পাণ্ডুলিপির জন্মবৃত্তান্ত

ড. মোহাম্মদ আমীন

বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত পাণ্ডুলিপি (পাণ্ডু+লিপি) শব্দের অর্থ মুদ্রণের জন্য তৈরি হাতে লেখা বা বা টাইপ করা কপি। এর আদি নাম ছিল রচনালিপি বা লেখার লিপি। প্রশ্ন হলো এটার নাম পাণ্ডুলিপি হলো কেন। কারণ হলো, পাণ্ডুর যে লিপি, তাই হলো পাণ্ডুলিপি। এবার দেখা যাক, লেখকের রচনালিপি কীভাবে পাণ্ডুলিপি হয়ে গেল।
লেখকগণ প্রকাশকগণের কাছে পুস্তকাকারে মুদ্রণের জন্য লেখার খাতা দিয়ে আসতেন। এটাকে বলা হলো রচনালিপি বা লেখালিপি। প্রকাশকগণ ওই খাতা বা রচনালিপি শেলফে রেখে দিতেন। লেখক খবর নিতেন, খবর নিয়ে জানতে চাইতেন- তার লেখা প্রকাশ হয়েছে কি না। না হয়ে থাকলে কখন হবে, কিংবা কেন হচ্ছে না।
প্রকাশক বলতেন ছাপা হবে। অনেকদিন পরও যখন মুদ্রিত হতো না, তখন বিরক্ত হয়ে লেখক প্রকাশকের কাছে গিয়ে বলতেন, ভাই, আমার রচনালিপিটি আমাকে ফেরত দিন।
প্রকাশক অনেক ধুলোবালি ঝেড়ে দিনের অর্ধেক সময় নষ্ট করে শেলফ থেকে লেখার খাতাটি খুঁজে বের করে লেখকের হাতে তুলে দিতেন। ততদিনে অযত্ন অবহেলা আর শতশত লেখার চাপে পড়ে লেখকের প্রাণপ্রিয় লেখার মনপ্রিয় খাতাটি পাণ্ডুর বা ফ্যাকাশে হয়ে যেত।
খাতা দেখে লেখক বলতেন, আমার লিপি তো এমন পাণ্ডুর ছিল না। ছিল ঝকঝকে; এটা আমার রচনালিপি নয়।
কার লিপি? প্রকাশক জানতে চাইতেন।
লেখক বলতেন, পাণ্ডুর লিপি।
এভাবে লেখকের রচনালিপি প্রকাশকগণের অবহেলা, দৌরাত্ম্য আর দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে রচনালিপি থেকে পান্ডুলিপি হয়ে যায়।
————————–
বিসিএস-সহ যে-কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা, গবেষণা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন এবং বাঙালি হিসেবে মাতৃভাষা জ্ঞান অর্জনের জন্য নিচের লিংকের লেখাগুলো পড়তে পারেন:
Language
error: Content is protected !!