রাশিদা আকতার মিশু
১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে মতান্তরে ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে ৩০ বছর বয়সে কবি নজরুল ইসলামের প্রিয়তমা পত্নী প্রমীলা দেবী পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হলেন। স্ত্রীকে সুস্থ করার জন্য অনেক চেষ্টা-তদ্বির করলেন নজরুল। সম্ভব হয়নি, বরং এক বছরের মাথায় কবি নিজেই দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে বাহ্যজ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। অসুস্থ স্বামীর সেবার ভার গ্রহণ করলেন অসুস্থ স্ত্রী। কিন্তু কারও অসুখ ভালো হলো না। দিন দিন বেড়ে যেতে থাকল উভয়ের অসুখ। এমন মর্মান্তিক দুরবস্থার সঙ্গে কেবল মাইকেল মধুসূদনের পরিণতির তুলনা চলে। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ শে জুন প্রমীলা মারা যান।
প্রমীলার মৃত্যুর পর সনাতন ধর্মমতে তাঁর শেষকৃত্য পালন করা হবে না কি ইসলাম ধর্মমতে কবর দেওয়া হবে— এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। নানাজন নানা মন্তব্য

করছিলেন। একপক্ষ বলছিলেন— প্রমীলা যেহেতু আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেননি, তাই তাঁর শেষকৃত্য সনাতন ধর্মমতে করা হোক। আর একপক্ষ বলছিলেন— তিনি নজরুলের স্ত্রী। মুসলমানের স্ত্রী হিসেবে তাঁকে ইসলাম ধর্মমতে কবর দেওয়া হোক। উভয়পক্ষ তাদের নিজ নিজ দাবিতে অনড় থেকে বাকবিতণ্ডা শুরু করে দিলেন। অসুস্থ নজরুল তখন একটা জীবন্ত লাশ, কেবল হা করে তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছু করার সামর্থ্য তার ছিল না। তিনি সুস্থ থাকলে এ বিষয়ে কোনো সমস্যা ছিল না। বিরোধ প্রবল হয়ে উঠলেও শেষ পর্যন্ত কবির বন্ধু কমরেড মুজফ্ফর আহম্মদের বুদ্ধিমত্তার কারণে সহজে সমাধান হয়ে যায়।
এই প্রসঙ্গে আসাদুল হক তাঁর অন্তরঙ্গ আলোকে ‘নজরুল ও প্রমীলা’ গ্রন্থে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। সবার সামনে এ প্রশ্নের সমাধানকল্পে মুজফ্ফর আহম্মদ কবি নজরুলের পুত্রদ্বয় কাজী সব্যসাচী ও কাজী অনিরুদ্ধ এবং কাজী আব্দুস সালাম ওরফে হাদু সবাইকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, “প্রমীলা মৃত্যুর আগে কি এ বিষয়ে কোন কথা বলে গেছেন? কাজী সব্যসাচী জানালেন, মা সরাসরি কিছু না বললেও একথা তিনি বারবার বলেছেন, “সারাজীবন যাঁর পাশে কাটিয়েছেন— মৃত্যুর পরও যেন তাঁর পাশে থাকতে পারেন। তাঁকে দাহ করা বা সমাহিত করা এ ধরনের কোনো কথা তিনি উচ্চারণ করেননি।” কাজী অনিরুদ্ধ এবং কাজী আব্দুস সালামও একই রকম উত্তর দিলেন। কমরেড মুজফ্ফর তখন উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ করে এ বিষয়ে তাদের মতামত জানতে চাইলেন। অধিকাংশই কবির পুত্রদের বক্তব্য সমর্থন করে বললেন, প্রমীলা এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছু বলেছেন— এমন তাদের জানা নেই।
তখন মুজফ্ফর আহমদ বললেন, প্রমীলার কথার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে মুসলিম প্রথা অনুসারে কবর দেওয়া হবে। এ বিষয়ে আর কেউ প্রতিবাদ করলেন না। উপস্থিত সবার সম্মতি পাওয়ার পর কমরেড মুজফ্ফর আহম্মদের নেতৃত্বে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো— কবিপত্নী প্রমীলার মরদেহ কবির জন্মভূমি চুরুলিয়া গ্রামের পির হাজি পালোয়ানের মাজারের পাশে সমাহিত করা হবে। এরপর প্রমীলার মরদেহ ট্রাকে করে চুরুলিয়া নিয়ে যাওয়া হলো। সবার মত অনুসারে মাজারের পাশে প্রমীলাকে কবর দেওয়া হলো। সবাই বললেন, নজরুল ও প্রমীলা সবসময় পাশাপাশি থাকতে চেয়েছেন। তাই নজরুলের ইচ্ছা বাস্তবায়নের সুবিধার্থে প্রমীলার সমাধির পাশে কিছু জায়গা খালি রাখা হয়। যাতে ভবিষ্যতে নজরুলের মৃত্যুর পর ওখানে তাঁকে সমাহিত করা যায়। তবে ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ শে আগস্ট কবি নজরুল ঢাকায় মারা যাওয়ায় প্রমীলার পাশে তাঁর শেষ অবস্থান করা সম্ভব হয়নি।
বিসিএস প্রিলি থেকে ভাইভা কৃতকার্য কৌশল
ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা বইয়ের তালিকা
বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক