ড. মোহাম্মদ আমীন
চার-পাঁচ বছর আগেও বাজারে পটল ছিল। বহুবার পটল খেয়েছি, অনেককে পটল তুলতেও (পটল তোলা) দেখেছি। সেকালের পটল ছিল চর্বিহীন ষোড়শীর মতো চিকন আর নিখাদ সবুজে পটলচেরা মোহন। কেবল তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করত। এখন বাজারে পটল পাওয়া যায় না, পটোল পাওয়া যায়। এরা অতি ধনীর আদুরে কন্যার চর্বিভরা পেটের মতো বেঢপ। পটোল, পটলের চেয়ে মোটা। বাংলা একাডেমির বদৌলতে ‘পটল’ এখন ‘পটোল’; যা আগের চেয়ে মোটাসোটা। সব্জির এমন দুর্দিনে এমন একটি বরকতজনক কাজ নিঃসন্দেহে প্রশংসাযোগ্য।
আগে ‘পটলচেরা’ চোখের বাঁকা চাহনির চন্দ্রমুখী বদন আর চোখে পড়ে না। এখন চারিদিকে কেবল নাদুসনুদুস ‘পটোলচেরা’ চোখ যেন পটোল ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে।। ‘পটলচেরা’ চোখ ‘পটোল’ থেকে ‘পটোলচেরা’ হওয়ার পর ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১লা ফেব্রুয়ারি পটল বেচারা লজ্জায় পটোল তুলেছে ( ইন্নালিল্লাহে— রাজেউন)। এই মোটা পটোল খেয়ে বাংলার চিকন গরু মোটা ‘গোরু’ হয়ে ‘বড়’ গলা ছেড়ে ‘বড়ো’ গলায় হাম্বা হাম্বা করছে।
বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান ( ১ ফেব্রুয়ারি. ২০১৬) অনুযায়ী ‘গরু’ বানান ‘গোরু’ ‘ব্যবহারিক’ বানান ‘ব্যাবহারিক’ [ বাংলা ব্যাকরণমতে ‘ব্যবহারিক’ বানান ভুল ছিল।]। ‘উপলক্ষ’ বানান ‘উপলক্ষ্য’ [ লক্ষ্য থেকে উপলক্ষ্য, তাই ‘উপলক্ষ’ বানান প্রমিত নয়]। ‘পটল’ বানান ‘পটোল’ এবং ‘খ্রিস্টাব্দ’ বানান ‘খ্রিষ্টাব্দ’ লিখতে হবে।
ব্যবহারিক, সমসাময়িক ও বিচারিক এখন ভুল বানান। শব্দগুলোর শুদ্ধ বানান হবে যথাক্রমে ‘ব্যাবহারিক’, ‘সামসময়িক’ ও ‘বৈচারিক’। শুবাচের অনেক প্রবীণ সদস্যও ‘ব্যাবহারিক’ শব্দে আকার দেন না। আকারহীন ‘ব্যাবহারিক’ শুদ্ধ নয়, তবে প্রচলিত। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে ‘ব্যবহারিক’ পরিত্যাজ্য। তাই লিখুন :ব্যবহার + ইক = ব্যাবহারিক, সমসময় + ইক = সামসময়িক এবং বিচার + ইক = বৈচারিক। যেমন লিখে থাকি : অর্থ + ইক = আর্থিক, সময় + ইক = সাময়িক; দিন + ইক = দৈনিক প্রভৃতি।
শুদ্ধ বানান চর্চা এবং বিসিএস বাংলা
জানা-অজানা বাংলা জ্ঞান জানতে হলে পড়তে হবে