‘না ঘরকা না ঘাটকা’ বহুল প্রচলিত একটি বাংলা প্রবাদ। প্রবাদটি হিন্দি “धोबी का कुत्ता न घर का न घाट का (ধোবি কা কুত্তা ন ঘর কা ন ঘাট কা)” থেকে হিন্দি ন ঘরক ন ঘটকা হয়ে বাংলায় এসে না ঘরকা না ঘাটকা রূপে স্থিতি পেয়েছে।
পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।
হিন্দি মূল প্রবাদে বর্ণিত কুত্তা, কুকুর ইঙ্গিত করলেও প্রবাদটির আসল উৎস-কারণ কুতা। কুতা হিন্দি শব্দ। গাছের গুঁড়ি কেটে বানানো যে পাটাতনের ওপর ধোপারা একসময় আছড়ে আছড়ে কাপড় ধৌত করত সেটাকে হিন্দি ভাষায় কুতা বলা হয়। ধোপাদের জন্য কুতা একটি প্রয়োজনীয় বস্তু। এখন শানবাঁধানো ঘাটের যুগে কুতার কদর বা ব্যবহার আগের চেয়ে অনেক কমে গেলেও এর ব্যবহার অনেক জায়গায় এখনো দেখা যায়।
কুতা ঘরে রাখার জিনিস নয়, কারণ ঘরে এর কোনো কাজ নেই। কুতার সব কাজ ঘাটে। কাপড় কাচার কাজের জন্য ঘাটই তার উপযুক্ত স্থান। তাই কুতাকে ঘাটে রেখে আসা উচিত। কিন্তু চুরি হয়ে যাওয়ার ভয়ে কুতাকে ঘাটে রেখে আসাড. মোহাম্মদ আমীন
যায় না। কাজ শেষে প্রতিদিন অনিচ্ছাসত্ত্বেও ঘরে নিয়ে আসতে হতো।পরদিন আবার ঘাটে নিয়ে যেতে হতো, আবার নিয়ে আসতে হতো কাজ শেষে।বেচার কুতা ঘরেও থাকতে পারত না, ঘাটেও থাকতে পারত না। অর্থাৎ, কুতা এমন একটি জিনিস যাকে স্থায়ীভাবে ঘরে রাখা যায় না, ঘাটেও রাখা যায় না— আবার ফেলেও দেওয়া যায় না। কুতা এবং কুতার প্রতি মানুষের এমন ব্যবহার থেকে ‘না ঘরকা না ঘাটকা’ প্রবাদের উদ্ভব।
সংসারে এমন কিছু মানুষ আছে যাকে ঘরে স্থান দেওয়া যায় না, আবার ঘরের বাইরেও রাখা যায় না. অর্থাৎ যাকে কাছেও রাখা যায় না আবার সম্পূর্ণভাবে দূর করেও দেওয়া যায় না— সেসব মানুষকে প্রকাশের জন্য ধোপার কুতাকে উদাহরণে এনে হিন্দিতে বলা হয় ‘ন ঘর কা, ন ঘট কা’। বাংলায় যা ‘না ঘরকা না ঘাটকা’।
প্রয়োগ: অনেক পরিবারে বৃদ্ধ মা-বাবার অবস্থা না ঘরকা না ঘাটকা।