ড. মোহাম্মদ আমীন
প্রত্যয় যুক্ত হলে ধাতু বা শব্দের মধ্যে স্বরগত পরিবর্তন ঘটতে পারে (সর্বদা নয়)। এই পরিবর্তন তিন প্রকার হতে পারে। যথা: গুণ, বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ। নিচে কিছু উদাহরণ-সহ দেওয়া হলো:
(১) গুণ:
(ক) ই/ঈ> এ। যথা: শী>শে+অন= শয়ন, নী>নে+অন= নয়ন, চি> চে+অন= চয়ন, প্রিয়+ইমন= প্রেম।
(খ) উ/ঊ> ও। যথা: পূ>পো+অন= পবন, ভূ>ভো+অন= ভবন।
(গ) ঋ>অর্। যেমন: কৃ+অন্= করণ, তৃ+অন= তরণ, মৃ+অন= মরণ, হৃ+অন= হরণ।
স্বরের এই ত্রিবিধ পরিবর্তনকে বলে গুণ।
(২) বৃদ্ধি:
(ক) অ>আ। যেমন: করণ+অ= কারণ, অলস+য= আলস্য; মধুর+য= মাধুর্য, বর্ষ+ইক= বার্ষিক, অর্থ+ইক= আর্থিক, ধর্ম+ইক= ধার্মিক, মানুষ+ইক= মানুষিক, মনস+ইক= মানসিক, ব্যবহার+ইক= ব্যাবহারিক।
(খ) ই/ঈ>ঐ। যেমন: এক+ইক= ঐকিক, এক+য= ঐক্য, একমত+য=ঐকমত্য, নিশা+অ= নৈশ, দিন+ইক= দৈনিক; একান্ত+ইক= ঐকান্তিক, ইচ্ছা+ইক= ঐচ্ছিক, ধীর+য= ধৈর্য। ধীর+ইক= ধৈরিক, বিচার+ইক= বৈচারিক, নিমিত্ত+ইক= নৈমিত্তিক, বিচিত্র+য= বৈচিত্র্য।
(গ) উ/ঊ >ঔ। যেমন: উচিত+য= ঔচিত্য, উজ্জ্বল+য= ঔজ্জ্বল্য, উদক+অ= ঔদক, উপনিবেশ+ইক= ঔপনিবেশিক, উপন্যাস+ইক= ঔপন্যাসিক; ওষধি+অ= ঔষধ, ভূগোল+ইক= ভৌগোলিক।
(ঙ) ঋ> আর্। হয়ে যায়।স্মৃ+অক= স্মারক।
ওপরের এই চতুর্বিধ পরিবর্তনকে বৃদ্ধি বলা হয়।
(৩) সম্প্রসারণ:
(ক) ব > উ। যেমন: বচ্+ত= উক্ত, বচ্+ত= উক্তি।
(গ) য> ই হয়। যজ্+ত= ইষ্ট, যজ্+তি= ইষ্টি।
(ঘ) র> ঋ । গ্রহ+অ= গৃহ, গ্রহ+ত= গৃহীত, গ্রহ+য= গৃহ্য।
এই ত্রিবিধ পরিবর্তনকে বলা হয় সম্প্রসারণ।
মান (শানচ): ঘটমান অর্থে এটি ব্যবহৃত হয়। যেমন: বর্ধমান, বিদ্যমান, চলমান, প্রবহমান, দেদীপ্যমান, বহমান, দৃশ্যমান।
বিশেষ্য পদের সঙ্গে ‘বান/মান’ যুক্ত করে বিশেষণ তৈরি করা হয়। তবে কোথায় ‘বান’ বসবে কিংবা কোথায় ‘মান’ বসবে এটি অনেক সময় গোলমাল হয়ে যায়। সুতরাং সূত্র একটা লাগেই। সহজ নিয়ম হলো— বিশেষ্য পদের শেষে ‘অ/আ’ থাকলে ‘বান’ বসবে কিন্তু ‘ই/ঈ, বা উ/ঊ’ থাকলে মান বসবে। যেমন: অ/আ: অর্থ> অর্থবান, ক্ষমতা> ক্ষমতাবান, চরিত্র> চরিত্রবান, দয়া> দয়াবান, প্রজ্ঞা> প্রজ্ঞাবান, পুণ্য>পুণ্যবান ই/ঈ, উ/ঊ: কৃষ্টি> কৃষ্টিমান, আয়ু> আয়ুষ্মান,দ্যুতি> দ্যুতিমান, ঋদ্ধি> ঋদ্ধিমান, অংশু> অংশুমান। কিন্তু, অগ্নি> অগ্নিবাণ। কারণ, এই ‘-বান’ দন্ত্য-ন’ যুক্ত ‘-বান’ বা প্রত্যয় নয়, ‘মূর্ধন্য-ণ’-যুক্ত ‘বাণ’, একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শব্দ। যার অর্থ তিরবিশেষ। তাই ‘অগ্নিবাণ’।
মান: শব্দের শেষে অ, আ বা ম থাকলে ‘বান’ আর ই, ঈ, উ অথবা ঊ থাকলে ‘মান’ হবে। যেমন : অ/আ = ক্ষমতাবান, দয়াবান, ধনবান, বলবান, বিবেকবান, ভাগ্যবান প্রভৃতি। ই/ঈ/উ/ঊ = অংশুমান, কীর্তিমান, শক্তিমান প্রভৃতি।
কারণ, ব্যাখ্যা, নিমোনিক ও বাকি অংশের জন্য এখানে ক্লিক করুন।
সূত্র: ব্যাবহারক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।
বিসিএস প্রিলি থেকে ভাইভা কৃতকার্য কৌশল
ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা বইয়ের তালিকা
বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক
বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন/১
বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন/২
বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন /৩
ইউরোপ মহাদেশ : ইতিহাস ও নামকরণ লিংক
কি না বনাম কিনা এবং না কি বনাম নাকি
মত বনাম মতো : কোথায় কোনটি এবং কেন লিখবেন
ভূ ভূমি ভূগোল ভূতল ভূলোক কিন্তু ত্রিভুবন : ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ
মত বনাম মতো : কোথায় কোনটি এবং কেন লিখবেন
প্রশাসনিক প্রাশাসনিক ও সমসাময়িক ও সামসময়িক
লক্ষ বনাম লক্ষ্য : বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন
ব্যাঘ্র শব্দের অর্থ এবং পাণিনির মৃত্যু
যুক্তবর্ণ সরলীকরণ আন্দোলন : হাস্যকর অবতারণা