কুশ+পুত্তলিকা। কুশ দিয়ে তৈরি হয় যে পুতুল। কুশতৃণে বা শরপত্রে রচিত পুত্তলিকা। যার দাহ হয়নি বা মুখাগ্নি পর্যন্ত হয়নি এবং যার অস্থি পাওয়া যায়নি তার কুশপুত্তলিকা দাহ করতে হয়।
কুশপুত্তলিকা শব্দটি এখন রাজনীতির ক্ষেত্রে বেশ প্রচলিত। তবে যারা কুশুপুত্তলিকা দাহ করেন তারা জানেন না যে, এটি প্রাচীন মানুষের নিদান।
কে কখন আলাদা ও কখন পৃথক বসে?
“আপনাকে যেতে বলেছে কে?” এই বাক্যে প্রথম কে, বিভক্তি এবং দ্বিতীয় কে, সর্বনাম। “কে কে দেশের জন্য জীবনকে উৎসর্গ করতে চাও?” এই বাক্যে কে কে সর্বনাম এবং জীবন-এর সঙ্গে যুক্ত কে বিভক্তি। অনুরূপ: তাকেকে এখানে আসতে বলেছে?
নিমোনিক:
(১) সর্বনাম হিসেবে ব্যবহৃত হলে কে আলাদা বসে। যেমন: তোমার বাবা কে তা আমি জানতাম না। এখানে কে শব্দটি সর্বনাম হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় বাবা থেকে পৃথক বসেছে।
সাধারণত প্রশ্নবোধক বাক্যে কে শব্দটিকে পূর্ববর্তী শব্দ থেকে ফাঁক রেখে লেখার বহুল প্রয়োগ লক্ষণীয়। যেমন: আপনি কে? তোমরা কে কে যাবে? তুমি কে? (২) প্রশ্নবোধক হোক বা না হোক বিভক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হলে -কে পূর্ব শব্দের সঙ্গে সেঁটে বসে। যেমন: আপনাকে যেতে হবে। তোমাকে আমার চাই। মা, আমাকে ডাকছ? দেশকে ভালোবাস, জাতিকে সেবা দাও। মামাকে দেখতে যাবে না হাসপাতালে? আপাকে ডাকব?
চকলেট শব্দের উৎস
কোনো বিকল্প না দিয়ে প্রশ্ন করা হলো— চকলেট কোন ভাষা থেকে এসেছে? কিংবা চকলেট কোন ভাষার শব্দ?
সঠিক উত্তর— ফরাসি।
কারণ?
চকলেট শব্দটি ফরাসি মূলে সৃষ্ট এবং ফরাসি প্রভাবিত লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কার শোকোলাটল(xocolatl) হতে উদ্ভূত।
এই বক্তব্যের উৎস কী?
বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান।
আচ্ছা, যদি চারটি বিকল্পের মধ্যে ফরাসি ও মেক্সিকান রেখে প্রশ্ন করা হয়— চকলেট নিচে বর্ণিত কোন উৎসের শব্দ?
সঠিক উত্তর— ফরাসি।
এখন, বিকল্প চারটি উত্তরে যদি ফরাসিকে বাদ দিয়ে বাকি তিনটির মধ্যে একটি মেক্সিকান রেখে প্রশ্ন করা হয়— চকলেট কোন উৎসের শব্দ?
উত্তর— মেক্সিকান।
কারণ?
শব্দটি ফরাসি মূলে ফরাসি ভাষা প্রভাবিত হলেও জন্ম হয়েছে লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা হিসেবে বর্তমান মেক্সিকোর তৎকালীন অ্যাজটেক সাম্রাজ্যের নাহুয়ান (Nahuan) বা অ্যাজটেনা (Aztecan)-ভাষীর মুখে।
আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য নিচের সংযোগ দেখতে পারেন:
বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে ‘তাই’ শব্দের তিনটি পৃথক ভুক্তি দেখা যায়। প্রথম ভুক্তিমতে, সংস্কৃত ‘তদ্’ থেকে উদ্ভূত ও বাক্যে সর্বনাম হিসেবে ব্যবহৃত ‘তাই’ শব্দের অর্থ— সেই বস্তুই, সেই কাজই এবং তাহাই শব্দের চলিত রূপ। যেমন: রাতে বিড়াল দেখল ছেলেটি, তাই দেখে ভয়ে সে অজ্ঞান। যা চাইছি তাই দিতে হবে। আমার তাই প্রয়োজন। তাই যদি না পাই তো আমার যা-ইচ্ছে তাই করব।
দ্বিতীয় ভুক্তিমতে, সংস্কৃত ‘তস্মাৎ’ থেক উদ্ভূত ও বাক্যে অব্যয় হিসেবে ব্যবহৃত ‘তাই’ শব্দের অর্থ— সুতরাং, সে জন্য। যেমন: ক্লাস ছিল, তাই যেতে পারিনি। তাই তোমারে দেখতে এলেন অনেক দিনের পর।
তৃতীয় ভুক্তিমতে, তাই শব্দের অর্থ শিশুর করতালি, হাত তালি প্রভৃতি। যেমন: তাই তাই তাই, মামার বাড়ি যাই/ মামি করছে দুভাত নাক ডুবিয়ে খাই।
তা-ই: অভিধানে তা-ই বানানের কোনো শব্দ নেই। অনেকে ‘তা-ই’ শব্দটি ‘তাহাই’ শব্দের সমার্থক হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। আবশ্যকতা কিংবা বাধ্যবাধকতা বা জেদ, গুরুত্ব ইত্যাদি প্রকাশে ‘তাই’ এর স্থলে ‘তা-ই’ ব্যবহার করা হয়। যারা এটি ব্যবহার করেন তাদের অভিমত— জোর দেওয়ার জন্য ‘তা-ই’ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তা-ই শব্দটি অনাবশ্যক। তাহাই শব্দের চলিত রূপ তাই। সুতরাং, তা-ই শব্দটি নির্থক এবং অপ্রয়োজনীয়।
উদহারণ: যা চাইছি তাই (তা-ই) দিতে হবে। আমার তাই (তা-ই) প্রয়োজন। তাই যদি না পাই তো আমার যা-ইচ্ছে তাই (তা-ই )করব। এখানে তাই-এর স্থলে তা-ই লেখা সমীচীন নয়।
অতএব, লিখুন তাই।
এলাচ
শিবকালী ভট্টাচার্যের মতে, এলাচ এসেছে দ্রাবিড় ভাষা থেকে। বেদে এর উল্লেখ নেই। সুশ্রুত সংহিতার সূত্রস্থানে পাওয়া যায়— ‘দ্রাবিড়ীনাং ফলং’। এটিই হচ্ছে এলাচ। এই ব্যাখ্যা যথার্থ বলে মনে করা হয়। কারণ— প্রধানত দক্ষিণ ভারতের দ্রাবিড় অঞ্চলে এর চাষা হয়।। এলাচ গাছের গোড়া থেকে যে পুষ্প দণ্ড বের হয় তাকে দেখে মনে হয় যেন এলিয়ে শুয়ে আছে। দ্রাবিড় ভাষায় এই অবস্থাকে বলে ‘এলা’। সেই পুষ্প দণ্ডেই ফুল এবং পরে এলাচ ফল জন্মে – তাই এর নাম এলাচ। যারা বাংলা অর্থ— শুয়ে আছে।
এলাচ দুই রকমের: বড়ো এলাচ এবং ছোটো এলাচ। দুই রকমের এলাচ দুই রকমের গাছে ফলে। বড়ো এলাচ গাছগুলি দেখতে আদা গাছের মতো, তবে পাতাগুলি একটু বেশি লম্বা ও চওড়া। স্যাঁতসেঁতে পাহাড়ি অঞ্চল এই গাছের বাড়-বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত। বিভিন্ন ধরনের রান্নায় এলাচ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। দামি মসলার দিক থেকে এলাচের স্থান দ্বিতীয়। এলাচ যেমন ঝাল জাতীয় খাবারে ব্যবহার করা হয়, তেমনি মিষ্টি জাতীয় খাবারেও ব্যবহার করা হয়। এটি পরিপাকের উন্নতি ঘটায়, ক্ষুধা বৃদ্ধি করে, কিডনি-র স্বাস্থ্য ভালো রাখে। আয়ূর্বেদ চিকিৎসায়ও এলাচ ব্যবহার করা হয়।
ভিড় বানান নিমোনিক
ভিড় দেশি শব্দে। দেশি শব্দে ঈ-কার হয় না। তাই ভিড় বানানে ই-কার। দেশি না বিদেশি তা জানব কীভাবে? ফলে ই-কার আর ঈ-কার নিয়ে গন্ডগোল লেগে যায়। তাই একটা নিমোনিক লাগে।
ভিড় অর্থ বহু লোকের বিশৃঙ্খল সমাবেশ, লোকসমাগম, জটলা।
এমন ভিড়ে এগিয়ে যেতে হলে সামনে হাত দুটো ছাতার মতো প্রসারিত করে রাখতে হয়। মনে করুন ভিড় বানানের সামনের ই-কার ভিড়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সামনে প্রসারিত হাত বা ছাতা। তাই ভিড় বানানের আগে ছাতারূপী ই-কার দিতে হয়। পেছনের ঈ-কার নয়।
হ্যাঁ ও জি
হ্যাঁ: সম্মতি বা স্বীকৃতমূলক উক্তিঅর্থে হ্যাঁ শব্দের বানানে য-ফলা এবং চন্দ্রবিন্দু দুটোই লাগবে।
জি: মান্যব্যক্তির ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত শব্দজি বানানে ই-কার দেবেন। তবে জ-এর নিচে অন্তস্থ-ব দেবেন না। জী, জ্বী, জ্বি প্রভৃতি ভুল। লিখুন: জি। যেমন: জি হ্যাঁ;
গোঁড়া বনাম গোড়া #নিমোনিক
গোঁড়া: বাংলা গোঁড়া শব্দের অর্থ— (বিশেষণে) কোনো বিষয়ে অন্ধবিশ্বাসী, রক্ষণশীল মনোভাবাপন্ন, একগুঁয়ে, অত্যধিক পক্ষপাতযুক্ত। যে নিজের মতবাদ ছাড়া অন্য সবার মতবাদকে বাতিল করে দেয়; কারো মতবাদকে সহ্য করে না, ভিন্ন মতাবলম্বীকে ঘৃণা করে, হেয় করে, অপস্থ করে, অকল্যাণ কামনা করে তাদের— গোঁড়া বলে। ইংরেজিতে যাদের orthodox বলা হয়। গোঁড়া শব্দের আর একটি অর্থ স্ফীত নাভিযুক্ত। এর বানানে চন্দ্রবিন্দু অনিবার্য।
গোড়া: বাংলা গোড়া অর্থ— (বিশেষ্যে) মূল, সূত্রপাত, ভিত্তিমূল, মূল কারণ, সান্নিধ্য প্রভৃতি। এই গোড়ায় চন্দ্রবিন্দু নেই।
নিমোনিক: কীভাবে মনে রাখবেন কোনটায় চন্দ্রবিন্দু? গোড়া গাছের নিচে থাকে, কিন্তু চাঁদ থাকে আকাশে। তাই মূল বা গাছের গোড়া অর্থদ্যোতক গোড়া বানানে চন্দ্রবিন্দু নেই।
খেজুরে, খেজুরে আলাপ
খেজুর থেকে খেজুরে। বাংলা খেজুরে শব্দের অর্থ— (বিশেষণে) খেজুরের রস থেকে তৈরি (খেজুরে গুড়); আলংকারিক অর্থ— বিরক্তিকর ও অবান্তর । খেজুর আলাপ অর্থ— (বিশেষ্যে) অবান্তর কথাবার্তা। যাও এখন খেজুরে আলাপ শোনার সময় নেই।
যে আলাপ বা কর্থাবার্তা প্রাসঙ্গিক নয়, অবান্তর ও বিরক্তিকর হিসেবে শ্রোতৃবৃন্দের কাছে প্রতিভাত, শ্রোতৃবৃন্দ বক্তার কথামালা যে অবান্তর, মিথ্যা এবং হাস্যকর সেটি আগে থেকে জানে সাধারণত সেরূপ আলাপকে খেজুরে আলাপ বলা হয়। কোনো আলাপকে খেজুরে আলাপ হতে হলে শুধু বিরক্তিকর হলে হবে না, অবান্তরও হতে হবে।
প্রশ্ন হলো: অবান্তর ও বিরক্তিকর আলাপের সঙ্গে খেজুরে গুড়ের কী সম্পর্ক?
আছে।
খেজুর গাছ থেকে কীভাবে খেজুরে গুড় উৎপাদিত হয় সে বিষয়ে পুরোপুরি অজ্ঞ এক ব্যক্তি খেজুরে গুড় তৈরির কাজে নিয়োজিত ব্যক্তির কাছে গুড় তৈরির বিষয়ে বর্ণিত অবান্তর ও বিরক্তিকর কাহিনি থেকে খেজুরে আলাপ কথাটির উদ্ভব। এবার কাহিনিটি পুরো শোনা যাক—
খেজুর গাছ থেকে খেজুড়ে গুড়। এটি তৈরির প্রক্রিয়া যারা দেখেনি বা শুনেনি তাদের কাছে খেজুরে গুড় কীভাবে তৈরি হয় বা কীভাবে উৎপাদিত হয়— তা জানতে পারার কথা নয়। কিন্তু অনেকে নিজের কৃতিত্ব জাহির করার জন্য না-জানা সত্ত্বেও বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞ দাবি করে বানিয়ে বানিয়ে অনেক লম্বা কাহিনি জুড়ে দেয়। ওই বর্ণনার সময় যে, ওই বিষয়ে অভিজ্ঞ লোকও থাকতে পারে সে বিষয়টি তাদের মনে আসে না। খেজুরে গুড় তৈরি নিয়ে এরূপ অবান্তর ও বিরক্তিকর এক কাহিনি থেকে খেজুরে আলাপ কথাটির উদ্ভব।
এবার তাহলে কাহিনিটি পুরো শোনা যাক—
অষ্টাদশ শতকের কথা। শ্রীবাস মাহাতো নামের এক লোক সস্ত্রীক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সদাগরি জাহাজে চাকরি করতেন। তাদের ছেলের নাম অনিমেষ মণ্ডল। জাহাজে তার জন্ম। কৃষিকাজ এবং গাছপালা সম্পর্কে কোনো ধারণা তঁঅর নেই। খেজুরের গাছ থেকে কীভাবে গুড় উৎপাদন করা হয় তাও জানেন না। তবে বিলাতি জাহাজে চাকুরি করেন বলে তার জ্ঞান ও মেজাজ সর্বদা বিলাতি কায়দা অনুসরণ করে। এক বনেদি কৃষক পরিবারের কন্যার সঙ্গে অনিমেষের বিয়ে । বিয়ের কিছুদিন পরের কথা। অনিমেষ শ্বশুর বাড়ির পথে। দেখলেন এক লোক ঝুড়িতে করে কিছু নিয়ে বাজারে যাচ্ছেন।
খেজুরে গুড় গাছে ধরে। প্রথমে খেজুর গাছে লাল লাল ফুল ফোটে। এয়া বড়ো। ফুল থেকে হয় ফল। এককেটা ফল চালতার মতো। ওগুলো মাথায় পড়লে মাথা ফেটে চৌচির। আমি কতজনকে খেজুর পড়ে মরে যেতে দেখিছ। ওই ফল পাকলে বাসায় এনে খোসা ছড়িয়ে বের করা হয় খেজুরে গুড়। ওগুলো জলে ভেজালে শক্ত হয়ে যায়। তারপর – – -।
থামুন দাদাভাই, আপনার খেজুরে আলাপ শুনতে ভালো লাগছে না। তার চেয়ে বরং জাহাজের গল্প করুন।
মহেন্দ্রক্ষণ নয়, মাহেন্দ্রক্ষণ
‘মহেন্দ্রক্ষণ’ বানানের কোনো শুদ্ধ শব্দ বাংলায় নেই। বাংলা ব্যাকরণমতে মহেন্দ্রক্ষণ বানানের কোনোশব্দ অর্থপূর্ণভাবে গঠিত হতে পারে না। এটি অর্থহীন।
শব্দটির শুদ্ধ, ব্যাকরণিক ও অর্থপূর্ণ রূপ— মাহেন্দ্রক্ষণ।
কেন মহেন্দ্রক্ষণ হতে পারে না দেখুন—
‘মহেন্দ্র’ বিশেষ্য। এর অর্থ— পৌরাণিক চরিত্রবিশেষ, ব্যক্তিনাম, নামবিশেষ। সাধারণভাবে মহেন্দ্র অর্থ— ‘দেবরাজ ইন্দ্র’। ক্ষণ শব্দটিও বিশেষ্য। একটি বিশেষ্য আরেকটি বিশেষ্যকে সরাসরি বিশেষায়িত করতে পারে না।
‘মহেন্দ্র’ শব্দটি ‘ক্ষণ’ শব্দের সঙ্গে যুক্ত করে ‘মহেন্দ্রক্ষণ’ বানালে অর্থ হবে— ‘দেবরাজ ইন্দ্র ক্ষণ’, দেবরাজ ইন্দ্র সময়; যা অর্থহীন এবং হাস্যকর। তাই, সময় নির্দেশক বিশেষ্য ‘ক্ষণ’-এর পূর্বে ব্যক্তিবাচক বিশেষ্য ‘মহেন্দ্র’ সরাসরি যুক্ত না-করে বিশেষণ বানিয়ে যুক্ত করতে হয়৷ তাহলে এটি অর্থসমৃদ্ধ হয়। এটিই বাংলা ব্যাকরণের নিয়ম।
তৎসম বিশেষ্যকে বিশেষণে পরিণত করার একটি সহজ উপায়— ‘ষ্ণ (অ)’ প্রত্যয় যুক্ত করা। মহেন্দ্র শব্দের সঙ্গে ‘ষ্ণ’ প্রত্যয় যুক্ত করলে কেমন হয় দেখুন— মহেন্দ্র+ষ্ণ = মাহেন্দ্র (বিশেষণ )। এখানে বৃদ্ধির সূত্রানুসারে প্রথম অ-স্বর, আ-স্বরে পরিণত হয়েছে।
এর অনেক ব্যাকরণিক কারণ আছে। এত কারণ মুখস্থ করার সুযোগ নেই। ছাত্রজীবনে অনেক মুখস্থ করেছি। এবার কঠিন সূত্র মুখস্থ না-করে জেনে যাব সহজে কীভাবে শুদ্ধ বানান আয়ত্তে আনা যায়।
সহকারী: ব্যক্তির সঙ্গে নারী, নারীর সঙ্গে ঈ-কার। তাই ব্যক্তি প্রকাশ করে এমন সব শব্দে ঈ-কার যুক্ত কারী দেবেন। যেমন: অহংকারী, কর্মচারী, নির্মাণকারী, পদাধিকারী, সহকারী, ভ্রমণকারী, গমনকারী, পরিচর্যাকারী, বমনকারী, তদন্তকারী, গণনাকারী- – -।
সরকারি: তরকারি বানানে কারি। ব্যক্তি ছাড়া অন্য কিছু প্রকাশ করলে সোজা ই-কার যুক্ত কারি বসিয়ে দেবেন। যেমন: কেলেংকারি, তরকারি, দরকারি, রকমারি, সরকারি, টিটকারি, মশকারি, পাইকারি, পায়চারি—।
এরপর যদি কারি-কারীতে ভুল হয় তাহলে আমার দোষ নেই। আমার ভুল হলে দোষ আপনাদের। কারণ, আপনাদের জন্য লিখতে গিয়েই তো ভুল হলো, না কি! শিকারি ব্যতিক্রম।
পোয়াবারো
‘পোয়াবারো’ শব্দের অর্থ— সম্পূর্ণ অনুকূল, পরম সৌভাগ্য। পাশা খেলার একটা দান হতে শব্দটির উদ্ভব। পাশা খেলার একটা দান হল ‘পোয়াবারো’। ছক্কার গুটি ফেলে কোনো চালে যদি পরপর ৬+৫+১ অথবা ৬+৬+১ দান পড়ে সেটাই ‘পোয়াবারো’ দান নামে পরিচিত। পাশা খেলায় ‘পোয়াবারো’ দান পাওয়া হলো জয়সূচক দান পাওয়া। জয় ও সৌভাগ্যের সঙ্গে জড়িত বলে পোয়াবারো দানটি ‘পোয়াবারো’ শব্দরূপে বাংলা বাগ্ভঙ্গিতে উঠে এসেছে।
পাংকু
পাংকু বা পাংক সাধারণত উদ্ভট, উচ্ছৃঙ্খল, বাজে, বেমানান, রীতিবিরুদ্ধ, বেহায়াপনা, উগ্র, অত্যাধুনিক, অত্যাধুনিকতার নামে দেশীয় সংস্কৃতিবিরুদ্ধ কর্মকাণ্ড প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে রত, ব্যতিক্রমী, নতুন ধারার প্রতি আগ্রহী, প্রচলিত জীবনধারার বদলে নতুন জীবনধারা প্রতিষ্ঠায় প্রাণন্তকর, দ্রুত পরিবর্তনকামী, সাধারণ্যে চোখে অগ্রহণীয় প্রভৃতি অর্থ প্রকাশে; মূলত নিন্দার্থে ব্যবহৃত অভিধান বহির্ভূত কিন্তু বহুল প্রচলিত একটি শব্দ।
পাংক বা পাংকু শব্দটি চীনা পাং কং বা পাং কুং হতে আগত একটি প্রাচীন চৈনিক শব্দ। প্রাচীন চৈনিক পুরাণে উল্লেখ আছে— ঈশ্বর প্রথম যে মানব সৃষ্টি করেছেন তাঁর নাম ছিল পাং কং বা পাং কুং। পাং কং এসে দুনিয়ার তাবৎ পূর্বকার পরিবেশকে বদলিয়ে নতুন সজ্জায় সজ্জিত করার প্রবল উদ্যোগ নেন। তিনি পৃথিবীতে আসার পরপরই রাতারাতি পৃথিবীকে বদলিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো সজ্জায় সজ্জিত করার কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। পৃথিবীর প্রথম মানব পাং কং-এর সঙ্গে আধুনিক পাংক বা পাংকুর কার্য ও আচরণগত মিল থেকে শব্দটি বর্ণিত অর্থ ধারণ করে।
পাংক শব্দটি আমেরিকায় বহুল প্রচলিত একটি অনানুষ্ঠানিক (informal) শব্দ। শব্দটি Punk বানানে প্রচলিত। আমেরিকান পাংক শব্দটি চায়নিজ পাং কং হতে উদ্ভূত। উপমহাদেশে পাংক বা পাংকু শব্দটি চায়না থেকে আসেনি। আমেরিকা থেকে এসেছে। আমেরিকায় শব্দটি প্রচলিত হওয়ার পরই এটি উপমহাদেশে আসে।
আমেরিকা থেকে এলেও আমেরিকান পাংক ও বাংলা পাংকু পরস্পর সমার্থক। Go ahead. Make my day, punk. ‘ডার্টি হ্যারি’ সিনেমার একটি বিখ্যাত উক্তি। পাংকু জামাই নামের একটি বাংলা ছায়াছবি ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তি পায়। প্রণয়নাট্য প্রকৃতির এই চলচ্চিত্রটির রচনা ও পরিচালনায় ছিলেন আবদুল মান্নান।
বিরাদারানে ইসলাম
শব্দটা হলো— ‘বিরাদারানে ইসলাম’। ফারসি ‘বিরাদার’ শব্দের অর্থ— ‘ভাই’। ফারসিতে প্রাণীবাচক শব্দের শেষে ‘আন’ যুক্ত করে তাকে বহুবচনে রূপান্তর করা হয়। শব্দটির অর্থ দাঁড়ায়— ‘ইসলামের ভাইয়েরা’।
মিথস্ক্রিয়া বানানে স কেন
বিসর্গের পরে ক খ প ফ থাকলে এবং এর আগে অ-কার বা আ-কার থাকলে সন্ধিকালে স হয়। যেমন:
নমঃ+কার= নমস্কার
ভাঃ+কর= ভাস্কর।
পদঃ+খলন= পদস্খলন।
আগে ই-কার বা উ-কার থাকলে ষ হয়। যেমন:
পরিঃ+কার= পরিষ্কার
আবিঃ+কার = আবিষ্কার
দুঃ+কর = দুষ্কর।
রোজনামচা ও খেরো খাতা
রোজনামচা: ফারসি রোজনামচা অর্থ (বিশেষ্যে) প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনার লিখিত বিবরণ, দিনলিপি, দিনপঞ্জি, রোজনামা, ডায়ারি। যার ইংরেজি প্রতিশব্দ diary।
খেরো: হিন্দি খারুয়া হতে পাওয়া খেরো অর্থ মোটা সুতোয় বোনা লাল রঙের কাপড়বিশেষ যা সাধারণত লেপ তোশক তৈরি ও বই খাতা বাঁধাইয়ের কাজে ব্যবহৃত হয়। শিশুদের হাত বা পায়ের অলংকারকেও খেরো বলা হয়।
খেরো খাতা: বাংলা খেরো খাতা অর্থ (বিশেষ্যে) লাল কাপড়ে বাঁধাই-করা খাতা। নানান বিষয় টুকে রাখার খাতা। দোকানে এমন খাতা দেখা যায়।
কথাটির দুটি বানান দেখা যায়- খেরোখাতা ও খেরো খাতা। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান [প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০১৬] লিখেছে ‘খেরো খাতা‘। অশোক মুখোপাধ্যায়ের সংসদ বানান অভিধান [পরিবর্ধিত তৃতীয় সংস্করণ ২০০৯-এর তৃতীয় মুদ্রণ ২০১৩] লিখেছে ‘খেরোখাতা’। আমরা বাংলা একাডেমির খেরো খাতা লিখব।
সরস্বতী
সংস্কৃত ‘সরস্বতী (সরস্+বৎ+ঈ)’ শব্দের অর্থ, বিদ্যা ও কলার দেবী, বাণী, বীণাপাণি, ভারত, বাগ্দেবী, মহাশ্বেতা, প্রাচীন নদীবিশেষ প্রভৃতি। অর্থ থেকে বোঝা যায় সরস্বতী শব্দের সঙ্গে ‘স্বর ’এবং ‘সতী’ শব্দের সরাসরি সম্পর্ক নাই। সরসবতী শব্দ থেকে (সরসবতী >সরস্বতী) সরস্বতী । সরস্বতী একটি প্রাচীন নদীর নামও বটে। পুরাণমতে, সরস্বতী ও গঙ্গা বিবাদ করে দুজন দুজনকে নদী হওয়ার অভিশাপ প্রদান করেন এবং দুই দেবীই নদীরূপে পৃথিবীতে নেমে আসেন। তাই সরস্বতী, স্রোতস্বতী রূপেও বিরাজমান। সরসবতী বা সরস্বতী বানানের প্রথম অক্ষর স্ব নয়, স।
অনেকে ‘সরস্বতী’ বানান লিখেন ‘স্বরসতী’। ভুল না হওয়ার জন্য একটি নিমোনিক মনে রাখতে পারেন। ‘সর’ মানে সরস। বিদ্যা সবচেয়ে সরস বলে বিদ্যার দেবীও সরস। সরস জিনিস সর-এর মতো উপরে বা আগে থাকে, দুধে সর ভেসে থাকে। এজন্য সরস্বতী বানানের আগে ‘সর’।শেষ অংশ ‘সতী’ হতে অসুবিধা কী? অসুবিধা আছে। কারণ সরস্বতীর সঙ্গে সতীর কোনো সম্পর্ক নেই। বিষয়টি মনে রাখলে সরস্বতী বানানে ভুল হবে না।
উৎস: ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.
পরিচ্ছন্নকর্মী, পরিচ্ছন্ন কর্মী এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মী
‘কর্মীটি পরিষ্কার’ বা ‘পরিষ্কার যে কর্মী’ বা ‘পরিচ্ছন্ন যে কর্মী’ কথাটি প্রকাশের জন্য অনেকে লিখে থাকেন ‘পরিচ্ছন্নকর্মী’। অধিকাংশের অভিমত, শব্দটি ব্যাকরণগতভাবে ত্রুটিপূর্ণ। কারণ বিশেষণ পদ অন্য পদের অর্থকে বিশদ বা সীমিত করার মাধ্যমে বিশেষিত করে। তাই সমাসবদ্ধ না-হলে বিশেষণ পদ বিশেষায়িত পদ থেকে ফাঁক রেখে বসে। যেমন : মেধাবী ছাত্র, পশ্চিম দিগন্ত, সোনালি ফসল, সব ছাত্র, অনেক লোক, গোটা সমাজ, প্রধান অতিথি, মূল কারণ, এক টাকা, চার মাস, নয় বস্তা, সিকি চামচ, প্রথম স্থান, মোগলাই পরাটা, নজরুল সংগীত, এই ছেলেটা, কাঠের পুতুল, পড়ার ঘর, বাতির আলো, কত লোক, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ, সবচেয়ে দামি ইত্যাদি।
আলোচ্য ক্ষেত্রে ‘পরিচ্ছন্ন’ বিশেষণ পদ এবং ‘কর্মী’ পরিচ্ছন্ন বিশেষণটিকে বিশেষায়িত করছে। তাই শব্দদুটো পরস্পর সেঁটে বসবে না, ফাঁক রেখে বসবে। অতএব শুদ্ধ হচ্ছে ‘পরিচ্ছন্ন কর্মী’।
যারা ‘পরিচ্ছন্নকর্মী’ লিখেন তাদের বক্তব্য, ‘পরিচ্ছন্নকর্মী’ শব্দটি ত্রুটিপূর্ণ বলা যায় না। কারণ সমাসবদ্ধ পদে বিশেষণ ও বিশেষ্যের মধ্যে ফাঁক থাকে না। যেমন: খাসকামরা, চিরজীবন, নবজাতক, দীর্ঘনিঃশ্বাস, ঘনবস্তু, প্রত্যক্ষপ্রমাণ, বড়লাট, বিগতযৌবন, বিকৃতমস্তিষ্ক, ভগ্নদশা, রাজপথ, তেমাথা প্রভৃতি। অতএব সে হিসেবে পরিচ্ছন্নকর্মী ত্রুটিপূর্ণ নয়।
বাক্যে ‘পরিচ্ছন্নতা’ এবং ‘কর্মী’ শব্দদ্বয় বিশেষ্যপদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পরিচ্ছন্নতা একটি ক্রিয়ার নামও বটে। পরিচ্ছন্নতা ও কর্মী শব্দের সমাসবদ্ধ শব্দ ‘পরিচ্ছন্নতাকর্মী’। এর অর্থ পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখেন যে কর্মী। সুতরাং যে ব্যক্তি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার কর্মে নিয়োজিত তাকে বলা হবে পরিচ্ছন্নতাকর্মী। শব্দ দুটো পরস্পর সেঁটে বসবে। আগের শব্দটির বানান নিয়ে দ্বিমত থাকলেও এই শব্দটির বানান নিয়ে দ্বিমত নেই। তবে শব্দটি প্রয়োগের ক্ষেত্রে ভুল দেখা যায়।
অনেকে পরিচ্ছন্ন কর্মী এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীর অর্থ গুলিয়ে ফেলেন। মনে রাখতে হবে, শব্দ দুটোর অর্থ এক নয়। ‘পরিচ্ছন্ন কর্মী’ অর্থ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কর্মী। কিন্তু ‘পরিচ্ছন্নতাকর্মী’ অর্থ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার কাজে নিয়োজিত কর্মী। ‘পরিচ্ছন্নতাকর্মী’ শব্দটি দিয়ে ব্যক্তির পেশাকে নির্দেশ করা হয়, স্বভাব বা আচরণকে নয়। যেমন : মৃদুল পোদ্দারের বাবা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে ‘পরিচ্ছন্নতাকর্মী’ হিসেবে নিয়োজিত আছেন। অন্যদিকে, ‘পরিচ্ছন্ন কর্মী’ শব্দগুচ্ছ দিয়ে ব্যক্তির পরিচ্ছন্নতা, পারিপাট্য, সুরুচি, কমনীয়তা, চারুতা প্রভৃতি আচরণকে নির্দেশিত করে। যেমন মৃদুল পোদ্দারের বাবা ‘পরিচ্ছন্ন কর্মী’ হিসেবে শ্রেষ্ঠ পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পুরস্কার পেয়েছেন।
যে কোনো কর্মী পরিচ্ছন্ন কর্মী হতে পারেন কিন্তু পরিচ্ছন্নতাকর্মী বলতে কেবল তাদেরই বোঝায় যেসব কর্মী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার কাজে নিয়োজিত।
প্রয়োগ: প্যারিস পুরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীবৃন্দ পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। পরিচ্ছন্ন কর্মী না হলে একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী তার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছে বলা যায় না। পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে সবার আগে পরিচ্ছন্ন কর্মী হতে হবে।
টা, টি, গুলো
এই ধরণের কথা কি শব্দের সাথে যুক্ত হবে? না কি আলাদা হবে?
অনেকে লিখে জিনিসটা আবার অনেকে লিখে জিনিস টা৷
উত্তর: লেগে হবে। যেমন: জিনিসটা।
বর্তমান অনুজ্ঞা ও ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞায় মধ্যম পুরুষে ক্রিয়াপদের ব্যবহারে কিছু সাধারণ ভুল
বর্তমান অনুজ্ঞা ও ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞায় মধ্যম পুরুষে ক্রিয়াপদের ব্যবহারে কিছু সাধারণ ভুল পরিলক্ষিত হয়।
বর্তমান অনুজ্ঞায় মধ্যম পুরুষে ক্রিয়াপদের উদাহরণ: তুমি এখন যাও। আমাকে চিঠিটি দাও। তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।
একবারের বেশি বললে তবেই খেয়ো।ভুল প্রয়োগ: একবারের বেশি বললে তবেই খেও।
পুরোহিত শব্দের অর্থ কি?
পুরস্+হিত।
পুরস্ অর্থ সম্মুখে।হিত অর্থ মঙ্গল।
অর্থাৎ সম্মুখে অবস্থান করে যিনি মঙ্গলকর্ম সম্পাদন করেন তিনিই পুরোহিত।এটি সংস্কৃত শব্দ।
পুরোহিত হবার জন্য প্রয়োজন সঠিক সংস্কার, বেদজ্ঞান,বিধান শাস্ত্রের জ্ঞান, পৌরহিত্যের জ্ঞান ও দক্ষতা।
পুরোহিত হচ্ছে সেই ব্যক্তি যাকে ধর্মকার্য সম্পাদনের জন্য যজমান সঠিক বরণ, স্বাগতম ও দক্ষিণার দ্বারা নিযুক্ত করেন।পুরোহিত সকলের অগ্রে উপস্থিত থেকে পূজার সংকল্পবদ্ধ সকল ব্যক্তির অভিলাষকৃত পূজা সম্পন্ন করেন।কোনো ব্যক্তি পূজার আয়োজন করলে তিনি নিজেও পুরোহিত হতে পারেন তবে তার জন্য সঠিক জ্ঞান আবশ্যক।বৈদিক শব্দানুসারে এঁনাদের যাজকও বলা হয়।
শব্দটিকে বর্তমানে নানা ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হচ্ছে।যেমন আমি একটি কাজ করার জন্য এক বা একাধিক ব্যক্তিকে নিযুক্ত করতে পারি।তাদের দ্বায়িত্ব আমার সম্ভাষণের মর্যাদা দিয়ে আমার কাজ সম্পাদন করা এক্ষেত্রে এনাদেরও পুরোহিত বলা যাবে।তবে ধর্মীয় ব্যাপার অনেকেই যত্র তত্র এরূপ ব্যবহার ভালো চোখে দেখেন না।
যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা
নারি হল short form/কাব্যিক form of না পারি। যাকে দেখতে না পারি (অর্থাৎ পারি না) তার চলন সর্বদাই বাঁকা দেখি, সবেতে তার খুঁত দেখতে পাই। নারীজাতির সঙ্গে সম্পর্ক নেই। Similarly, নারে = না পারে
জুতো মেরে গোরু দান: প্রথমে অপমান করার পর সম্মান প্রদর্শন।
গোরু মেরে জুতো দান: অতি মূল্যবান কিছুর বিনিময়ে তুচ্ছ কিছু প্রদান। অন্যভাবে বলা যায়, সম্মানজনক কিছু প্রাপ্তির পরও অসম্মান প্রদর্শন।
বৈয়াকরণ ও বৈয়াকরণিক
ব্যাকরণ শব্দের সঙ্গে অ-প্রত্যয় যুক্ত হয়ে গঠিত হয়েছে বৈয়াকরণ (ব্যাকরণ+অ)। প্রত্যয় যুক্ত হলে কখনো কখনো শব্দের আদিস্বরের বৃদ্ধি ঘটে।
তৎসম বৈয়াকরণ শব্দের অর্থ— (বিশেষণে) ব্যাকরণবিদ, ব্যাকরণ, ব্যাকরণসর্ম্পকীয় এবং (বিশেষ্যে) ব্যাকরণেপণ্ডিত। শুবাচের প্রধান উপদেষ্টা হায়াৎ মামুদ একজন বৈয়াকরণ)।
ব্যাকরণ শব্দের সঙ্গে একবার প্রত্যয় যুক্ত হয়ে বৈয়াকরণ শব্দ গঠিত হয়েছে। সুতরাং, এর সঙ্গে পুনরায় ইক-প্রত্যয় যুক্ত করা বাহুল্য এবং দূষণীয়। এটি এক গলায় একসঙ্গে দুটো টাই পরার মতো হাস্যকর।
বৈয়াকরণ শব্দের সমার্থক হিসেবে ব্যাকরণবিদ লিখুন। বৈয়াকরণিক লিখেবেন না।
শুবাচের প্রধান উপদেষ্টা হায়াৎ মামুদ একজন বৈয়াকরণ।
শুবাচের প্রধান উপদেষ্টা হায়াৎ মামুদ একজন ব্যাকরণবিদ।
অন্তর্হতি ব্যাকরণিক পরিভাষা। কোনো কারণ ছাড়া কোনো শব্দের বানানের ধ্বনি লুপ্তিকে অন্তর্হতি বলে। যেমন: ফাল্গুন থেকে ফাগুন।
এখানে মূল শব্দ— ফাল্গুন। ধ্বনি পরিবর্তন হয়ে তা ফাগুন হয়েছে। ধ্বনি পরিবর্তনের ফলে শব্দের উচ্চারণের পরিবর্তন হলেও অর্থের বা পদের কোনো পরিবর্তন হয় না। ফাল্গুন আর ফাগুন সমার্থক।
তাহলে কেন অন্তর্হতি?
আঞ্চলিক উচ্চারণ অন্তর্হতির প্রধান কারণ। অধিকন্তু, কবিতায় ছন্দের কারণে কোমল রূপের আবশ্যকতা অন্তর্হতির আর একটি অন্যতম কারণ। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন—
১. ওমা ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে – – –
২. ফাগুন হাওয়া হাওয়ায় করেছি যে দান —–
অন্তিমকাল বনাম অন্তিমদশা
অন্তিম: সংস্কৃত অন্তিম (অন্ত+ইম) অর্থ— (বিশেষণে) শেষ (অন্তিম যাত্রা); মৃত্যুকালীন (অন্তিম ইচ্ছা)। শব্দটির অর্থ— শেষ বা চূড়ান্ত প্রভৃতি হলেও বিশেষত মত্যুকালীন বা মুমূর্ষু প্রভৃতি সম্পর্কিত বিষয় প্রকাশে শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
অন্তিমকাল: সংস্কৃত অন্তিমকাল (অন্তিম+কাল) অর্থ— (বিশেষ্য) মৃত্যুকাল, শেষ সময়। অন্তিমকাল শব্দটি সময় বা কাল নির্দেশক। কোনো অবস্থার বা ঘটনার বা ঘটার শেষ সময় বা শেষ কাল নির্দেশ করার জন্য শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
অন্তিমদশা: সংস্কৃত অন্তিমদশা (অন্তিম+দশা) অর্থ— (বিশেষ্যে) মুমূর্ষু অবস্থা। এটি অবস্থা বা ঘটনা বা প্রতিক্রিয়া নির্দেশ করে।
অন্তিম অবস্থা: অন্তিম অবস্থা বাগ্ভঙ্গির অর্থ— (বিশেষ্যে) মুমূর্ষু অবস্থা, শেষ দশা, অন্তিম দশা। অর্থাৎ, অন্তিমদশা ও অন্তিম অবস্থা সমার্থক। কিন্তু অন্তিম শব্দটি অবস্থা থেকে ফাঁকে রেখে বসে।
মনে রাখুন: সম-মেরুতে বিকর্ষণ। তাই অ-বর্ণ সহ্য করতে পারে না অ-বর্ণকে। এজন্য অন্তিম ও অবস্থা ফাঁক রেখে লিখতে হয়।
অন্তিমকাল সময় সম্পর্কিত, কিন্তু অন্তিমদশা বা অন্তিম অবস্থা ঘটনা সম্পর্কিত।
অন্তিমকালে অন্তিমদশা— প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম।
অজ
শুবাচ-অভিধান (১৮):
‘অজ’ শব্দের অর্থ ছাগল। এটি প্রয়োজনীয় পশু, নিরীহও। কিছু কিছু ছাগল আকস্মিক দেখা প্রকৃতির মতো আকর্ষণীয়, মহা দাপটে ঘুড়ে বেড়ায় আলেকজান্ডারের মতো। ডাকটাও তার খারাপ না — ম্যা ম্যা, মা মা শব্দের অপভ্রংশ। খাওয়ার অভ্যাসটাও মানুষের মতো বাছবিচারহীন- যা পায় তা-ই খায়। তবু বাংলায় অজকে কেবল খারাপ অর্থে ব্যবহার করা হয়। যেমন :
অজাগলস্তন : ছাগলের গলদেশে যে চামড়া ঝোলে। শব্দকারদের মতে, এটি আকারে স্তনের মতো হলেও কোনো কাজে লাগে না। তাই বাজে জিনিস বা নিরর্থক কিছু প্রকাশের জন্য লেখা হয় অজাগলস্তন। অথচ এটি ছাগলের একটি চমৎকার অলংকার। মেয়েদের যেমন কণ্ঠহার। কী মধুর মমতায় দোলে। মনে হয় যেন নায়াগ্রার জল অর্ধেক নেমে নুয়ে নুয়ে দুলছে। এমন সুন্দর বস্তুটার নাম অজালংকার দিলে কী ক্ষতি হতো?
বাংলায় জান্তা বানানের দুটি শব্দ পাওয়া যায়। একটি -জান্তা এবং অন্যটি জান্তা। বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত বাংলা -জান্তা অর্থ— জানে এমন, অবগত (সবজান্তা); অভিজ্ঞ (ভবিষ্যজান্তা)। -জান্তা শব্দটির স্বাধীন ব্যবহার বিরল। এটি অন্য শব্দের পরে সেঁটে বসে নতুন অর্থ দ্যোতিত করে। যেমন: সবজান্তা শমসের, ভবিষ্যজান্তা রাসপুতিন, বেদজান্তা ত্রিবেদী। অন্যদিকে, জান্তা অর্থ— গ্যাং (নেতিবাচক অর্থে), হরণকারী দল, স্বেচ্ছাচারী গ্রুপ, পশুবৎ, হত্যাকারী, অত্যাচারী। যেমন: সামরিক জান্তা, প্রাশাসনিক জান্তা। এই জান্তা সংশ্লিষ্ট বাক্য হতে ফাঁক রেখে বসে। এই জান্তার সঙ্গে আগের জান্তা (-জান্তা) গুলিয়ে ফেলা যাবে না। অনেকে মনে করেন, স্প্যানিশ শব্দ জুন্টা হতে বাংলা জান্তা শব্দের উদ্ভব। স্প্যানিশ ভাষায় জুন্টা অর্থ— দল, গ্যাং। সামরিক বাহিনী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার পর ওই বাহিনীর যে দল, গ্রুপ, কমিটি বা গ্যাং জনস্বার্থ উপেক্ষা করে এককভাবে নিজেদের ইচ্ছেমতো স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে তাদের সামরিক জান্তা বলা হয়। বাংলায় এসে স্প্যানিশ জুন্টা, জান্তা রূপ ধারণ করে। তবে শব্দটি তার উৎস অর্থ হারায়নি, বরং আরো ব্যাপকতা পেয়েছে। অনেকের মতো সংস্কৃত জান্তব (জন্তু+অ) হতে জান্তা শব্দটির উদ্ভব। তাদের মতে, এটি তদ্ভব শব্দ। যেটিই হোক, জান্তা বাংলা ভাষার জন্য একটি নতুন শব্দ। যুদ্ধকালীন সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জান্তব কর্মকাণ্ড থেকে ঘৃণা প্রকাশার্থে জান্তা শব্দটির প্রসার ঘটে।
যুদ্ধোত্তর বাংলা শব্দ:যুদ্ধোত্তর বাংলা শব্দ: যুদ্ধোত্তর বাংলা শব্দ: ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হতে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত সংঘটিত যুদ্ধসমূহের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কারণে নানাভাবে নানা কারণে উদ্ভূত শব্দকে যুদ্ধোত্তর শব্দ বলা হয়। যুদ্ধকালীন বা যুদ্ধের পর সংবাদপত্র-সহ নানা প্রচার মাধ্যম; কবিসাহিত্যিকদের রচনা; গবেষকদের গবেষণা এবং আরো নানা ক্ষেত্রে এসব নতুন যুদ্ধোত্তর শব্দ সৃষ্টি হয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। যুদ্ধ ও যুদ্ধোত্তরকালে সৃষ্ট বা উদ্ভূত নতুন পরিবেশ-প্রতিবেশ, পরিস্থিতি, নতুন ভাব-ভাবনা, গবেষণা, অভিজ্ঞতা, পেশা, প্রাত্যহিক চাহিদার বহুমুখীনতা, আবিষ্কার প্রভৃতিকে ভাষায় অর্থপূর্ণভাবে প্রকাশের জন্য যুদ্ধোত্তর শব্দ প্রয়োজন হয়।
শনাক্ত না কি সনাক্ত: শুবাচ সাম্প্রতিক বানান
শনাক্ত ইদানীং বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ। যুদ্ধকালীন সহিংস নেতার মতো করোনাভাইরাস প্রায় অপরিচিত শনাক্ত শব্দটির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে তুলে দিয়েছে।
অনেকে প্রশ্ন করেন শনাক্ত না কিসনাক্ত। শব্দটির প্রমিত বানান শনাক্ত। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে (২০১৭ খ্রি.), বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত ফারসি শনাক্ত শব্দের অর্থ পরিচিতি নিশ্চিতকরণ।
নিমোনিকসূত্র: বানান কীভাবে মনে রাখবেন? বিদেশি শব্দে মূর্ধন্য-ষ হয় না। তাই শনাক্ত বানানে মূর্ধন্য-ষ হবে না। বাকি থাকে স আর শ। তাহলে দন্ত্য-স নয় কেন? বর্ণমালায় সবার আগে তালব্য-শ। রোগী চিকিৎসার জন্য গেলে আগে শনাক্ত করা হয়। তারপর শুরু হয় সেবা। এজন্য শনাক্ত বানানে তালব্য-শ।
অতএব, লিখুন ‘শনাক্ত’; লিখবেন না ‘সনাক্ত’।
——————————————————————-
সূত্র: নিমোনিক বাংলা বানান অভিধান (প্রকাশনীয়), ড. মোহাম্মদ আমীন
হাতে গোনা বলতে কয়টি
হাতে গোনা বলতে ঠিক কয়টি বা কত সংখ্যক বোঝায় তার কোনো নির্দিষ্টতা নেই। প্রকৃতপক্ষে এটি একটি আনুমানিক ছোটো সংখ্যা। তবে গাণিতিক ও বৈয়াকরণদের মতে— সংখ্যাটি খুব কমও নয় আবার বেশিও নয়। সাধারণভাবে বলা যায়— যা হাতের মাধ্যমে সহজে গণনা করে বলে দেওয়া যায় সেটিই হাতে গোনা। ব্যক্তিবিশেষের বুদ্ধিমত্তা অনুযায়ী এটি কমবেশি হতে পারে। কারো কারো মতে— যা কোনোরূপ খাতপত্র, জটিল হিসাব, কষাকষি কিংবা গণনাযন্ত্র ছাড়া হাতে হাতে সহজে নির্ণয় বা অনুমান করা যায় তাকে বলা হয় হাতে গোনা। গাণিতিকদের মতে, এটি দশটির কম নয় এবং সাধারণ বুদ্ধিমত্তা বিবেচনায় চল্লিশের ১০ গুণ বা ৪০০-এর বেশি ধরা হয় না। কারণে দুই হাতে আঙুল হচ্ছে ১০টি । প্রতি আঙুলের সাংখ্যিক বিভাজন ধরা হয় চারটি। সে হিসেবে ১০টি আঙুলে মোট বিভাজন ৪০টি। ৪০ সংখ্যাকে আবার দশটি আঙুলের কারণে ১০ দিয়ে গুণ করলে হয় ৪০০। গবেষণায় দেখা গেছে হাতের আঙ্গুল দ্বারা ৪০০ পর্যন্ত নানা হিসেব সহজ উপায়ে গণনা, বিশ্লেষণ এবং পরিবিশ্লেষণ করা যায়।
তপসিল ও তপসিলি: তপসিল আরবি উৎসের শব্দ। বাক্যে বিশেষ্যে হিসেবে ব্যবহৃত তপসিল অর্থ— জমির চৌহদ্দির বিবরণ; বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রণীত তালিকা যেমন: সংবিধানের তপসিল, নির্বাচনের তপসিল, বিশেষ গ্রন্থের তপসিল। ইংরেজিতে schedule তপসিল শব্দের একটি প্রতিশব্দ। তবে সব তপসিল সিডিউল নয়। যেমন জমির চৌহদ্দির বিবরণ শিডিউল নয়। তপসিল থেকে তপসিলি। এটি বিশেষণ। এর অর্থ— তপশিলভুক্ত; তালিকাভুক্ত। যেমন: তপশিলি সম্প্রদায়, তপসিলি ব্যাংক, তপসিলি সংস্থা, তপসিলি বিষয়।
সংবিধানর তপসিল:সংবিধানের তপসিল কথায় বর্ণিত তপসিল অর্থ— বিশেষ্য উদ্দেশ্যে প্রণীত তালিকা বা schedule। বিশেষ্য উদ্দেশ্যে যেসব ঐতিহাসিক ঘোষণা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংবিধানে আবশ্যকীয় বিবরণ হিসেবে যুক্ত বা তালিকাভুক্ত করা হয়েছে সেসব বিষয়কে সংবিধানের তপসিল বা schedule বলা হয়।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের তপসিল
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৭টি তপিসিল রয়েছে। যেমন:
প্রথম তপসিল: [৪৭ অনুচ্ছেদ]— অন্যান্য বিধান সত্ত্বেও কার্যকর আইন। পূর্ববঙ্গ, পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলের কিছু কিছু আইনের কার্যকারিতা-বিষয়ক।
দ্বিতীয় তপসিল: [রাষ্ট্রপতি নির্বাচন−সংবিধান (চতুর্থ সংশোধন) আইন]— ১৯৭৫ (১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ২নং আইন)-এর ৩০ ধারাবলে দ্বিতীয় তপসিল বিলুপ্ত।] কারণ, এখন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয় না।
তৃতীয় তপসিল [শপথ ও ঘোষণা,সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদ]—রাষ্ট্রপতিকে শপথ পাঠ করাতেন প্রধান বিচারপতি। পঞ্চদশ সংশোধন পাস হওয়ার পর থেকে রাষ্ট্রপতিকে শপথ পাঠ করান স্পিকার। রাষ্ট্রপতি যাদের শপথ পাঠ করার তাঁরা হলেন— প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবর্গ, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও প্রধান বিচারপতি। স্পিকার শপথ পাঠ করান— রাষ্ট্রপতি ও সংসদ সদস্যদের। প্রধান বিচারপতি শপথ পাঠ করান— সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের, সকল নির্বাচন কমিশনার, মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং সরকারি কর্ম কমিশনের সদস্য।
চতুর্থ তপসিল: [১৫০(১) অনুচ্ছেদ; ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলি]— এ তপসিলের উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো: সংবিধান প্রণয়নের পূর্বে যাঁরা বিভিন্ন পদে (রাষ্ট্রপতি, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী, বিচারপতি, নির্বাচন কমিশনার) অধিষ্ঠিত ছিলেন—সংবিধান রচিত হওয়ার পর অনুরূপ পদ নতুন সংবিধানমতে পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান পদে অধিষ্ঠিত থাকা-বিষয়ক।
ভালোবাসি
বাংলায় -আমি তোমায় ভালোবাসি।এই বাক্যকে পৃথিবীর ৭০ ভাষায় কি কি বলে জেনে নেই।
আপনি ভালোবাসি বলতে পারেন আপনার মাতৃভাষায়। তাই বলে অন্যান্য ভাষায় ভালোবাসি কিভাবে বলতে হয় সেটা জানতে দোষ নেই, আবার অন্যকে জানাতেও দোষ নেই।
অকালকুষ্মাণ্ড
———
‘অকালকুষ্মাণ্ড’ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলো–
‘অকালজাত কুষ্মাণ্ড বা অকালজাত কুমড়া’। বিশেষ্য মনে হলেও, শব্দটি বিশেষ ধরনের বিশেষণ। বাংলায় এমন বিশেষণের সংখ্যা কম নয়। এবার শব্দটির ব্যুৎপত্তি জেনে নেওয়া যাক। পাণ্ডুর পত্নী কুন্তী ও ধর্মের মিলনে যুধিষ্ঠির, বায়ুর সঙ্গে মিলনে ভীম, ইন্দ্রের সঙ্গে মিলনে অর্জুন এবং পাণ্ডুর দ্বিতীয়া স্ত্রী মাদ্রীর গর্ভে নকুল ও সহদেব জন্ম নিলে পাণ্ডুর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ধৃতরাষ্ট্রের পত্নী গর্ভবতী গান্ধারী প্রচণ্ড ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন। গর্ভধারণের দুই বছর পার হলেও গান্ধারীর কোনো সন্তান ভূমিষ্ঠ হচ্ছিল না। এ অবস্থায় তিনি রাগে ও ক্ষোভে নিজেই নিজের গর্ভপাত ঘটিয়ে ফেলেন। গর্ভপাতের ফলে কুমড়া বা কুষ্মাণ্ড আকৃতির একটি মাংসপিণ্ড অকালে নির্গত হয়। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, গান্ধারী অকালে একটা কুষ্মাণ্ড প্রসব করেছেন। এ অকালকুষ্মাণ্ড থেকে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের জন্য দায়ী দুর্যোধন, দুঃশাসন প্রমুখসহ কুলবিনাশী শতপুত্রের জন্ম হয়। বস্তুত মহাভারতের এই কাহিনির অনুষঙ্গে বাংলা শব্দসম্ভারে অকালকুষ্মাণ্ড শব্দের প্রবেশ। যার অর্থ– কাণ্ডজ্ঞানহীন, অপদার্থ, অদক্ষ, অনিষ্টকারী বা মূর্খ। মহাভারতের অকালকুষ্মাণ্ডের ন্যায় বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত অকালকুষ্মাণ্ডের প্রতিক্রিয়া ও কর্মকাণ্ড তেমন মারাত্মক না-হলেও কাণ্ডজ্ঞানহীনতার জন্য কোনো আধুনিক অকালকুষ্মাণ্ড যে-কোনো সময় নিজের বা অন্যের বিপর্যয় ঘটিয়ে দিতে পারে।
উৎস: বাংলা শব্দের পৌরাণিক উৎস,
লেখক: ড. মোহাম্মদ আমীন।
আহবান না কি আহ্বান
আহ্বান শব্দের ব্যুৎপত্তি= আ+√হ্বে+অন।
উচ্চারণ— আও্ভ.ান।
আহ্বান অর্থ— (বিশেষ্যে) নিমন্ত্রণ, আমন্ত্রণ; সম্বোধন, ডাক। সংস্কৃত আহ্বান শব্দটি হ্বে-ধাতুযোগে গঠিত। আহ্বান= আ+হ্+ব্+া+ন । সুতরাং, শুদ্ধ বানানে হ্ব (হ্+ব) অপরিহার্য।
অতএব, আহবান (আ+হ+ব+.া+ ন) ভুল।
লিখুন: আহ্বান। অনুরূপ: আহ্বায়ক।
রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন—
“ধ্বনিল আহ্বান মধুর গম্ভীর প্রভাত-অম্বর-মাঝে,
দিকে দিগন্তরে ভুবনমন্দিরে শান্তিসংগীত বাজে ॥”
ভূপেন হাজারিকা গেয়েছেন— “নতুন দিনের আহ্বানে হাজার চোখের আগুনে
বজ্র মাদল গর্জনে পিশাচ তাড়ালে
ও পিশাচ তাড়ালে।”
অন্যান্য বিষয় বিস্তারিত দেখুন নিচের সংযোগে
ঝোপ, ঝাড় ও ঝোপঝাড়
ঝোপ ও ঝাড় মিলে ঝোপঝাড় । সংস্কৃত ক্ষুপ থেকে উদ্ভূত ঝোপ অর্থ — (বিশেষ্যে) মাঝারি উচ্চতার বিভিন্ন উদ্ভিদের ঝাড় বা জঙ্গল। ঝোপঝাড় শব্দের সঙ্গে যুক্ত ঝাড় দেশি শব্দ। এর অর্থ— (বিশেষ্যে) ছোটো গাছের জঙ্গল, ঝোপ। এছাড়া দেশি ঝাড়-এর আরও কিছু অর্থ আছে। যেমন— স্তবক, গুচ্ছ; গোষ্ঠী, বংশ; শাখাপ্রশাখা দীপাধার। অভিধানে পৃথক ভুক্তিতে আর একটি ঝাড় রয়েছে। সেটি হিন্দি ঝাড়। এর অর্থ— পরিমার্জন, পরিষ্করণ; ভর্ৎসনা, প্রহার, অপহরণ। আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, ঝোপঝাড় অর্থ— (বিশেষ্যে) গুল্ম ও লতাপাতায় আচ্ছাদিত স্থান।
ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে আাছে কয়েকটি শিয়াল।
গ্রামেও এখন ঝোপঝাড় তেমন দেখা যায় না।
কেন্দ্র সোনার বাপের বাড়ি
শিক্ষাকেন্দ্র, ব্যবসায়কেন্দ্র, রাষ্ট্রকেন্দ্র, চিকিৎসাকেন্দ্র, টেলিভিশনকেন্দ্র প্রভৃতি নিয়ে যতই বাড়াবাড়ি করি না কেন, কেন্দ্র এসেছে গ্রিক থেকে। তার আসল বাড়ি গ্রিক। সে বাংলার অতিথি।
গ্রিক kentron থেকে উদ্ভূত কেন্দ্র শব্দটিকে অনেকে তৎসম মনে করেন।সাক্ষাৎকার বোর্ডে অধিকাংশ প্রতিযোগী এই প্রশ্নটির ঠিক উত্তর দিতে পারে না।ইউনিভার্সিটির ক্ষেত্রেও এমন ঘটে। অধিকাংশ প্রতিযোগী মনে করে, ইউনিভার্সিটি (university) ইংরেজি শব্দ। তা ঠিক নয়, এটি লাতিন। ক্লাস (class) শব্দটিও লাতিন।
পরা আর পরা শুধু পরা পরা
পরা অর্থ কী?
: বাক্যসহ না-দিলে অর্থ বলা কষ্টকর। বুঝলে খুকি? একটা শব্দের একাধিক অর্থ থাকতে পারে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটাই স্বাভাবিক।
সাধারণ অর্থটা বলুন?
: সাধারণত পরা শব্দের যে অর্থটি বেশি ব্যবহৃত হয় সেটি হচ্ছে গিয়ে— পরিধান করা। যেমন: জামা পরা।
আর আছে?
পরা শব্দের আরেকটি অর্থ— অঙ্গে ধারণ করা। যেমন: তিলক পরা। অলংকার পরা। চশমা পরা। সিঁদুর পরা।
আর আছে?
: আছে। পরা শব্দের আর একটি অর্থ— জোর করে ধারণ করিয়ে দেওয়া।
এই শিকল পরা ছল
মোদের এই শিকল পরা ছল
এই শিকল পরেই
শিকল তোদের করব রে বিকল।।
আর নেই মনে হয়?
: নেই মানে? খুকি বলে কী?পরা শব্দের আর একটি অর্থ— পরমা, শ্রেষ্ঠা। যেমন: পরাবিদ্যা। আর একটি অর্থ নিরতা, অবিরতা। যেমন: নৃত্যপরা।
আরো আছে?
: থাকবে না মানে? পরা একটি উপসর্গবিশেষ। যেমন: পরাক্রম। পরাকাষ্ঠা, পরাভূত আর শুনবে?
না। আমি এখন যাই।
: কোথায়?
নৃত্যপরা পরধী আপুর কী পরা উচিত বলে আসি।
: পড়বে না?
কয়েকটি পরা ছাড়া তো বাকি সব পড়া। আমার পড়তে ভালো লাগে না। পরতে ভালো লাগে।
To provide the best experiences, we use technologies like cookies to store and/or access device information. Consenting to these technologies will allow us to process data such as browsing behavior or unique IDs on this site. Not consenting or withdrawing consent, may adversely affect certain features and functions.
Functional
Always active
The technical storage or access is strictly necessary for the legitimate purpose of enabling the use of a specific service explicitly requested by the subscriber or user, or for the sole purpose of carrying out the transmission of a communication over an electronic communications network.
Preferences
The technical storage or access is necessary for the legitimate purpose of storing preferences that are not requested by the subscriber or user.
Statistics
The technical storage or access that is used exclusively for statistical purposes.The technical storage or access that is used exclusively for anonymous statistical purposes. Without a subpoena, voluntary compliance on the part of your Internet Service Provider, or additional records from a third party, information stored or retrieved for this purpose alone cannot usually be used to identify you.
Marketing
The technical storage or access is required to create user profiles to send advertising, or to track the user on a website or across several websites for similar marketing purposes.