নিমোনিক প্রমিত বাংলা বানান অভিধান ভুক্তিসমূহ

ড. মোহাম্মদ আমীন
ড. মোহাম্মদ আমীন রচিত নিমোনিক প্রমিত বাংলা বানান অভিধানের কয়েকটি ভুক্তি-বিবরণ নিচে দেওয়া হলো। বইটির প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.। মোট ভুক্তি সহস্রাধিক।

১. অ অ অ: নিমোনিক প্রমিত বাংলা বানান

অ অ অ: অ ভুক্তি তিনটি। অ বাংলা বর্ণমালার প্রথম স্বরবর্ণ ও মৌলিক স্বরধ্বনি অ-এর প্রতীক। ২.অ (অব্য/বিশেষ্যে) সমাসে অন্য পদের পূর্বে

ড. মোহাম্মদ আমীন

অনৌচিত্য, অভাবাদি (অযত্ন), বৈপরীত্য (অশান্ত), অল্পতা (অপ্রতুল) অন্যত্ব (অমুসলিম, অবাঙালি) প্রভৃতি অর্থসূচক বর্ণ; (বাংলায়) প্রবলতাসূচক বর্ণ (অকষ্ট-অত্যন্ত কষ্ট) অত্যন্ত (অমূল্য) প্রভৃতি অর্থ প্রকাশ করে। যেমন: অকমনীয়, অকম্পন, অকর্কশ, অকর্ম, অকর্মণ্য, অকলুষিত, অকল্পনীয়, অকল্যাণকর, অকাতরে, অকলুষ, অকর্মিষ্ঠ, অকার্যকর, অকীর্তি, অকূল, অক্রীত, অক্ষুণ্ন। ৩.অ (অব্যয়ে) সম্বোধন অনুকম্পা প্রভৃতি অর্থসূচক ধ্বনি। অ, বুঝেছি।

২. অংশগ্রহণ, অংশ গ্রহণ: নিমোনিক প্রমিত বাংলা বানান
অংশগ্রহণ, অংশ গ্রহণ: সংস্কৃত অংশগ্রহণ (অংশ+গ্রহণ) অর্থ— যোগ দেওয়া, যুক্ত হওয়া।মনে রাখবেন, যোগ মানে যুক্ত।তাই কোথাও যোগ দেওয়া অর্থ প্রকাশে ‘অংশ’ ও ‘গ্রহণ’ একীভূত হওয়ার মতো সেঁটে বসে। সভাপতি যথাসময়ে সভায় অংশগ্রহণ করেছেন। অংশ গ্রহণ, অর্থ— বুঝে পাওয়া, বুঝে নেওয়া, অংশকে গ্রহণ। বুঝে নিলে অংশ বিযুক্ত হয়ে যায়। অধিকন্তু, অংশ গ্রহণ করলে বা অংশকে গ্রহণ করতে গেলে পক্ষদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। তাই প্রাপ্য অংশকে ‘গ্রহণ করা’ কথাটি ফাঁক রেখে লিখতে হয়। সমিরা ভাইদের কাছ থেকে পিতার সম্পত্তির অংশ গ্রহণ করেছেন।

৩. অংশাংশি, অংশাংশী: নিমোনিক প্রমিত বাংলা বানান

অংশাংশি, অংশাংশী: সংস্কৃত অংশ থেকে উদ্ভূত অংশাংশি অর্থ— (বিশেষ্যে) ভাগবাঁটোয়ারা, ভাগাভাগি। ভাগাভাগি বানানে ই-কার। তাই ভাগাভাগি অর্থদ্যোতক অংশাংশি বানানেও ই-কার। ‘অংশাংশী (অংশ+√অন্‌শ্‌+ ইন্) অর্থ (বিশেষ্যে)— অবতার ও অবতারী, দেবী। নিমোনিক: দেবী বানানে ঈ-কার।তাই অবতার-অবতারী অর্থদ্যোতক ‘অংশাংশী’ বানানেও ঈ-কার। মনে রাখুন: দেবী-সংশ্লিষ্ট সব সংস্কৃত শব্দের বানানের শেষে ঈ-কার দিতে হয়।

