ঠ কবি রবীন্দ্রনাথের পদবি হিসেবে বহুল পরিচিত একটি শব্দ। শব্দটি ছিল তুর্কি ভাষায় ‘তিগির/ তাগরি’।তুর্কি থেকে এসে শব্দটি সংস্কৃত ও প্রাকৃতে হয়ে যায় ‘ঠক্কুর’। বাংলায় ঠক্কুর থেকে হলো ‘ঠাকুর’। কেউ কেউ মনে করেন শব্দটির মূল উৎস ফারসি। যাই হোক, তুর্কি/ফারসি উৎসের শব্দ (তু. তাগরি/তিগির =দেবতা); স. ঠক্কুর>ঠাকুর।
ঠাকুর কোনো বিশেষ ধর্ম বা সম্প্রদায়গত পদবি নয়। চৌধুরি, মজুমদার, মুস্তাফি প্রভৃতি পদবির মতো ঠাকুর পদবিও মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে ধারণ করতেন। যেমন: কোরেশী মাগন ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, হরিদাস ঠাকুর।
বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, ঠক্কুর থেকে উদ্ভূত ঠাকুর অর্থ (বিশেষ্যে) ভগবান, দেবতা, প্রতীমা, প্রভু, শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি, গুরু, ব্রাহ্মণ, পুরোহিত, পাচক ব্রাহ্মণ, পদবিশেষ। স্ত্রীলিঙ্গে ঠাকুরানি।
পদবির চেয়ে অন্যান্য অর্থ বা সম্বোধনে ঠাকুর শব্দটির বহুল ব্যবহার লক্ষণীয়। এক্ষেত্রে শব্দটি হিন্দু সম্প্রদায়ে বহুল প্রচলিত। যেমন, ঠাকুরদা, ঠাকুরমা, ঠাকুর ঘর, ঠাকুরজামাই, ঠাকুরঝি, ঠাকুরদালান, ঠাকুরপূজা, ঠাকুরপো, ঠাকুরমশাই, ঠাকুরাল, বাবুর্চি ঠাকুর, হিন্দু ঠাকুর, মুসলিম ঠাকুর প্রভৃতি।ঠাকুরজামাই তো খুবই পরিচত সম্বোধন:
“বলি ও ননদি আর দুমুঠো চাল ফেলে দেয় হাঁড়িতে
ঠাকুরজামাই এল বাড়িতে
ও ননদি ঠাকুরজামাই এলো বাড়িতে—”।
সূত্র: পৌরাণিক শব্দের উৎস ও ক্রমবিবর্তন, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।
ষত্ববিধির ব্যতিক্রম/১
ষত্ববিধিমতে, তৎসম শব্দের বানানে র-এর পরের স, ষ হয়ে যায়। কিন্তু রস, রসায়ন ও রসুন তৎসম শব্দ হওয়া সত্ত্বেও বানানে র-এর পর ষ দেওয়া হয় না কেন?
এই পোস্টের সংযোগ
https://draminbd.com/2021/02/27/দোয়া-দুয়া-ভুঁই-ভুঁইয়া-ভূঞ/
Total Page Visits: 2297 - Today Page Visits: 3