পোয়া: এক পোয়া তেল এখানে পোয়া মানে কী

 
ড. মোহাম্মদ আমীন
এই পেজের সংযোগ: https://draminbd.com/পোয়া-এক-পোয়া-তেল-এখানে-পোয়/
 
 
বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, বাংলা পোয়া অর্থ— (বিশেষ্যে) চার ভাগের এক ভাগ, সিকিভাগ। পোয়া এল কীভাবে? পায়া ফারসি শব্দ। পায়া থেকে পোআ>পোয়া। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, ফারসি পায়া অর্থ —(বিশেষ্যে) টেবিল, চেয়ার, খাট প্রভৃতির খুঁটি; চরণ, পদ, পা; পদমর্যাদা (পায়াভারী)।পশু প্রভৃতির পা বাংলায় পায়া নামেও পরিচিত। মধ্যযুগের প্রারম্ভে ফারসি পায়া থেকে  পোয়া শব্দের প্রচলন। যা বর্তমানে বাংলা শব্দ হিসেবে স্বীকৃত। 
 
“এক পোয়া পোয়া  নুন দাও, এক পোয়া চিনি
এক পোয়া তেল দাও; দাম কত জানি?
এক পোয়া মুড়ি দাও, এক পোয়া ডাল
বাড়ি গিয়ে ধীরে ধীরে খাব ভরে গাল।”
 
পরিমাপের এক চতুর্থাংশ প্রকাশক এই এককটি পায়ের সঙ্গে যুক্ত হলে কীভাবে? ফারসি পায়া থেকে পোয়া, কিন্তু পা পরিমাপে কীভাবে ঢুকে গেল? চেয়ার, টেবিল, খাট, খাটিয়া প্রভৃতির চার পোয়া বা চার পা। এজন্য এসব আসবাবকে চারপায়া, চৌপায়া বা চার পোয়া আসবাব বলে। একটি অক্ষত ও স্বাভাবিক জন্তুর চারটি পা বা চারটি পোয়া। এজন্য এদের চারপায়া বা  চার পোয়া জীব বলা হয়। অর্থাৎ চার পা বা চার পোয়া থাকলে তবেই তারা পূর্ণ। এজন্য হিসাবের ক্ষেত্রে পূর্ণ বা অখণ্ড বিষয়-বস্তুকে চার অংশের সমষ্টি হিসেবে গণ্য করা হয়। অর্থাৎ চার পা বা চার পোয়া একটি বিষয়ের সম্পূর্ণতা বা অখণ্ডতা প্রকাশ করে। সুতরাং এক পা বা এক পোয়া হলো চার পোয়া বা চার পায়ের একটা ভগ্নাংশ। যাকে সাধারণভাবে এক চতুর্থাংশ বা এক সিকি বলা হয়। এজন্য চারভাগের একভাগ বোঝাতে এক পোয়া কথাটি ব্যবহার করা হয়।
 
সিকি অর্থদ্যোতক পোয়া ছাড়াও আর একটি পোয়া আছে। সেটি সংস্কৃত হতে আগত পোয়া। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, সংস্কৃত পদ থেকে উদ্ভূত এই পোয়া অর্থ (বিশেষ্যে) যে দুটি খুঁটির ওপর ভর করে ঢেঁকি ওঠানামা করে।
 
জনাব ইউসুফ খান শুবাচে প্রকাশিত তার একটি লেখায় লিখেছন: এক পোয়া তেল মানে এক সের পরিমাপের সিকি ভাগ বা এক চতুর্থাংশ। ‘দু-পোয়া অর্থ চার ভাগের দুই ভাগ, মানে অর্ধেক। গ্রাফ পেপারকে চারভাগ করে বলা হয়- প্রথম পাদ, দ্বিতীয় পাদ, তৃতীয় পাদ, চতুর্থ পাদ। এখানে পাদ মানে পোয়া বা চারভাগের এক ভাগ। সংস্কৃতে আছে,- পঞ্চপাদং পিতরম্। অর্থাৎ পাঁচপোয়া পিতৃভূমি। অতএব, চারপোয়া মানে সম্পূর্ণ। চারপোয়া চাল, মানে এক সের চাল। বাগ্‌ধারায় বলা হয়, তার বাড় বেড়ে চারপোয়া হয়েছে, এবার পতন অনিবার্য। ‘কলির চারপোয়া এসে গেল, দুনিয়া ধ্বংস হবে এবার। এখানে চার পোয়া দিয়ে অহংকারের পূর্ণ ধাপে পৌঁছে গেছে বোঝানো হচ্ছে। পাশা খেলায় সুবিধেজনক তাস এলে বারো পয়েন্ট না হলেও বারো পয়েন্ট পেয়ে পায়। এটাকে বলে পোয়া-বারো হওয়া।
 
 
 
পোয়া শব্দের অর্থ এবং কীভাবে আর কেন শব্দটি পোয়া হলো তা আমরা জেনেছি (লিংক: পোয়া: এক পোয়া তেল এখানে পোয়া মানে কী) । এখন দেখব সোয়া কি এবং কীভাবে শব্দটির নাম সোয়া হলো। স+পোয়া= সোয়া। এখানে অর্থ সহ এবং পোয়া মানে সিকি ভাগ বা এক চতুর্থাংশ। অর্থাৎ সহ-পোয়া থেকে সোয়া বা পোয়া-সহ। যার অর্থ অতিরিক্ত এক পোয়া। সপরিবার অর্থ পরিবার-সহ, সস্ত্রীক মানে স্ত্রী-সহ, সবান্ধব মানে বন্ধুবান্ধব-সহ, সচেতন মানে সহ-চেতন। তেমনি স-পোয়া মানে পোয়া-সহ। স-পোয়া>সপোয়া থেকে সওয়া এবং সোওয়া থেকে সোয়া (স-পোয়া> সওয়া> সোয়া) শব্দের উদ্ভব।  এ বিষয়ে শুবাচি ইউসুফ খান শুবাচে চমৎকারভাবে  লিখেছেন।
 
যদি কেউ বলেন, সোয়া নয়টায় ক্লাস শুরু হবে। এর অর্থ নয়টার সঙ্গে আরও পোয়া মিনিট বা সিকি ঘণ্টা অর্থাৎ পনের মিনিট যোগ করলে যা হবে সে সময়ে ক্লাশ শুরু হবে। সময়টা হচ্ছে: ৯ঘণ্টা+১৫ মিনিট= নয়টা পনেরো মিনিট। ১৫ কেন? কারণ ৬০ মিনিটে এক ঘণ্টা, ১৫ মিনিট হচ্ছে এক ঘণ্টার পোয়া বা এক চতুর্থাংশ। সুতরাং, সোয়া নয়টা অর্থ ৯টা ১৫ মিনিট। প্রসঙ্গত, বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, সোয়া অর্থ সিকিভাগ-সহ।
 
সোয়া ন-টায় ঢুকতে হবে অফিসে
দেরি হলে খবর আছে দেখতে পেলে বসে।
সোয়া ছটায়  পৌঁছতে হবে বাসায়,
বিবির  প্রশ্ন এত রাতে ছিলে কোথা মশায়?
 
 
 
 
——————————————————————
———————————————————————-
সূত্র: পৌরাণিক শব্দের উৎসকথন ও ক্রমবিবর্তন অভিধান
 
Language
error: Content is protected !!