৪. অকস্মাৎ, অগ্নিসাৎ, অগ্নিসাক্ষী

সংস্কৃত অকস্মাৎ (ন+কস্মাাৎ) উচ্চারণ অকোশশাঁত্; অর্থ হঠাৎ, সহসা, মুহূর্তের মধ্যে। ষত্ববিধি মতে ক-এর পরের স, ষ হওয়ার কথা। এখানে হয়নি কেন? কারণ সাৎ প্রত্যয়ের

   নিমোনিক প্রমিত বাংলা বানান অভিধান,পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি. ড. মোহাম্মদ আমীন

দন্ত্য-স, মূর্ধন্য-ষ হয় না। যেমন: অগ্নিসাৎ, ভূমিসাৎ, ধূলিসাৎ, বারিসাৎ। এটি না-হয় সাৎ প্রত্যয়ের জন্য হলো, কিন্তু অগ্নিসখা (অগ্নি+সখা), অগ্নিসাক্ষী (অগ্নি+সাক্ষী), অগ্নিসেবন (অগ্নি+সেবন), অগ্নিস্ফুলিঙ্গ (অগ্নি+স্ফুলিঙ্গ) বানানে মূর্ধন্য-ষ হলো না কেন? কারণ এগুলো সমাসবদ্ধ পদ। এখানে সখা, সাক্ষী, সেবন ও স্ফুলিঙ্গ প্রত্যেকটি অর্থবহুল  একক শব্দ এবং বানানে ষ নেই, স রয়েছে। সমাসবদ্ধ পদ না হলে অগ্নিসখা, অগ্নিসাক্ষী, অগ্নিসেবন, অগ্নিস্ফুলিঙ্গ  শব্দগুলোতে স-এর স্থলে ষ হতো। কারণ ষত্ববিধি মতে একই শব্দে অ আ ভিন্ন স্বর, ক্ এবং র্  পরবর্তী বিভক্তি বা প্রত্যয়ের স, মূর্ধন্য-ষ হয়ে যায়।

৫. অকারাদিক্রম:
সংস্কৃত অকারাদিক্রম (অকারাদি+ক্রম) অর্থ (বিশেষ্যে) বর্ণমালার ক্রমানুসারে বিন্যাস। অ থেকে হ পর্যন্ত বর্ণানুক্রমে শব্দ বা নামের বিন্যাসকে অকারাদিক্রম বলা হয়। নিমোনিক: অ হচ্ছে বাংলা বর্ণমালার প্রথম বর্ণ এবং অ-কার হচ্ছে প্রথম কার/স্বরচিহ্ন।অকার মানে অ-কার। অ থেকে শুরু হয় বর্ণমালা। অ-কার হচ্ছে আদি।তাই অকারাদিক্রম= অকার+আদি+ক্রম। অকার আদি থেকে ক্রমান্বয়ে অগ্রসর। শব্দটির বানান লেখার সময় এই নিমোনিক-সন্ধিটি মনে রাখুন।
৬. অকার্যকারী, অকার্যকারিতা
অকার্যকারী, অকার্যকারিতা: সংস্কৃত অকার্যকারী (অকার্য+√কৃ+ইন্) অর্থ (বিণ) অলস, নিষ্ক্রিয়; অকেজো; অপকর্মকারী; দুষ্কৃতী। অকার্যকারী ইন্-প্রত্যয়ান্ত শব্দ। ইন্-প্রত্যয়ান্ত শব্দের শেষে -তা/ত্ব প্রত্যয়াদি যুক্ত হলে ঈ-কার, ই-কার হয়ে যায়। তাই অকার্যকারী, কিন্তু অকার্যকারিতা। অনুরূপ: অদূরদর্শী, কিন্তু অদূরদর্শিতা, অদূরবর্তী, কিন্তু অদূরবর্তিতা, অদ্বয়বাদী কিন্তু, অদ্বয়বাদিতা/ত্ব; অধিকারী, কিন্তু অধিকারিত্ব; অধোগামী, কিন্তু অধোগামিতা, অনাবাসী কিন্তু, অনাবাসিত্ব, অনুগামী কিন্তু, অনুগামিতা।
———————————————————————————–
শুবাচ গ্রুপের লিংক: www.draminbd.com
তিনে দুয়ে দশ: শেষ পর্ব ও সমগ্র শুবাচ লিংক
Language
error: Content is protected !!