পঙ্ক্তির শেষে শব্দ ভাঙার নিয়ম
ড. মোহাম্মদ আমীন
ইংরেজির মতো বাংলাতেও পঙ্ক্তির শেষে শব্দকে ভাঙতে হয়। ইংরেজিতে সিলেবল, সাফিক্স বা প্রিফিক্স অনুযায়ী শব্দ ভাঙার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বাংলায় সুনির্দিষ্ট কোনও নিয়ম নেই। অন্যদিকে যুক্তাক্ষরের জন্য সিলেবল অনুযায়ী বাংলা শব্দকে ভাঙা যায় না। মুদ্রিত গ্রন্থে পঙ্ক্তি বা লাইনের শেষে অনেক সময় একটি শব্দকে ভেঙে পরের লাইনে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়।
ক. তিন, চার, পাঁচ কিংবা ততোধিক অক্ষরবিশিষ্ট কোনও শব্দকে এমনভাবে ভাঙা যাবে না, যাতে শব্দের শুরুতে লাইনে একটি অক্ষর থেকে যায়। যেমন : বহমান (ব/হমান), মাতাল (মা/তাল বা মাতা/ল), বিপদ (বিপ/দ বা বি/পদ), সংসার(স-ংসার), জাপান (জ/পান) ইত্যাদি।
খ. কোনও শব্দকে এমনভাবে ভাঙা যাবে না, যাতে পরের লাইনে যুক্তাক্ষর দিয়ে শুরু হয়। শব্দ ভাঙার সময় পরের লাইনে যাতে প্রথমে যুক্তাক্ষর না হয় তা দেখতে হবে। যেমন : প্রতিষ্ঠিত (প্রতি/ষ্ঠিত), মাস্তুল (মা/স্তুল), বিধ্বস্ত (বিধ্ব/স্ত), বিষ্ঠা(বি/ষ্ঠা), ঈশ্বর(ঈ/শ্বর) ইত্যাদি।
গ. ভাঙা শব্দের প্রতিটি অংশে কমপক্ষে দুটো বর্গ থাকতে হবে। আদাজল (আদা/জল), বহমান (বহ/মান), (মহা/ভারত), (ভালো/বাসা), (অভি/ধান) ইত্যদি। কোনো ভাঙা অংশে কেবল একটি অক্ষর যাতে না থাকে সেটি খেয়াল করতে হবে।
ঘ. সমাসবদ্ধ পদের দুটো অংশের মধ্যখানে ভাঙা যাবে। যেমন : বহুরূপী (বহু/রূপী), আম-জাম (আম/জাম)।
ঙ. চার-পাঁচ বা ততোধিক অক্ষরযুক্ত শব্দ অর্থগত বিবেচনায় দুইভাগে বিভাজনীয় না হলেও ধ্বনি তথা সিলেবল বিবেচনায় ভাঙা যাবে। যেমন : উলট/পালট, ঝক/মক, টাকা/টুকা, জাত/পাত ইত্যাদি।
চ. ভাঙা শব্দের প্রথম অংশের পরে হাইফেন বসবে। যেমন : সিংহাসন (সিংহ-/আসন), দয়াবান (দয়া-/বান), (মাতৃ-/দুগ্ধ), (বোন-/জামাই), (অঘটন-/ঘটনপটীয়সী) ইত্যাদি।
ছ. লাইনের শেষে একটি অক্ষর থাকতে পারে, যার বাকি অংশ পরের লাইনে চয়ে যায় সেক্ষেত্রে দু-অংশের স্বাভাবিক বিভাজন বজায় রাখতে হবে। যেমন : প্রকৃষ্ট (প্র/কৃষ্ট), প্রদীপ (প্র/দীপ), (মু/কুল) ইত্যাদি।
সূত্র: ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.
বাংলা বানান : হরদম ভুল এবং ভুল থেকে ফুল
বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন
বানান সূত্র ও সন্ধি : শুদ্ধ বানানের ষড়সূত্র
বাংলা ধ্বনি/ চিহ্নের হিসাব-নিকাশ : অক্ষর ধ্বনি ও বর্ণ
একনজরে বাংলা বর্ণমালা : পরিসংখ্যান : ইতিবৃত্ত
বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক