ড. মোহাম্মদ আমীন
পিলসুজে বাতি জ্বলে মিটির মিটির
ওইখানে আমাদের পাতার কুটির।

সারা বেলা কথা কয়,
কাশফুলে দুলে ওঠে নদীর দুপার,
রূপসির শাড়ি যেন তৈরি রুপার।কুটিরের কোল ঘেঁষে একটু উঠোন,
নেচে নেচে খেলা করি ছোট দুটি বোন।
পরনে খড়কে-ডুরে,
বেণি নাচে ঘুরে ঘুরে,
পায়ে পায়ে— ‘রুনু ঝুনু’ হালকা খাড়ুর,
কেন নাচি নাই তার খেয়াল কারুর।আকাশে গড়িয়া ওঠে মেঘের মিনার,
তারি ফাঁকে দেখা যায় চাঁদের কিনার।
গাছের পাতার ফাঁকে,
আকাশ যে চেয়ে থাকে,
গুনগুন গান গাই, চোখে নাই ঘুম।
চাঁদ যেন আমাদের নিকট কুটুম।নৌকারা আসে যায় পাটেতে বোঝাই,
দেখে কী যে খুশি লাগে কী করে বোঝাই!
কত দূর দেশ থেকে,
আসিয়াছে এঁকেবেঁকে,
বাদলে ‘বদর’ বলে তুলিয়া বাদাম,
হাল দিয়ে ধরে রাখে মেঘের লাগাম।
দু-কদম হেঁটে এসো মোদের কুটির,
পিলসুজে বাতি জ্বলে মিটির মিটির।
চাল আছে ঢেঁকি ছাঁটা,
রয়েছে পানের বাটা,
কলাপাতা ভরে দেব ঘরে-পাতা দই,
এই দেখ আছে মোর আয়না কাঁকই।
যদি আস একবার, বলি—মিছা না,
মোদের উঠোনটুকু ঠিক বিছানা।
পিয়াল, পেয়ারা গাছে—
ছায়া করে রহিয়াছে,
ধুঁধুলের ঝাঁকা বেয়ে উঠিতেছে পুঁই,
খড়কুটো খুঁজে ফেরে দুষ্টু চড়ুই।এসো এসো আমাদের সোনার কুটির—
ঝিকিমিকি করে জল নিটোল নদীর।
ঝিঙের শাখার পরে
ফিঙে বসে খেলা করে,
বেলা যে পড়িয়া এল, গায়ে লাগে হিম,
আকাশে সাঁঝের তারা, উঠানে পিদিম।
অচিন্ত্যকুমার ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে কল্লোল পত্রিকা প্রকাশ করেন। তিনি বিচিত্রায় পত্রিকাতেও কিছুদিন কাজ করেন। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অস্থায়ী মুন্সেফ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে ল কমিশনের স্পেশাল অফিসার হিসেবে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
তিনি উপন্যাসের আঙ্গিকে ধর্মগুরুদের জীবনী (যেমন- পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ, চার খণ্ডে (১৯৫২-১৯৫৭)) লিখেছেন। তার প্রথম উপন্যাস বেদে (১৯২৮); কাকজ্যোৎস্না ” প্রথম কদমফুল তাঁর অন্য দুইটি বিখ্যাত উপন্যাস। টুটাফাটা (১৯২৮) তার প্রথম ছোট গল্পের বই। তার স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ কল্লোল যুগ (১৯৫০) বিখ্যাত গ্রন্থ।
সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে জগৎ্তারিণী পুরস্কার, রবীন্দ্র পুরস্কার ও শরৎচন্দ্রস্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৯শে জানুয়ারি কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়।