এবি ছিদ্দিক
সাধারণত প্রকৃতি(ধাতু বা প্রাতিপদিক)-র সঙ্গে যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে কিংবা অর্থের পরিবর্তন ঘটায়, সেই বর্ণ বা বর্ণসমষ্টিকে প্রত্যয়
বলে। যেমন: ধীর+য(ষ্ণ্য) = ধৈর্য। এখানে প্রকৃতি ‘ধীর’-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়া ‘য’ হচ্ছে প্রত্যয়। একইভাবে, বীর+য(ষ্ণ্য) = বীর্য; ছত্র+অ(ষ্ণ) = ছাত্র; ব্যবহার+ইক = ব্যাবহারিক ইত্যাদি উদাহরণে ‘য'(ষ্ণ্য), ‘অ'(ষ্ণ), ‘ইক’ ইত্যাদি হচ্ছে প্রত্যয়। অপরদিকে, বাক্যস্থিত প্রতিটি পদের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য যেসকল বর্ণ বা বর্ণগুচ্ছ ব্যবহৃত হয়, তাদেরকে বিভক্তি বলে। যেমন: “ধৈর্যের সঙ্গে পড়।” বাক্যটিতে ‘সঙ্গে পড়’ শব্দ দুটির সঙ্গে ‘ধৈর্য’ শব্দটির সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ‘ধৈর্য’ শব্দটির সঙ্গে ‘এর’ যুক্ত করা হয়েছে(ধৈর্য+এর = ধৈর্যের) এবং এই ‘এর’ হচ্ছে বিভক্তি। একইভাবে, ‘টমকে আসতে বল।’ বাক্যটিতে ‘আসতে বল’ শব্দ দুটির সঙ্গে ‘টম’ শব্দটির সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ‘টম’ শব্দটির সঙ্গে যুক্ত হওয়া ‘কে’ হচ্ছে বিভক্তি।
উল্লেখ্য, ভাষাবিজ্ঞানের বিস্তৃত আলোচনায় উপসর্গ, মধ্যসর্গ, অনুসর্গ, বিভক্তি ইত্যাদি হচ্ছে প্রত্যয়ের ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণিভাগ। অর্থাৎ, ব্যাপক অর্থে প্রত্যেক বিভক্তিই প্রত্যয়, কিন্তু প্রত্যেক প্রত্যয় বিভক্তি নয়। প্রত্যয় তখনই বিভক্তি হবে, যখন তা বাক্যে ব্যবহৃত কোনো শব্দের শেষে যুক্ত হয়ে ঐ বাক্যের বিভিন্ন পদের সঙ্গে ঐ শব্দের সম্পর্ক স্থাপন করবে। উদাহরণ:
১. √দৃশ্+ত = দৃষ্ট; এখানে ‘√দৃশ্’ ধাতুর সঙ্গে ‘ত’ যুক্ত হয়ে কেবল একটি নতুন শব্দ সৃষ্টি করেছে এবং শব্দটির বাক্যে প্রয়োগ দেখানো হয়নি । তাই, এটি কেবল প্রত্যয়ের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যাবে।
২. √সৃজ্+তি = সৃষ্টি; এক্ষেত্রেও ১ নম্বর শব্দের ব্যাখ্যা প্রযোজ্য।
৩.আকাশ+এ = আকাশে; এক্ষেত্রে ‘আকাশ’ শব্দটির সঙ্গে ‘এ’ যুক্ত হয়ে অর্থের সামান্য পরিবর্তন এনেছে। কিন্তু ‘আকাশে’ শব্দটির বাক্যে প্রয়োগ দেখানো হয়নি বিধায় এখানে ‘এ’ কেবল প্রত্যয়, বিভক্তি নয়।
৪. ‘আকাশে(আকাশ+এ) চাঁদ উঠেছে।’ যেহেতু বাক্যটিতে ‘আকাশ’ শব্দটির সঙ্গে ‘এ’ যুক্ত হয়ে বাক্যের অন্যান্য পদের সঙ্গে শব্দটির সম্পর্ক স্থাপন করেছে, সেহেতু শব্দটির ক্ষেত্রে ‘এ’ প্রত্যয়ও, আবার বিভক্তিও।
৫. ‘ছাফিয়াকে(ছাফিয়া-কে) মেরো না।’ এক্ষেত্রেও ৪ নম্বর ব্যাখ্যা প্রযোজ্য।
এবি ছিদ্দিক, শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)
বাংলা বানান বিষয়ে আরও জানার জন্য :